ফিরোজ আলম :
এই ধুলোর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অনন্তলোকে চলে গেলেন ফেনীর নির্ভীক ও প্রতিভাযশা সাংবাদিক শাহজালাল রতন,গতকাল ২৫ জানুয়ারি রাত ৯ ঘটিকার সময় কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি- ইন্নানিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাইহে রাজিউন। মৃত্যুকালে উনার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। কিছু দিন আগে প্রেসক্লাবে এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ১৯৫৪ সালে কুমিল্লার বাগিচাঁগায়ে উনার জন্ম। যদিও শাহজালাল রতনের ¯ স্থায়ী নিবাস কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শিলরী গ্রামে। পিতার নাম: এডভোকেট আবদুল মজিদ ,মাতার নাম : সুফিয়া খাতুন । ৪ ভাই ৭ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট এবং মা বাবার বিশেষ আদরের। উনার পিতা কুমিল্লা কোর্টের পিপি ছিলেন। পিতার কর্মস্থল কুমিল্লা শহরের বাগিচাগাঁও এলাকায় শিশুকাল অতিবাহিত করেন।
শাহজালাল রতনের শিক্ষা জীবন শূরু হয় কুমিল্লা রানীগঞ্জের মর্ডান স্কুল। এটি ছিল কুমিল্লার প্রথম কিন্ডার গার্ডেন স্কুল। এরপর ১৯৭০ সালে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি. ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে এইচএসসি এবং ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স সহ এম এস এস সম্পন্ন করেন।
বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াকালিন সময়ে দৈনিক জনপদে লেখালেখির শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে দৈনিক বাংলার মাধ্যমে সত্যিকারের সাংবাদিকতা শুরু করেন ফেনী প্রতিনিধি হিসাবে। ১৯৯৮ সালে দৈনিক বাংলা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঐ পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন। দৈনিক বাংলা বন্ধ হওয়ার পর তিনি শফিক রেহমানের যায় যায় দিন প্রতিদিনে কিছু দিন কাজ করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে গোলাম সারওয়ার ইত্তেফাক ছেড়ে যুগান্তর পত্রিকা বের করলে যুগান্তরে স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ পান। ২০০৫ সালে গোলাম সারওয়ার যুগান্তর ছেড়ে দৈনিক সমকাল পত্রিকা বের করলে তিনিও সমকালে যোগ দেন এবং ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেচ্ছায় সমকাল পত্রিকা থেকে অবসর নেন।
শাহজালাল রতন দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও শ^াসরোগে ভুগছিলেন। তিনি বছর দশেক আগে ভারতের চেন্নাইতে গিয়ে কিডনী চিকিৎনা নেন। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হননি। ফেনীর মত একটা জেলা শহরের সাংবাদিকতা করলেও তিনি ছিলেন ঢাকার রিপোর্টার মত অগ্রগামী সাংবাদিক। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ৪/৫টি বইও লিখেন এর মধ্যে ফেনী চিত্রে প্রকাশিত কলাম সংকলন অমøমধুর, উপন্যাস যেতে যেতে পথে, শোভা ও ইরার ইতিকথা অন্যতম।
পত্রিকার প্রতি তার একনিষ্ঠতা, একাগ্রতা, নিরপেক্ষ রিপোর্টের কারণে জয়নাল হাজারী, ভিপি জয়নাল ও জাফর ইমামের আমলে ফেনীর নানা ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে রিপোর্ট করলেও তিনি কোনসময় রোষানলে পড়েননি। তিনি প্রথম জীবনে যেহেতু ঢাকায় সাংবাদিকতা করেছেন সে হিসাবে তিনি ফেনী থেকে অনেকগুলো অনুসন্ধানীও আলোচিত রিপোর্ট করেন। যা গুরুতের সাথে যুগান্তর ও সমকালের মত দৈনিক পত্রিকায় লিড নিউজ হয়েছে। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাজারীর বাড়িতে যে দিন যৌথ অভিযান হয় সে দিন যুগান্তরের প্রথম পৃষ্ঠাটা শাহজালাল রতনের লেখায় পরিপূর্ণ একটি সংখ্যা ছিল। ছবি আর সাইড স্টোরি সহ সেদিন ৮টি নিউজ ছাপা হয়েছিল তাঁর। তাঁর আর একটি আলোচিত রিপোর্ট একরাম হত্যার পর ‘ভুলে ভরা চার্জশিট’। এই রিপোর্টটি সমকালে ছাপা হওয়ার পর পরের দিন ঢাকার ৬/৭টি পত্রিকায় এই রির্পোটের বরাতে সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিল। এছাড়া জনকন্ঠে জয়নাল হাজারীকে নিয়ে প্রায় মাসব্যাপি গডফাদার সিরিজ ছাপা হয়, আহমেদ নুরে আলমের সাথে। যার অধিকাংশ তথ্য তিনি প্রতিদিন ফেনী থেকে পাঠাতেন বলে জানান। একসময়ে তার সহকর্মী দৈনিক বাংলার রফিকুল ইসলাম রতন সময়ের আলোর সম্পাদক হয়েছিলেন। ঢাকায় সাংবাদিকতা করলে রতন ভাই যে মেধা ও প্রজ্ঞা ছিল অনায়াসে তিনি যে কোন দৈনিকের বড় পদে যেতে পারতেন।
সাংবাদিকতা শুধু তাঁর পেশা ছিল না , তিনি এটিকে নেশায় পরিনত করেন। এবং কোথাও কোন ঘটনা ঘটলে তিনি তাঁর ১০০ সিসি হোন্ডা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন শহরে । ১৯৮২ সাল থেকে ৯০ এর দশকের শেষ পর্যন্ত তিনি এই হিরো হোণ্ডাটি চালাতেন।
তিনি ছিলেন রামপুরের এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও পৌর চেয়ারম্যান আবু বক্করের একমাত্র মেয়ের জামাতা। যেহেতু তার কর্মস্থল ছিল ফেনী সে হিসাবে বৈবাহিক সূত্রে ১৯৮১ সাল থেকে ফেনীর রামপুরের পাটোয়ারি বাড়িতে থিতু হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানে ছিলেন।
শাহজালার রতন ছিলেন একজন পরোপাকারী ও নিরঙ্কারী ও পড়ালেখা জানা লোক। বছরের পর বছর আমি উনার সাধে মিশেছ্ধিসঢ়;। উনার হোণ্ডার পিছনের সওয়ারি ছিলাম। অনেক সময় দেখলাম তাঁর এলাকার বহু লোক নানা কাজে উনার কাছে আসতেন, কেউ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছে না , উনাকে একটু বলে দিতে হবে। এলাকার কোনো গরীব লোকের সিএনজি ধরে নিয়ে গেছে, ট্র্যাফিক পুলিশকে বলে তা ছাড়িয়ে নিতে হবে। দেখেছি অবলীলায় এ কাজ গুলো করে দিতেন। এত কে কি মনে করতো তিনি তার দিকে ভ্রুক্ষেপ করতেন না। উনার সাধ্যের মধ্যে হলে উনি যে কোন লোকের উপকার করতেন। পদুয়া তাঁর বাপ দাদাদের প্রতিষ্ঠিত একটি হাইস্কুলের দীর্ঘদিন তিনি সভাপতি ছিলেন। এই প্রতিবেদনের লেখকের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ত্রিশ বছরের। ১৯৯৩ সালে দৈনিক মিল্লাত পত্রিকার ক্রীড়া রিপোটারের পদ ছেড়ে আমি সোনালী ব্যাংকে জয়েন করি। একদিন সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবে উনার সাথে কথা হয় এর পর ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এরপর উনার সাথে প্রেস ক্লাব রিপোর্টার্স ইউনিটি, ট্রাংক রোডের ইসলাম কমপ্লেক্সে অবস্থিত সমকাল অফিসে বছরের পর বছর আড্ডা দিয়েছি। প্রেস ক্লাবে এই আড্ডায় আমাদের সহযাত্রী ছিল হাবিুবর রহমান খান, মানিক লাল দাস, শাহ আলম, এনএন জীবন, ইফতেখারুল মজিদ পিয়াল সহ আরো অনেক সাংবাদিক। সেই যে রতন ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যা অটুট ছিল। মৃত্যুর এক/ দেড় মাস আগেও দেখতাম তিনি নিয়ম করে এশার নামাজের আগে প্রেসক্লাবে এস আড্ডা মেরে যেতেন। Купите вучне батерије https://batteriesserbia.com/ у Србији.আর একটি না লিখলে নয়, তিনি ছিলেন, আমার বড় ভাই, গাইডও ফিলোসোপার। জীবনে চলার পথে উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। যা বাকি জীবনে পাথেয় হয়ে থাকবে। ২৬ জানুয়ারি রামপুর পাটোয়াীর বাড়ি মসজিদের সামনে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত উনার প্রথম জানায়ার অংশ নেওয়ার সময় বারবার একথাগুলো মনে পড়ছিল। রতন ভাইয়ের সাথে অনেক স্মৃতি যা লিখে শেষ শেষ করা যাবে না। আমাদের সবাইকে একদিন মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে। চলে যেতে হবে অনন্ত লোকে। রতন ভাই আপনি গেলেন কিছু আগে, আমরাও আসছি। আজ না হয় কাল। সবশেষ রতন ভাইয়ের জন্য আল্লাহ কাছে নাজাত চাচ্ছি। আমিন।
লেখক : বিএসজে সম্মাননাপ্রাপ্ত ক্রীড়া সাংবাদিক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, দৈনিক সুপ্রভাত ফেনী।