মোহাম্মদ শেখ কামাল, ছাগলনাইয়া :
ছাগলনাইয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়টি সরিয়ে স্কুলের ওই জায়গায় স্টীল মিলস নির্মানের নেপথ্যে আসলে কারা রয়েছেন এনিয়ে এলাকায় জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। প্রথমদিকে এর নেপথ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিকে আঙ্গুল উঠলেও বিষয়টি ক্রমেই পরিস্কার হতে থাকে। সংসদ সদস্য এমনকি বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি বিষয়টির প্রকাশ্য বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখছেন। তাহলে এর পেছনে ইন্ধনদাতা কারা এ প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার সম্প্রতি এলাকায় এসে স্কুল যেখানে আছে সেখানে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রয়োজনে ওই স্কুলে আরো ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তিনি প্রকাশ্যই বলেন, এ ব্যাপারে তাকে কোন কিছুই জানানো হয়নি। স্কুল সরানোকে ষড়যন্ত্র বলেও অভিহিত করেন তিনি।
একইভাবে ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলও স্কুল সরানোর বিপক্ষে কথা বলেছেন। সম্প্রতি তিনি স্কুল সড়কটি পাকা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এছাড়া ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এফএম আজিজুল হক মানিক, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম, সাবেক প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা মো: মোস্তফা, মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক, বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আলমসহ সকল জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ এবং এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ স্কুলটি না সরানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা সবাই চান স্কুলটি স্কুলের জায়গায় থাকুক।
সম্প্রতি স্কুলের অফিস কক্ষে ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময়কালে স্কুলের শিক্ষক, পরিচালনা পরিষদ, বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের জনগণ মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়টি না সরানোর পক্ষে মতামত দেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও মৌমিতা দাশ। স্কুল রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে সবাই একাত্মতা ঘোষনা করেছেন। এই মুহুর্তে একটি প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে সবাই যদি স্কুল রক্ষার পক্ষে থাকেন তাহলে ‘মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়টি সরিয়ে স্কুলের জায়গায় স্টীল মিলস নির্মানের নেপথ্যে আসলে কারা রয়েছেন’!
ঘোপাল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্কুল রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী শেখ শাহজাহান বাকী বলেন, মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আলমসহ আওয়ামীলীগের কিছু নেতার নেতৃত্বে জামায়াত-বিএনপির সমন্বয়ে গঠিত একটি সিন্ডিকেট মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়টি সরিয়ে স্কুলের জায়গায় স্টীল মিলস নির্মানের নেপথ্যে কাজ করছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখন কৌশলে আমাদের স্কুল রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে মিশে গেছে। হয়তো এটা তাদের নতুন কোন ষড়যন্ত্রের অংশ। আমাদের আন্দোলন চলবে। খুব শীঘ্রই আমরা কাফনের কাপড় পড়ে কাঁধে লাঙ্গল নিয়ে কৃষকদের অবস্থান ধর্মঘট, মাথায় কালো কাপড় বেঁধে তিনদিন ব্যাপী শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী মৌন প্রতিবাদ, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের কর্মসূচী পালন করবো।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আলম তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্কুল রক্ষার আন্দোলনে আমরা সবাই একস্েঙ্গ আছি। স্কুল যেখানে আছে সেখানেই থাকবে।
উল্লেখ্য, বহু কৃষি জমি ও মানুষের বাড়িঘর নষ্ট করে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে ইউনিটেক্স গ্রুপের একটি স্টীল মিলস। বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে বিদ্যালয়ের জায়গায় ইউনিটেক্স গ্রুপের স্টীল মিলস নির্মাণ করার জন্য ফেনী জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন ইউনিটেক্স গ্রুপের সিএফও মোহাম্মদ আরিফ। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এলাকার মানুষ ‘আমরা জীবন দিবো কিন্তু বিদ্যালয়ের জায়গা হস্তান্তর করতে দিবো না’ এই শ্লোগানের ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি রক্ষার দাবীতে আন্দোলন শুরু করেছেন।
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌমিতা দাশ জানান, মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছে ইউনিটেক্স গ্রুপ। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে ডিসি অফিস থেকে আমাকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। সেই লক্ষে স্কুলের শিক্ষক, পরিচালনা পরিষদ, বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণ করি। সবাই মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়টি না সরানোর পক্ষে মতামত দিয়েছেন।