দৈনিক ফেনীর সময়

রাষ্ট্র সংস্কার: প্রেক্ষিত কয়েকটি প্রস্তাবনা

আনোয়ার আল ফারুক

স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দিকালের চেয়ে বেশি সময় অতিক্রম করলেও আমাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির জায়গায় যোজন যোজন পার্থক্য রয়ে গেছে।আমরা স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করতে পারছি কী? উত্তর হ্যাঁ সূচক দেওয়ার অবস্থা আমাদের এখনো অর্জিত হয়ে উঠেনি।উন্নয়নের কাগুজে সূচক আর বাস্তব উন্নয়ন এক জিনিস না।আমাদের কাজির গোয়ালের গরুর হিসেব অনেক হয়েছে। এবার বাস্তবতার নিরিখে একটু সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে ভাবা হোক। আমাদের কী আছে আর কী নেই, কী দরকার, অগ্রাধিকারভাবে কোন সমস্যা আগে নিরসন হওয়া জরুরি সেই সব জায়গা নিয়ে ভাববার যথেষ্ট সময় হয়েছে।জাতিগতভাবে আমরা সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে সত্যকে সত্য আর মিথ্যেকে মিথ্যে বলার সৎ সাহস দেখানোর যথেষ্ট স্বক্ষমতা দেখানো উচিত। অন্ধ ভক্তি আর বিদ্বেষ দুটোই চরম ক্ষতিকর। কাউকে পছন্দ হয় না বলে তার অর্জনকে অস্বীকার করার হীন মানসিকতা দেখানো যেমন উচিত না আবার অতিভক্তির কারণে কারো অন্যায়কে মাথা ঠেলে ন্যায় বলাও সমান অপরাধ। আমাদের এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি চর্চা বেশ হয়েছে। দলপ্রীতি গোত্রপ্রীতি,বিরুধী পক্ষের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন মানসিকতা পরিহার করে নিতান্ত দেশ জাতির স্বার্থ নিয়ে ভাবতে পারলেই দেশ উন্নতির স্বর্ণশিখরে আরোহন করবে। আমরা অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করে ছিদ্র অন্বেষণে বদ চর্চা করতে পারব কিন্তু সমাধান কিংবা কমতি পুষিয়ে উঠার বাস্তব পথে এগুতে হয়ত পারব না। অতীতকে যদি ভবিষ্যতের সফলতার জন্য সামনে আনা হয় সেটা দোষের না।অতীত পর্যালোচনা হবে নিতান্তই ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনার জন্য। সমস্যা সম্ভাবনার দিক কী ছিল? কমতি কোথায় ছিল? সেই কমতি কাটিয়ে উঠার পথ কী এসবের জন্য অতীতকে সামনে আনা হয় তাহলে অবশ্য সেটা শুভকর। কিন্তু নেহায়েত কাউকে ঘায়েল করার জন্য কিংবা চিরাচরিত দুশমনি স্বরূপ আনা হয় তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি কোন অংশে কম নয়। আমাদের চাওয়া কী? স্বনির্ভর বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও কী আমরা লক্ষ্যের সিকিভাগ অর্জন করতে পারছি কী? না পারার পিছনে যে সব প্রধান অন্তরায় ছিল তা চিহ্নিত করা সময়ের অপরিহায্য দাবি বটে। সমস্যা চিহ্নিত করে টেকসই পরিকল্পনা আমাদের হাতে নিতে হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের কী আছে আর কী নেই তারও একটা সঠিক পরিসংখ্যন করে ঘাটতি পুরণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেসব বিভাগে জরুরী হস্তক্ষেপ করতে হবে তার একটা প্রস্তাবনা পেশ করছি-

স্বাধীনতার অর্ধশাতাব্দিকাল অতিক্রান্ত হলেও আমরা এখনো যুগপোযোগী কাঙ্খিত স্থায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছি। বিদেশ থেকে হাওলাত করা জগাখিচুড়ি মার্কা কারিকুলাম দিয়ে বারবার শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কাজটি হয়েছে। বারবার কারিকুলাম পরিবর্তন করার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে চরম বেগ পেতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে যে কয়টা শিক্ষা কমিশন গঠন হয়েছে তারাও জাতির জন্য যুগোপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম প্রনয়নের ব্যর্থতার দায়ভার এড়াতে পারবেন না।এই ব্যর্থতার দরুণ একেকবার একেক দেশের শিক্ষা পদ্ধতি ধার আনতে হয়েছে। একটা পদ্ধতি বুঝতে যে সময় লাগার কথা বা বুঝে উঠার পর ঠিক আরেকটা পদ্ধতি আমদানী করার ফলে আমাদের চরম ক্ষতি হয়েছে। বর্তমান শিক্ষা বর্ষে যে কারিকুলাম প্রণীত হয়েছে তা কী আদৌ আমাদের উপযোগী? এই নিয়ে দেশের চিন্তক শ্রেণি, শিক্ষাবীদ এমনকি অভিভাবক মহল থেকেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসলেও সেটা আমলে না নিয়ে এই পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।এই পদ্ধতি বাতিলের জন্য যেমন অভিভাবকরা সরব আন্দোলন গড়ে তুলছিল তেমনি শিক্ষকরাও মনে প্রাণে এক পদ্ধতি মেনে নেয়নি।যদিও তাদের বিরোধীতার সুযোগ ছিল না। আমি নিজেও একজন শিক্ষক।শিক্ষকতার বাইরে কিন্তু আমিও অভিভাবক।আমারো সন্তানেরা কোন না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে। আমি কখনো চাইব না আমার সন্তানেরা মৌলিক শিক্ষার বাইরে জগাখিচুড়ি মার্কায় শিক্ষিত হয়ে উঠুক।যাক, বর্তমান কারিকুলাম স্থগিত করা হয়েছে।সময় নিয়ে হলেও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটা যুগোপযোগী টেকসই স্থায়ী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন সময়ের অপরিহায্য দাবি।জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আর কোন অবহেলা আমরা দেখতে চাই না।

আমাদের স্বাস্থ্যখাত কতটা ভঙ্গুর ও অব্যবস্থাপনা অবস্থা বিরাজ করছে তা জাতি টের পেয়েছে করোনাকালীন সময়ে। মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের গাফলতি কোন অবস্থায় কাম্য নয়।স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম অবস্থাপনা নিয়ে বারবার বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এক সময় তা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নজরে আসে না। ফলে নাটের গুরুরা বারবার পার পেয়ে চোর থেকে ডাকাত হয়ে ফিরে আসে।এই খাতে দূর্ণীতির ফিরিস্তি বিশাল। ফলে স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমরা আমাদের স্বাস্থ্যখাতকে কাঙ্খিত মানে উন্নীত করতে ব্যর্থ হয়েছি।গত সংসদের সর্বশেষ বাজেটেও জাতীয় আয়ের ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ ব্যয় ধরা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে।যা গত অর্থ বছরে ছিল ৪দশমিক ৯৯ শতাংশ।এই বরাদ্ধানুযায়ী স্বাস্থ্যখাতের দৃশ্যমান উন্নতি চোখে পড়ছে না। সর্বত্র লজিস্টিক সাপোর্টের অপ্রতুলতা। জেলা সদর ও উপজেলা সদর হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত মেডিসিন সরবরাহ নেই। ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমিউনিটি সেন্টারগুলোর কথা বাদই দিলাম।আমাদের চেয়ে অনেক পরে স্বাধীনতা অর্জিত দেশ সিঙাপুরে স্বাস্থ্যসেবা গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারলে আমরা কেন পারিনি? আমাদের কিসের অভাব ছিল? এই বিষয়গুলো মূল্যায়নের সময় এখন এসেছে। আমাদের দেশের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলো কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না বলেতো প্রতি বছর বিশাল একটা অংশ চিকিৎসা সেবার জন্য ভারত সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে বা যেতে হচ্ছে। এতে করে আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি না? বিগত সময়গুলোতে এই খাতের উন্নয়নের অনেক বুলি আওড়ালেও বাস্তবচিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। মন্ত্রী এমপিরা বারবার বলছেন আমরা স্বাস্থ্যসেবাকে যুগান্তকারী উন্নয়ন করেছি। তারা এটাও দাবি করছে এখন বিদেশিরা আমাদের দেশে চিকিৎসা নিতে আসতেছে অথচ হাস্যকর ব্যাপার হল সেই এমপি মন্ত্রিরা নিজেরা নিজেদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ ছুটাছুটি করছেন। এই দ্বিচারিতায় বুঝা যায় আমাদের স্বাস্থ্যখাত কতটা বেহালদশা অতিক্রম করে আছে।অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে সাধারণ নাগরিকগণ বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ঝুঁকছেন ফলে এক শ্রেণির মুনাফালোভীরা সাধারণ মানুষের দিব্যি পকেট কাটছেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিজেদের মত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্যখাতকে উন্নত করতে হলে এই খাতে দূর্ণীতির উৎস কেন্দ্র বিন্দু চিহ্নিত করে সেখানে আগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে বররাদ্ধকৃত অর্থে সুষম বন্টন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসার মান উন্নত করে আস্থার জায়গাটা পুনরুদ্ধার করতে হবে সবার আগে। মালেশিয়ার আধুনিক অর্থনীতির রূপকার সাবেক সরকার প্রধান মাহথির মোহাম্মাদ জটিল রোগে আক্রান্ত হলে তাকে বিদেশে চিকিৎসার পরামর্শ দেন তার চিকিৎসকরা। তিনি তখন তাদের বলেন বিদেশের সেই মানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণে আমাদের কী কী ভুমিকা নিলে পরে চিকিৎসার জন্য আর বিদেশ যেতে হবে না। তারা সমস্যা চিহ্নিত করেছেন, সমস্যা উত্তোরণে সমন্বিত চেষ্টা করেছেন। কয়েক বছরের মাথায় ওই মানের হাসপাতাল স্থাপন করে তিনি সেখানেই নিজের চিকিৎসা করিয়েছেন। এটাকে বলে দেশ প্রেম। তিনি এইও বলেছেন আমি রাষ্ট্র প্রধান যদি চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাই তাহলে আমার দেশের আমজনতার কী হাল হবে? সবার বিদেশ গিয়ে চিকিৎসার সামর্থতো নেই। তাই তিনি তার দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছেন। আমাদের জন্য রেখে গেছেন উদাহরণ।আমরা চাই আমাদের স্বাস্থ্যখাত হবে অতুলনীয় উদাহরণ। চিকিৎসার জন্য আমাদের যেন বিদেশ দৌঁড়াতে না হয়। সকল জড়তা স্থবিরতা কেটে সামনে এগিয়ে যাবার সময় এখন।

বিচার বিভাগের উপর আস্থা হারানো একটা দেশের জন্য এক বিশাল অশনি সংকেত। বিগত শাসক শ্রেণি বিচার বিভাগের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যেখানে ইনসাফের বাণী নিরবে নিবৃত্তে কাঁদছে।আলোচিত বহু খুনের বিচার প্রলম্বিত করতে করতে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে আসছে যে যেখানে ন্যায় বিচার সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। লেখার কলেবর না বাড়ানোর পরিকল্পনায় আপাতত শুধুমাত্র সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনির বিষয়টায় আলোকপাত করতে চাই। এই মামলার ফাইনাল চার্জশিট দেওয়ার ব্যাপারে কত নেকামো যে হয়েছে তা জাতির কাছে স্পষ্ট। এখনো এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম ধোঁয়াশাপূর্ণ অবস্থায় আছে।এদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি বিরোধী পক্ষকে দমন নীপিড়নের হাতিয়ার স্বরূপ বহু বায়বীয় ঘটনা মামলা দায়ের করা হয়েছে। খুন গুম হয়েছে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ। বিনা বিচারে ক্রস ফায়ারের নামে বিরোধী মতের নেতা কর্মীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। আয়নাঘরের মত গোপন টর্চার সেল বানিয়ে অসংখ্য মানুষকে বছরের পর বছর অন্ধকার প্রকোস্টে আটকিয়ে রাখা হয়েছে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে। যা স্পষ্টত মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড। জুড়িশিয়াল কিলিং হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে হরণ করার মত নোংরামী কোন অংশে কম হয়নি। এক কথায় বিচার বিভাগকে ধংশ করেনি শুধু বিচার ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও আস্থাহীন করে তুলছে। এই ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। যখন যেই সরকার আসুক বিচার বিভাগের উপর সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ করে জন আস্থা ফিরিয়ে আনার সকল উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমজনতার প্রত্যাশা একটা হস্তক্ষেপমুক্ত স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা।

বিগত আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণতের বদ খাসলত পরিলক্ষিত হয়েছে।বিগত সরকার পুলিশ বাহিনী র‌্যাব বাহিনীকে দলীয় কর্মীদের মত ব্যবহার করেছে। রাষ্ট্রকে করে তুলছিল পুলিশি রাষ্ট্রে। ফলে আমজনতা নির্বিচারে নিগৃহিত হয়েছে। পুলিশ র‌্যাবকে দাঁড় করেছিল জনগণের মুখোমুখি। ফলে একটা অস্থির সময় পার করছিল দেশ জাতি। বিনা বিচারে ক্রশফায়ার, থানায় আটকে নির্মম নির্যাতন, পুলিশি হিফাজতে মৃত্যুবরণ, ক্রশফায়ারের হুমকিতে চাঁদাবাজী এসবের কোন কমতি করেনি তারা। জায়গায় জায়গায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নের্তৃত্বস্থানীয়দের দলীয় নেতাদের মত উদ্যত্তপূর্ণ বক্তব্য দিতে দেখা গিয়েছে। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। আমজনতা জুলুমের শিকার হয়েও থানায় যাওয়ার দুঃসাহস করত না।আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সকল বাহিনীকে পুত রাখা রাষ্ট্রের কর্তব্য। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহারের বদ প্রবণতা পরিহার করতে না পারলে জাতিকে সীমাহীন খেসারত দিতে হবে।সরকার আসবে সরকার যাবে কিন্তু রাষ্ট্রের কর্মকর্তা কর্মচারীরাতো বহাল থাকবে। একটা সরকারের মেয়াদ শেষ কিংবা পতনের পর প্রশাসন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিদের পলায়ন, দেশ ত্যাগের আয়োজন কতটা বিভৎস চিত্রের প্রমাণ বহন করে! কেন এই বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দলীয় কর্মীর ভুমিকায় আনা হল আর কেনবা সরকারের মেয়াদ শেষে তাদেরও পালাতে হবে? অপকর্ম করছে বলেইতো পালাতে হচ্ছে। আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে এমন লেজুড়বৃত্তি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চাইনি। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী হবে জনগণের সেবক। মানুষ বেকায়দায় পড়লে ইনসাফের জন্য তাদের দ্বারস্থ হবেন এটাই স্বাভাবিক কিন্তু হচ্ছে তার বিপরীতটা। নতুন নতুন হয়রানির শিকার হবে বলে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করা থেকে দূরে থাকছে। অন্যায়ের শিকার হয়েও আইনের আশ্রয়ে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে আমজনতা। দেশের পট পরিবর্তন হয়েছে। এই সব বাহিনীর উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ তুলে বাহিনীগুলোর ইমেজ ফিরিয়ে আনতে হবে। রাষ্ট্রীয় এই বাহিনীকে নিরপেক্ষ কাজ করার অবারিত সুযোগ করে দিতে হবে।এই সেক্টরে ঘাপটে মেরে বসে থাকা দূর্ণীতবাজ দলীয় মনোভাব পোষণকারী ইতিপূর্বে অতি উৎসাহি হয়ে জনজীবনকে বিষিয়ে তোলাদের ব্যাপারে তড়িত সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত জরুরি। ব্যবসায়ী সেক্টরের সিন্ডিকেট শক্ত হাতে দমন করতে হবে। বিগত সরকার ১৬টি বছর বিরোধী দল নিয়ে একচেটিয়ে খেলতে যেয়ে এই খাতের ব্যাপারে চরম উদাসীনতা ও উন্নাসিকত প্রদর্শন করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার জন্য ব্যসায়ীদের হাতে রাখতে যেয়ে তাদের সকল অপর্মের সুযোগ করে দিয়েছে ফলে ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট এই সেক্টরের জুলুমের আখড়ায় পরিণত করে তুলছে। ভোক্তা সাধারণের অধিকার ভুলুন্ঠিত হয়েছে। এখনো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে এই অঙ্গনে চরম অরাজকতা বিরাজ করছে। আর অরাজকতার খেসারত দিতে হচ্ছে আমজনতাকে।সময় প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি থাকবে আবার স্বাভাবিকও হবে কিন্তু এদেশের চিত্র হল একবার কোন পণ্যের দাম বাড়লে আর সেটা কমে না। এই না কমার পিছনে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অদৃশ্য বদ হাত রয়েছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙা সময়ের অপরিহায্য দাবি বটে।দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে শক্ত মনিটরিং পদক্ষেপ জরুরী।

সর্বোপরী দেশের সকল সেক্টরে বিরাজমান অব্যবস্থাপনা দূর্ণীতি দমন করে দেশকে কাঙ্খিত উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারলে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা সত্যিকারার্থে অর্থবহ হবে। স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবে দেশজনতা। আমাদের প্রিয় এই দেশ আমাদের স্বপ্নের চেয়েও অনেক বড়। আমাদের এই দেশকে পৃথিবীর উন্নয়শীল রাষ্ট্রে পরিণত করার সমন্বিত চেষ্টা আমাদের করতে হবে। পর নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভর করে তুলতে আমাদের ঐক্যমত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের কাজকে দ্রুত হাতে নিতে হবে। দলীয় ও সংকীর্ণ চিন্তার উর্ধ্বে ভাবতে হবে দেশকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!