মিরসরাই প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মারধরের বিচার না পেয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন কৃষ্ণ দেবনাথ (৪০) নামের এক অটোরিক্সা চালক। উপজেলার ৩নং জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকার কৃষ্ণ ড্রাইভার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষ্ণ ওই বাড়ির মৃত মধুসুদন নাথের ছেলে।
নিহত কৃষ্ণ দেবনাথের পুত্র ইলেক্টিক ও পাইপ মিস্ত্রী সুব্রত দেবনাথ বলেন, গত ১৯ আগস্ট আমরা সবাই জন্মাষ্টমি অনুষ্ঠানে ছিলাম। সন্ধ্যায় বাড়িতে আসার পর শুনি বাবাকে এলাকার নিখিল দাশ ও হৃদয় নাথ ওরফে ভুক্কু নামে দুই ছেলে মারধর করেছে। এরপর বাবা আর ঘরে ফিরে আসেনি। আমি ও আমার মায়ের সাথে কয়েকদিন আগে বাবার ঝগড়া হওয়ায় আমরাও আর খোঁজ খবর নিইনি। নিখিল ও ভুক্কু মারধর করায় অপমাণ সইতে না পেরে গত রবিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে বাড়ির পাশে কালু ডাক্তারের বাগানে গিয়ে বিষ পান করেন বাবা। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বাবাকে দ্রুত উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কৃষ্ণ দেবনাথের বড় ভাই নিমাই চন্দ্র নাথ বলেন, আমি শহরে ছিলাম। যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন ঘটনা জানতে পারি। ভাইকে সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর লাশের ময়না তদন্ত শেষে বাড়িতে এনে সৎকার করা হয়। আমি যতটুকু শুনেছি ও জেনেছি, আমাদের একই এলাকার শ্যামল নাথের ছেলে হৃদয় নাথ ভুক্কু ও শ্রীধাম দাশের ছেলে নিখিল দাশ আমার ভাইকে শুক্রবার লোহার শিকল দিয়ে মারধর করে। এরপর সে আর ঘরে আসেনি। তাকে মারধর করার বিষয়ে কেউ কোন প্রতিবাদও করেনি। নিজের ছেলের বয়সী ছেলেদের হাতে মারধরের শিকার হয়ে অপমানে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। আমার ভাই যদি কোন দোষ করে থাকে এলাকায় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আছে। মেম্বার-চেয়ারম্যান আছে। কিন্তু ১৮-২০ বছরের ছেলেরা আমার ভাইয়ের উপর হামলা করবে কোন ক্ষমতার বলে? তিনি অভিযোগ করে, এই ঘটনায় জড়িত ভুক্কু দাশকে পুলিশ আটক করলেও পরে স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা তাকে থানা থেকে ছেড়ে নিয়ে আসেন।
মঙ্গলবার বিকালে কৃষ্ণ দেবনাথের বাড়িতে গেলে এলাকার মানুষ বলেন, কৃষ্ণকে মারধর করার কারণে সে অভিমানে আত্মহত্যা করেছে। আমরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছিনা। এই এলাকায় সবাই দরিদ্র, তাই আমাদের কথা কেউ শুনছে না। সরকারী দলের প্রভাবশালী এক নেতার আশ্রয়, প্রশ্রয়ে নিখিল ও ভুক্কু এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছে। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে করা হোক।
নিহত কৃষ্ণ দেবনাথের এক আত্মীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, আমার মামা শশুরকে নিয়ে হাসপাতাল কেন যাই সেজন্য আমাকে হামলাকারিরা গালিগালাজ করছে। আমি নাকি হামলাকারিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে নিহতের পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ দিচ্ছি এজন্য আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি এখন পরিবার নিয়ে চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছি। যে কোন সময় আমি ও আমার পরিবারের উপরও হামলা করতে পারে।
এই বিষয়ে জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্যামল দেওয়ানজি বলেন, মারা যাওয়া কৃষ্ণ নেশা করতো এলাকার সবাই জানে। পরিবারের কোন দায়িত্ব পালন করতো না। গত শুক্রবার সকালে স্ত্রী থেকে ৫০০ টাকা ঔষুধের জন্য নিয়ে মদ পান করে ঘরে এসে স্ত্রীকে মারধর করতে চাইছিলো। এসময় নিখিল ও ভুক্কু এসে তাকে মারধর করে। মারধরের ঘটনা আমি সামাজিকভাবে মিমাংসা করে দেব বলেছিলাম। কিন্তু তার আগে সে বিষপানে আত্মহত্যা করে।
জোরারগঞ্জ থানা উপ-পরিদর্শক (এস আই) আবুল খায়ের বলেন, ঘটনার পর পর আমি ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে যতটুকু জেনেছি কৃষ্ণ দেবনাথ মাদক সেবন করতো। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদকের মামলাও রয়েছে। মারধরের ঘটনার সাথে জড়িত ভুক্কু নামের একজনকে আটকের বিষয়টি মোটেও সত্য না। মারা যাওয়ার ঘটনায় যদি কেউ যদি মামলা করতে চায়, আমরা মামলা নেবো।