দৈনিক ফেনীর সময়

বিশ্বে পালিয়ে যাওয়া শাসক শেখ হাসিনা থেকে ইদি আমিন

বিশ্বে পালিয়ে যাওয়া শাসক শেখ হাসিনা থেকে ইদি আমিন

বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনা ৫ আগষ্ট ১,৪২৩জন মেধাবী ছাত্রকে হত্যা করে ভারতে পালিয়ে গেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে এবং গতকাল গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে দিল্লীতে আশ্রয়ে ছিলো। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে ফেরত আসেন এবং ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হয়েছেন। জেনারেল এরশাদ এবং শেখ হাসিনাকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হয় নাই। শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে জাতিকে বিভক্ত করে রেখেছে এবং বাংলাদেশকে ভারতের তাবেদার রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। বাংলাদেশের তিন দিক শত্রুবেষ্টিত ভারত। ভারত নিজেদের স্বার্থে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশকে করদরাজ্যে রুপান্তরের জন্য ভারত বড়ভাইসুলভ আচরণ করেই যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডের সাথে ভারতের ’র’ জড়িত ছিলো। ’র’ এর দ্বিতীয় পরিকল্পনা মোতাবেক ৩০ মে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর, এরশাদের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পরে শেখ হাসিনা ভারতে ’র’ এর আশ্রয়ে ছিলেন এবং জেনারেল এরশাদ ছিলেন ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে সামরিক এটাসি। উভয়ের পরিকল্পনায় এবং ’র’ এর তত্তাবধানে এরশাদ ক্ষমতা দখল করে, শেখ হাসিনা রাজনীতির বি-টিম হিসেবে জেনারেল এরশাদকে ৯ বছর ক্ষমতায় থাকতে সহযোগিতা করে এবং ১৯৮৬ সালে বিএনপিকে বাদ দিয়ে বিরোধী দলের আসন দখল করে । তেমনি শেখ হাসিনাকে ১৯৯৬, ২০০৯, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে ক্ষমতায় থাকতে জেনারেল এরশাদ এবং জাতীয় পাটি রাজনীতির বি-টিম হিসেবে সহযোগিতা করে এবং জেনারেল এরশাদ বিরোধী দলের আসন দখল করে । ভারত কখনো বাংলাদেশের বন্ধু ছিলো না, ভারত বন্ধু ছিলো শেখ হাসিনা এবং জেনারেল এরশাদের। বিগত ৫ আগষ্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে ভারত অখুশী হয়ে যায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে লোকসভার অধিবেশন ডাকে, সীমান্তে হত্যাকান্ড বৃদ্ধি করে, ফারাক্কা, তিস্তা, ত্রিপুরার বাঁধ খুলে দিয়ে কৃত্রিম বন্যায় ১০টি জেলার ২ কোটি মানষের ব্যাপক ক্ষতি করেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাত সিং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি প্রদান করে।

ভারতে ’র’ এর আশ্রয়ে আছেন শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল। ’র’ এর সাথে যোগাযোগ আছে এমন অফিসারগণ ভারতে বাংলাদেশ দুতাবাসে চাকুরীরত আছেন, তাদেরকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় জেনারেল এরশাদের মতো কোন জেনারেল ক্ষমতা দখলের পায়তারা করতে পারে। ভারতের আত্বস্বীকৃত দালাল জি এম কাদের ২০২৩ সালের ২৩ আগষ্ট ভারত সফর করে এসে সাংবাদিকদের সামনে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল, ভারতের অনুমতি ছাড়া মোদির সাথে গোপন চুক্তির কিছুই বলবে না। জি. এম কাদের, রওশন এরশাদ, মশিউর রহমান রাঙ্গা. মজিবুল হক চুন্নু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার প্রমুখ পতিত স্বৈরশাসকের সহযোগী। এস আলম, সালমান এফ রহমান, নতুন টাকা ছাপিয়ে লুটপাট, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, শেখ হাসিনার আয়না ঘরের নিরব স্বাক্ষী ইনু মেনন দ্বিলীপ বড়ুয়া এবং ১৪ দল একইসুত্রে গাতা। এরা দেশ ও জাতির দুশমন এবং র এর এজেন্ট।

জাতীয় পাটি ’র’ এর পরিকল্লনা মোতাবেক বি-টিম হিসেবে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রেখেছিল। জাতীয় পাটির সকল নেতাদের গ্রেফতার করতে হবে। কাদের সিদ্দিকী ’র’ এর এজেন্ট। ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর উচিত ভারতের এদেশিয় এজেন্ট এবং ’র’ এর এজেন্টদের তালিকা তৈরী করে ফলোয়াপ করা। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দেশটির সামরিক বাহিনীর শীর্ষ স্থানীয় কমান্ডারদের বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে বলেছেন। ভারতকে শান্তিপ্রিয় দেশ উল্লেখ করে রাজনাথ সিং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিস্থিতির উল্লেখ করে সশস্ত্র বাহিনীকে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন। এটি তাঁর কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল না, বরং সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডারদের যৌথ সম্মেলনের নির্দেশনা।

রাজনাথ সিং এর এ বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কোন প্রতিবাদ হয়নি. মিছিল মিটিং হয় নাই। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রাজনাথ সিংয়ের এই বক্তব্যে তিনি যতটা না উদ্বিগ্ন, তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের সংগ্রামের ফসল যে রাজনৈতিক পরিবর্তন, সে বিষয়ে ভারতের সরকারি মহলের মূল্যায়ন যে ভুল এবং বিপজ্জনক। বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা পুরোটাই আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং গণতন্ত্রের, অভ্যন্তরীন রাজনীতির বিষয়, যাতে গণ-অভ্যুত্থানে একজন ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসকের পতন ঘটেছে। এতে কোনো তৃতীয় রাষ্ট্র বা পক্ষের দৃশ্যমান ভূমিকা ১৫ বছর ধরে পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে তাঁর অগণতান্ত্রিক ও নিপীড়নমূলক শাসনকে ভারত প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে এসেছে। ৫ আগষ্ট গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে ভারত তাঁকে আশ্রয় দিয়েছে। উপরন্তু ভারত এখনো খোলাসা করেনি যে এ আশ্রয় সাময়িক, নাকি স্থায়ী রাজনৈতিক আশ্রয়। নাংগালী জাতির দেখার বিষয় শেখ হাসিনা নতুন করে কি ষড়যন্ত্র করে।

ভরতে ’র’ এর আশ্রয়ে আছেন শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল। বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ’র’ এর সাথে যোগাযোগ আছে এমন অফিসারগণ বাংলাদেশের বিভিন্ন দুতাবাসে চাকুরীরত আছেন, তাদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় জেনারেল এরশাদের মতো উচ্চবিলাশী অথ্যাত জেনারেল বাংলাদেশের বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য ক্ষমতা দখলের পায়তারা করতে পারে। ভারতের আত্বস্বীকৃত দালাল জি এম কাদের, রওশন এরশাদ , মশিউর রহমান রাঙ্গা. মজিবুল হক চুন্নু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ পতিত স্বৈরশাসকের সহযোগী।

এস আলম, সালমান এফ রহমান, নতুন টাকা ছাপিয়ে লুটপাট, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, শেখ হাসিনার আয়না ঘরের নিরবস্বাক্ষী ইনু মেনন দ্বিলীপ বড়ুয়া এবং ১৪ দল একইসুত্রে গাঁতা। এরা দেশ ও জাতির দুশমন। জাতীয় পাটি ভারতে ’র’ এর পরিকল্পপনা মোতাবেক বি-টিম হিসেবে ১৫ বছর শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রেখেছিল। জাতীয় পাটি এবং ১৪ দলের সকল নেতা, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের দালাল চক্রদেরকে গ্রেফতার করতে হবে। ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর উচিত ভারতের এদেশিয় এজেন্ট এবং ’র’ এর এজেন্টদের তালিকা তৈরী করে ফলোয়াপ করা। আয়নাঘরের মাস্টারমাইন্ড ভারতীয় র গুমখুনের প্রেতাত্মা ডিজিএফআইয়ের অফিসারদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। র এর পরিকল্পনায় ২০০৯ সালে পিলখানায় ৫৭ জন সেনাবাহিনী অফিসার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। বিজিবি এর নাম বিডিআর করতে হবে। ভারতীয় আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য ২৫ লক্ষ নাগরিকদের আধা সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ভারতের আগ্রাসন মোকাবিলার উপযোগী ১০০,০০০ দেশপ্রেমিক পুলিশ এবং বিডিআর নিয়োগ দিতে হবে।

শ্রীলঙ্কার গোটাবায়া রাজাপাকশে : শ্রীলঙ্কায় রাজনীতি ও রাস্ট্রীয় ক্ষমতা বিগত দেড়যুগ রাজাপাকসে পরিবারের হাতে বন্দী ছিল । শ্রীলঙ্কা কখনো কখনো শ্রীমাভো বন্ধুরনায়েক পরিবারের হাতে বন্দী ছিল । শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা খাদ্যের লাগামহীন মুল্যবৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ হয়ে তিন মাস রাজাপাকসে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলে। রাজা পাকসের পরিবার থেকে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, ১১জন মন্ত্রী এবং ৫০ জন সাংসদ সদস্য চিলো। দেশের রাস্ট্রীয় ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা, ব্যবসা বানিজ্য পাকসে পরিবারের হাতে বন্দী ছিলো। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসা ২০২২ সালে গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। এর আগে আন্দোলনে শ্রীলঙ্কা জুড়ে কয়েক লাখ মানুষ সরকার ঘোষিত কারফিউ অমান্য করেছিল। টিয়ার গ্যাস, জল কামান উপেক্ষা করে তারা শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতির প্রাসাদের দিকে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। দেশ ছেড়ে পালিয়ে তিনি সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেন। এরপর তিনি থাইল্যান্ডে যান। প্রায় দুই মাস পরে মি. রাজাপাকশা আবার দেশে ফিরে আসেন।

আফগানিস্তানের আশরাফ ঘানি : ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহারের পর তালেবান যোদ্ধারা বেশ দ্রুত রাজধানী কাবুল দখল করার জন্য এগিয়ে আসতে থাকে। এসময় রাজধানী কাবুল থেকে পালিয়ে যান দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। প্রথমে তার গন্তব্য নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও পরবর্তীতে জানা যায়, মি. ঘানি সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় নিয়েছে। তখন তিনি বলেছিলেন, রক্তপাত ও বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য তিনি আফগানিস্তান ছেড়েছেন।

ইউক্রেনের ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ : ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ রাশিয়া-পন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যদিও তিনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার রাশিয়া-পন্থী নীতির প্রতিবাদে ২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে বিরোধীরা রাজধানী কিয়েভ দখল করে নেয়। তখন ইউক্রেনের পার্লামেন্ট মি. ইয়ানুকোভিচকে বরখাস্ত করে এবং তিনি রাশিয়ায় পালিয়ে যান। তখন থেকে তিনি রাশিয়াতে অবস্থান করছেন।

তিউনিসিয়ার বেন আলী : ২০১১ সালে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিাকার কয়েকটি দেশে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুরু হলে ক্ষমতাচ্যুত হন তিউনিসিয়ার বেন আলী। তেইশ বছর দেশ শাসন করার পর গণআন্দোলনের মুখে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বেন আলী যখন সৌদি আরবে ছিলেন, তখন তার সম্পর্কে খুব কম তথ্য জানা গিয়েছিল। শুধু ২০১৩ ইন্সটাগ্রামে বেন আলীর একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি বের হয়েছিল। জেদ্দার একটি হাসপাতালে ২০২৩ সালে তিনি মারা যান।

চার্লস টেলর : লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস টেলর দেশটিতে গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০০৩ সালে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। তিনি ছয় বছর লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মি. টেলরের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবাতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ছিল। সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধের সময় বিদ্রোহীরা গণহত্যা, ধর্ষণসহ যে নানা ধরণের অপরাধ করেছে, লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মিস্টার টেলর তাদের অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছিল। এছাড়া লাইবেরিয়ার ভেতরে বিরোধীদের উপর সহিংসতা এবং সেনাবাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন মি. টেলর।গৃহযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে ক্ষমতা ছেড়ে নাইজেরিয়ায় চলে যান তিনি। মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। চার্লস টেলরকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দ্য হেগের বিশেষ আদালত এই রায় ঘোষণা করে।

থাইল্যান্ডের থাকসিন শিনাওয়াত : থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াতকে ২০০৬ সালে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল দেশটির সেনাবাহিনী। থাকসিন পরিবার ও তাদের রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ক্ষমতাচ্যুত হবার সময় থাকসিন শিনাওয়াত বিদেশে অবস্থান করছিলেন। সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেবার পর মি. থাকসিন লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি ১৫ বছর নির্বাসনে ছিলেন। এরপর ২০২৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

পাকিস্তানের জেনারেল পারভেজ মুশারফ : পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মুশাররফ ক্ষমতা নিয়েছিলেন নওয়াজ শরীফকে পদচ্যুত করার মাধ্যমে। মি. মুশাররফ ২০০১ সালে থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তিনি দেশ ছেড়ে যান। এর পাঁচ বছর পরে ২০১৩ সালে তিনি আবারো দেশে ফিরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টা করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৬ সালে মি. মুশাররফ আবারো সরকারের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে চিকিৎসার জন দুবাই যান এবং ২০২৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।

পাকিস্তানের নওয়াজ শরীফ : পাকিস্তানে নওয়াজ শরীফ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশারফের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তাকে দুর্নীতির মামলায় সাজাও দেয়া হয়। এরপর সৌদি আরব ও আমেরিকার মধ্যস্থতায় তিনি নির্বাসনে গিয়েছিলেন সৌদি আরব। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দ্বিতীয় দফায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে লন্ডনে গিয়েছিলেন নওয়াজ শরীফ ২০১৯ সালে। সেখান থেকে তিনি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে দেশ ফিরে আসেন।

ফিলিপিন্সের মার্কোস : জনবিক্ষোভ ও বিরোধীদের প্রতিরোধের মুখে ১৯৮৬ সালে ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট মার্কোস ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মি. মার্কোস যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কামনা করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান-এর পরামর্শে মি, মার্কোস তখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ গুয়াম -এ আশ্রয় নেন। মি. মার্কোসকে দেশ ছেড়ে পালাতে সহায়তা করেছিলে আমেরিকান এয়ারফোর্সের একটি বিমান। মি, মার্কোস পালিয়ে যাবার ফিলিপিন্স-এর হাজার হাজার মানুষ দেশটির রাস্তায় রাস্তায় আনন্দ উদযাপন করেছে। ১৯৮৯ সালে ৭২ বছর বয়সে মার্কিন দ্বীপ হাওয়াইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান মি. মার্কোস।

ইরানের মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি : ইরানের রাজতন্ত্রের শেষ শাসক ছিলেন মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি, যিনি অনেকের কাছে ‘ইরানের শাহ’ হিসেবে পরিচিত। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের মুখে ১৯৭৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি। ফ্রান্সে বসে সেই বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আয়াতোল্লাহ রুহুল্লা খোমেনি। আন্দোলন ও প্রতিরোধের মুখে রেজা শাহ পাহলভি প্রথমে যান মিশরে। সেখান থেকে মরক্কো, বাহমা দ্বীপপুঞ্জ এবং মেক্সিকো হয়ে আমেরিকা যান রেজা শাহ। তিনি আমেরিকা যাবার পর তেহরানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস দখল করে কূটনীতিকদের জিম্মি করে ইরানের বিপ্লবীরা। তখন তারা জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে আমেরিকার কাছ থেকে রেজা শাহকে ফেরত দেবার দাবি করে। কিন্তু আমেরিকা রেজা শাহকে হস্তান্তর না করলেও তিনি আমেরিকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে পানামা হয়ে আবার মিশরে যান রেজা শাহ পাহলভি। মিশর তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল। ১৯৮০ সালে ষাট বছর বয়সে কায়রোতে মারা যান মোহাম্মদ রেজা পাহলভি।

উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইদি আমিন : ১৯৭০’র দশকে উগান্ডার স্বৈরশাসক ইদি আমিন ক্ষমতায় থাকার সময় ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার-বহির্ভূত হত্যা এবং দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন। জনরোষের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ১৯৭৯ সালে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন মি. আমিন। তিনি তখন সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে এর আগে কিছুদিন তিনি লিবিয়া এবং ইরাকে অবস্থান করেছিলেন। প্রায় দুই দশক সৌদি আরবের জেদ্দায় লোহিত সাগরের পাশে বিলাসবহুল বাড়িতে তিনি কাটিয়েছেন। এসময় তার যাবতীয় খরচ বহন করেছিল সৌদি সরকার। ১৯৯৯ সালে উগান্ডার সংবাদপত্রকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি এখানে ভালো আছি। নিরিবিলি জীবন-যাপন করছি। ২০০৩ সালে রিয়াদের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।

স্বাধীনতার মহাননেতা বঙ্গবন্ধু এবং স্বাধীনতার ঘোষক জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর অবদান অস্বীকার করার কারণে বিগত ৫০ বছর সংসদে জাতীয় লিডারদের দু:ঘজনক চরিত্রহনন এবং বিভাজন সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। বংগবন্ধু বাকশাল কায়েম করে সেনাবাহিনীর গুলিতে ১৫ আগষ্ট নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনা এবং মীর জাফর বিচারপতি খাইরুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে একনায়কতন্ত্র এবং পরিবারতন্ত্র কায়েম করে হাজার হাজার রাজনৈতিক দলের কমীকে হত্যা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী দিয়ে জুলাই মাসে নিরস্ত্র প্রতিবাদী সাঈদ মুগ্ধসহ ১৪২৩ জনের অধিক দেশপ্রেমিক ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে গণহত্যা করে ৫ আগষ্ট শত্রু রাস্ট্র ভারতে পালিয়েছে। গণভবন হাসিনা রেহেনার নামে লিখে নিয়েছে, আজীবন এসএসএফ নিরাপত্তা ভোগের আইন পাশ করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় করে শেখ মুজিবের ম্যুরাল তৈরি করেছে।

বিজয়ী জনতার ভয়ে ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহেনা ওবায়দুল কাদের জাতিকে অরক্ষিত রেখে পালিয়েছে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়ার অবদান স্বৈরচার অস্বীকার করেছে এবং তাঁর স্মৃতি চিহ্ন মুছে ফেলতে জিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের নাম মুছে ফেলা হয়েছে। ৫ই আগষ্ট বিজয়ী বীর ছাত্রজনতা সুধাসদন পুড়িয়ে দিয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন পুড়িয়ে, গনভবন থেকে মালামাল লুট করে স্বৈরাচারের শেষ চিহ্ন মুছে ফেলেছে। বংগবন্ধুর সারাদেশের ম্যুরাল ভেংগে ইরাকের আজীবন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন এবং লিবিয়ার ৪১ বছরের প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফির ম্যুরাল ভাংগার মতো নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। দেশপ্রেমিকেরা বলেন, যার বিদেশে প্রভু আছে তিনি প্রভুর দেশে আশ্রয় নিয়ে থাকেন, শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়ে তার প্রমান দিয়েছেন। আপোষহীন দেশপ্রেমিক নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ২য় বার স্বাধীন বীর বাংগালীর চাপে প্রেসিডেন্ট মুক্তি দিয়েছে।

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি করতে পারে নাই। যার ফলে দালাল শিক্ষক আইনজীবী বুদ্ধিজীবী সাংবাদিকরা নিরস্র ও নিরপরাদ মেধাবী সাঈদ এবং মুগ্ধদের হত্যাকান্ডের জন্য শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ হেলমেট বাহিনীকে দ্বায়ী করে নাই। বাংগালী জাতির মাঝে রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছে। বিগত ১৫ বছর স্বৈরাচারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে রাজাকার বা রাজাকারের নাতি গালি দিয়ে দুনীতি লুটপাট দমন নিপিড়ন চালিয়েছে। ওরা বেসিক ব্যাংক লুট, ইসলামী ব্যাংক লুট, খাদ্যদ্রব্যের লাগামহীন মুল্য বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলেনা। আয়নাঘর, র‌্যাব পুলিশ বাহিনীর গুপ্তহত্যা, সীমান্তে ফেলানীর মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখলে কিছু বলে না। ওরা দুনীতি লুটপাট লালন করে এবং জোর করে ৫৩ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিখিয়েছে। আমরা এখনো বুঝি নাই চেতনা মানে কি? চেতনা মানেই লুটপাট, দুনীতি, খাদ্যের লাগামহীন মুল্য বৃদ্ধি, হেলমেট বাহিনী, ভোটের অধিকার হরণ, বিনাভোটে সংসদ সদস্য, মেয়র, চেয়ারম্যান ইত্যাদি। ভারত স্থল জল আকাশ রেলপথ ব্যবহার করবে।

লেখক : গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!