নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনী আলিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের সত্যতা মিলেছে। মাদরাসার ৫ সদস্যের কমিটির অডিটে নানা অনিয়মের চিত্র ফুটে উঠেছে। মাদরাসা গভর্নিং বডির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ফেনীর সময় কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাহমুদুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর অডিট কমিটি করা হয়। কমিটিতে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মো: মুসা, ফাজিলপুর সাউথ ইষ্ট ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক মীর মোতাহের হোসেন শাহীন, মাদরাসার প্রভাষক সাজিদা আক্তার, প্রভাষক সালমা জান্নাত ও সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম এক মাসের অধিকসময় আর্থিক ব্যবস্থাপনার তদন্ত করেন। সম্প্রতি তাদের অডিট প্রতিবেদন মাদরাসা গভর্নিং বডির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের কাছে জমা দেন।
জানা গেছে, মাহমুদুল হাসান বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে মাদরাসায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেন। যাদের কোন নিয়োগপত্র দেয়া হয়নাই। যাদের বেতন পরিশোধেও সরকারি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হতো না।
সূত্র আরো জানায়, মাদরাসা সংলগ্ন ফজল মাষ্টার লেনে মার্কেট নির্মাণে প্রজেক্ট কমিটির অনুমোদন ব্যতীত কাজ করা হয়। কমিটির অনুমোদিত ঠিকাদারকে পরিবর্তন করে পছন্দের ঠিকাদারকে নিয়োগ দেন। ওই মার্কেট নির্মাণে কোটি টাকার বেশি পরিমান টাকার হিসাব পাওয়া যায়নি। ৩৩ লাখ টাকা দোকান ভাড়া বকেয়া রয়েছে বলে তদন্তকারী একটি সূত্র জানায়। এছাড়া বিভিন্ন নামে-বেনামে টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, অডিট কমিটির প্রতিবেদনে মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে আর্থিক নানা অনিয়ম পাওয়া গেছে। এ প্রতিবেদন শীঘ্রই ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিষ্ট্রার ড. মো: আবু হানিফা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “ফেনী আলিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী- এর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দের অভিযোগের বিষয়ে ইসলামি আরিবি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি মাদরাসাসমূহের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীগণের চাকুরির শর্তাবলী সংক্রান্ত প্রবিধান-২০২৩ অনুযায়ী ১৪, ১৫ এবং ১৬ ধারা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সভাপতিকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।” ওইদিন রাতে মাদরাসার অধ্যক্ষ পদ থেকে মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গাজী মীর ইকবাল হোসেনকে ডেকে নিয়ে এ সংক্রান্ত চিঠি দেন জেলা প্রশাসক।
প্রসঙ্গত; বিতর্কিত অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে শিক্ষিকা-ছাত্রী কেলেংকারি, নানা অনিয়ম-দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি সহ অসংখ্য ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করে মাদরাসায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর থেকে মাহমুদুল হাসান পলাতক রয়েছেন।