আরিফ আজম :
ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের শর্শদী উত্তর খানে বাড়ী এলাকায় গৌরব আর ঐতিহ্যের স্মৃতি ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ মসজিদ। বাংলার প্রথম স্বাধীন মুসলিম শাসক ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ নিজ নামেই প্রায় ৬শ ৭৩ বছর আগে ইট, পাথর ও সুরকি দিয়ে নির্মিত হয়েছিল ৬ গম্বুজের একটি নান্দনিক স্থাপনা। সুলতানী স্থাপত্যরীতির সুন্দর এ কাঠামোতে শত শত বছর ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখানে নামাজ আদায় করে আসছেন। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতিহাস-সংস্কৃতির দর্শনার্থীরা দেখতে এসে ভাঙ্গাচোরা সড়কে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শর্শদী বাজারে প্রবেশের বিপরীতদিকে কিছু পথ পার হলেই চোখে পড়ে সীমানাপ্রাচীর ঘেরা সুরম্য দালান। এটি ১৯৩৮ থেকে ১৯৪৯ সালের সময়কালে দ্বিতীয় রাজধানী শর্শদীতে ১৬শতক জায়গায় ৬ ফুট চওড়া দেয়াল বিশিষ্ট মসজিদটি স্থাপন করেন ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ। ১৯৯৮ সালের দিকে ভেঙ্গে পড়ায় পুরোনো আদলে নতুন করে নির্মাণ করা হয়। স্থাপনের সময় নির্মিত মিম্বরটিতে এখানো নামাজ পড়ান ইমাম। মসজিদের ভেতর থেকে ওপরের দিকে তাকালে মনকাড়া ৬টি গম্বুজ চোখে পড়ে। ভিতরে মসজিদের বাঁধাই করা একটি ছবি রয়েছে। ওই ছবিতে সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ নির্মাণ করেছেন বলে উল্লেখ আছে।
ওই মসজিদের পাশেই ২০১৫ সালে বেগম ফরিদা বখতেয়ারা নুরানী ও হাফেজিয়া এতিমখানা মাদরাসা গড়ে তোলেন সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী আবদুল রকিব কাজমী। আবদুল রকিব কাজমীর মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটির দেখভাল করেন তার স্ত্রী মেসার্স আবদুল কুদ্দুস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহিনুর জাহান লাবনী। ফেনীর সময় কে তিনি জানান, ওই এতিমখানায় ৩০ জন শিক্ষার্থী, ৪ জন শিক্ষক ও ২ জন বাবুর্চি রয়েছেন। তাদের প্রতিমাসে খরচ বাবদ দেড় লাখ টাকা ও ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ মসজিদের মুয়াজ্জিনের বেতন ব্যক্তিগতভাবে বহন করেন বলে তিনি জানান।
মসজিদের ইমাম হোসাইন আহম্মদ ফেনীর সময় কে বলেন, সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা। শর্শদী ছিল তার দ্বিতীয় রাজধানী। ২০০৯ সাল থেকে এ মসজিদের দায়িত্বে রয়েছি। মসজিদের সামনের রাস্তাটি ভাঙ্গাচোরা। এখানে কোন সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় মুসল্লী ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোরশেদ আলম ফেনীর সময় কে বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে অনেকে মসজিদটি দেখতে আসে। এটি আমাদের এলাকার জন্য গৌরব।
শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞা ফেনীর সময় কে বলেন, কয়েকশ বছর আগের মসজিদটি মুসলিম শাসক ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ এর স্মৃতি হিসেবে আছে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটি খুবই সুন্দর। দূরদূরান্ত থেকে দেখতে আসা লোকজন যেন নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ এলজিইডি সড়ক মেরামত করে।
অবরসপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলী হায়দার ফেনীর সময় কে বলেন, ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ তার শাসনামলে ইসলামিক সংস্কৃতির আদলে বহু স্থানে বহু স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন। এগুলো অনেক বিলীন হওয়ার পথে। শর্শদীর মসজিদটি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে স্মৃতি। তৎকালীন সময়ে মানুষের প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধা বোধ থাকলে নানা স্থাপনা নির্মাণ করেন এটি তার অন্যতম উদাহরণ। এ স্মৃতিগুলো আমাদের সংস্কৃতিকে উন্নত করেছে।
তিনি আরো বলেন, ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ এর মতো লোকেরাই বিভিন্ন কর্মকান্ডে দেশের আত্মসামাজিক উন্নয়নে কাজ করেছেন। তাদের স্মৃতি লালন করার এমন অনেক স্থাপনা নির্মাণ করে গেছেন, আজো তাদেরকে মানুষ শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে। ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ মসজিদ এখন কালের সাক্ষী। এটি রক্ষণাবেক্ষনের জন্য সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ১১ মে তৎকালীন সরকার মসজিদটিকে প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। সরকারের প্রতœতত্ত¡ বিভাগ এটির দেখভাল করলেও কিছুদিন পরপর একজন এসে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করেন।
প্রতœতত্ত¡ বিভাগ কুমিল্লা অঞ্চলের পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান ফেনীর সময় কে বলেন, তিনি কিছুদিন আগেই যোগদান করেছেন। সহসা মসজিদটি পরিদর্শন করে সমস্যা সমাধানে সরকারের উচ্চ মহলে অবগত করা হবে।