fenirshomoy logo black

কারো মৃত্যুর খবর কানে আসতেই কোদাল আর খন্তা নিয়ে ছুটে চলেন শফি উল্লাহ। কবর খনন করেই যেন তৃপ্তি পান তিনি।

শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা নেই, নেই ঝড়-তুফান কিংবা প্রতিকূল আবহাওয়ার ভয়, যখনই মানুষের মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পান তখনই ছুটে যান তিনি। দিন হোক বা রাত, আপন-পরের ভেদাভেদ উপেক্ষা করে নিঃস্বার্থভাবে ছুটে গিয়ে শুরু করেন কবর খননের কাজ। কবর খননের পর সেই কবরে মৃত ব্যক্তিকে নিজ হাতে শুইয়ে দেওয়ার পর বাড়ি ফেরেন শফি উল্যাহ। এভাবে দীর্ঘ ৬৫ বছরে বিনা পারিশ্রমিকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কবর খনন করেছেন তিনি। একশরও বেশি বয়সি এই ব্যক্তির নাম মো.শফি উল্যাহ। তিনি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার পৌর ২নং ওয়ার্ড আজিজ ফাজিল পুর গ্রামের মিন্নাত আলী হাজী বাড়ির মৃত সৈয়দুর রহমানের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা শফি উল্যাহ পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী ছিলেন। তবে এর আগে তিনি বন বিভাগেও কর্মরত ছিলেন। নিজ এলাকায় প্রথম দিকে ছোট একটি ঘরে ৩ ছেলে ৩ মেয়ে নিয়ে বসবাস করে আসলেও কষ্টে অর্জিত উপার্জন দিয়ে মানুষ করেছেন সন্তানদের। বর্তমানে তার বড় মেয়ে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। এছাড়াও ৩ ছেলে সন্তান সফলতা পেরিয়ে বর্তমানে বাবাকে নিয়ে এ ভবনটিতে যৌথ ভাবে বাস করছেন। তবে বাবার এই মহতি কর্মে গর্বিত ছেলে-মেয়েরাও।

স্থানীয় লোকজন আরও জানান, প্রচারবিমুখ এ মানুষটিকে দীর্ঘ ৬৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এভাবেই সর্বত্র কবর খনন করতে দেখা গেছে। কিন্তু এ কাজের বিনিময়ে তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেন না। মসজিদে শোক সংবাদ শুনলে কোদাল,শাবল ও টুকরি হাতে কবরস্থানে ছুটে যান তিনি। সেখানে পৌঁছে কবর খননের কাজ শুরু করেন। নিখুঁতভাবে কবর খনন করার প্রশংসাও করেন তারা।

সন্তান মোঃ ইব্রাহিম জানান,ছোটবেলা থেকে তিনি তাঁর বাবাকে মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খুঁড়তে দেখেছেন। যখনই কোনো মানুষ মারা যেত,তখনই মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে নিজ উদ্যোগে কবরস্থানে গিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে কবর খননের কাজ শুরু করতেন তাঁর বাবা। বাবার সঙ্গে মানবিক এ কাজে যোগ দিতেন তিনিও। ছোটবেলা থেকে বাবার এ মানবিক কাজ তাঁর হৃদয়ে এক অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। বাবাকে অনুসরণ করে বর্তমানে কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করেন তিনিও।

স্থানীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মাহবুবুর রহমান বলেন,‘শফি উল্যাহ যে কাজ করেন তা খুবই মানবিক কাজ। মানুষের মৃত্যুর খবর শোনামাত্রই তিনি চলে যান কবর খনন করতে। বর্তমান সময়ে বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দেওয়া লোক পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু তার এই কর্ম ইসলামিক দৃষ্টিতে একটি ভালো কর্ম। নিশ্চয়ই তার এই ভালো কর্ম এই সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার।

গ্রামে গ্রামে মৃত মানুষের কবর খনন যেন তাঁর অস্থিমজ্জায় মিশে রয়েছে। তাইতো যখনই কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পেতেন, তখনই নিজের উপার্জনের একমাত্র পেশা বন্ধ করে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে ছুটে যেতেন তিনি। ১০০ বছরেরও বেশি শফি উল্যাহ এখন বার্ধক্যে পড়ে গেছেন। মৃত্যুর খবর পেলে ছুটে যাওয়ার ইচ্ছে হলেও বার্ধক্যই যেন আটকে দেয় তাকে। আসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানি পেলেন শফি উল্যাহ। বয়োবৃদ্ধ মানবিক এই মানুষটি এখন নিজেই মৃত্যুর দিন গুনছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!