-মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মোর্শেদ
বিগত ২৩শে মার্চ ২০২৩ইং নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে সংলাপে আমন্ত্রন জানায়। বিএনপির নানা ক্রিয়া প্রতিক্রয়ায় এবং দেশ ব্যাপি আলোচনার পরিপেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আলম বলেছেন, বিএনপিকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়নি, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য বিএনপিকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। বিএনপি যখন নির্বাচন কমিশনের এ আমন্ত্রনকে সরকারের পরামর্শে কুটকৌশলের আশ্রয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন তখন সিইসি বলেছেন এটি সরকারের কোন কুটকৌশল নয় এবং সরকারের পরামর্শে বিএনপিকে আমন্ত্রন জানানো হয়নি, অত:পর বিএনপি নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রন নিয়ে স্থায়ী কমিটির আলোচনা ক্রমে নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রন এবং ইসির সাথে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কোন আলোচনায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সাংবাদিক সংমেলন এ্র মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। বিএনপির বক্তব্য মোটামুটি পরিষ্কার ইসির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে কোন লাভ হবে না, কারন নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কালিন সরকার গঠন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কোন ক্ষমতা নেই। প্রত্রিকায় এসেছে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন বিএনপিকে আলোচনার জন্য ইসির চিঠি মূলত: গণতান্ত্রিক বিশ্বের তথা আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন সহ অন্যদের চাপ এড়ানোর কৌশল বলে মনে করছেন।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের অনেকেরই মনে আছে বর্তমান সরকার ২০১৪ সালে যে নির্বাচন আয়োজন করেছেন তার পূর্বে তারানকো নেতৃত্বে যে সংলাপ হয়ে ছিল এবং নির্বাচন পরবর্তীতৈ আন্দোলন থেকে বিএনপি সরে গিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে এবং আওয়ামীলীগ ঐ একতরফা নির্বাচন করে পূর্নাঙ্গ মেয়াদ ক্ষমতায় থেকে যে শিক্ষা নিয়েছে এবং বিএনপির আন্দোলনের ক্ষমতা সম্পর্কে যে ধারনা লাভ করেছেন তাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৮ সালে ব্যপক সমালোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের স্বীকৃতি মতে নির্বাচনের পূর্ব রাতে বেলটে সিল মেরে নির্বাচনে জিতে পূর্ণাঙ্গ মেয়াদ ক্ষমতায় থেকে দেশিয় ও আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক দল গুলোকে কিভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হয় সে অভিজ্ঞতা অর্জন করে বর্তমান সরকার প্রশাসনের সর্বস্তরে নিজেদের কর্তৃত¦ বজায় রাখতে পেরেছেন। যার জন্যে বিএনপির ১০ই ডিসেম্বর ২০২২ কেন্দ্রিক যে সফল আন্দোলন গড়ে উঠে ছিল। মির্জা ফকরুল, মির্জা আব্বাস সহ গুরুত্ব পূর্ন নেতাদের তৎক্ষনিক আটক করে পুলিশ প্রশাসনের সাথে বিএনপিকে সংলাপে বাধ্য করে টিটি পড়ার কাছে বিএনপিকে জনসভা করতে দিয়ে অত্যান্ত যৌক্তিক কৌশলে গনতান্ত্রিক বিশ্বের সকল চাপকে একোমোডেট করে আওয়ামীলীগ রাষ্ট ক্ষমতা পরিচালনা করছে এবং বিএনপি তাদের নেতা র্কমীদের মুক্তি কেন্দ্রিক আন্দোলন সংগ্রামে ব্যস্ত হলেন। ইতিমধ্য বিএনপির শীর্ষ নেতৃবিন্দ্র জেল থেকে মুক্তি লাভ করে নতুনভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন।
অবশ্য বিএনপির আর্ন্তজাতিক উইং ভালো কুটনৈতিক সফলতা দেখানোর কারনে যুক্তরাষ্ট্র সাহ গনতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশে ২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহনমূলক, প্রতিযোগীতা মুলক ,মুক্ত ভাবে নাগরিকদের ভোটাধীকার নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্নি রাষ্ট্রের কুটনৈতিকরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে এবং সরকারের উপর এক ধরনের চাপ তৈরী করে যেন বিএনপি সহ সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। বিএনপিও দফায় দফায় বিদেশী কুটনৈতিকদের সাথে বৈঠক করেছেন এর একটা সুফল বিএনপি ইতিমধ্যে পেয়েছেন। মার্কিন রাষ্ট্র পতি জোবাইডেন স্বাধীনতা দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে যে শুভেচ্ছা পত্র দিয়েছেন তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশ গ্রহন মুলক হয় তার জন্য তিনি অপেক্ষ করছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে এলে সরকারের লাভ কি ? ্এবং বিএনপি ছাড়া নির্বাচনে কম গুরুত্বপূর্ণ দল জাতীয় পাটি সহ কয়একটি মাইক্রোস কপি দলকে নিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভের মধ্য দিয়ে আওয়মীলীগ ৪র্থ বারের মত সরকার গঠন করলে তা কি অংশ গ্রহন মুলক নির্বাচন হবে না ? দেশবাসীকে সরকার হওয়ত এক কথাতে বুঝাতে পারবেন এতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু বিদেশীরা মানতে চাইবে কেন ? তারাতো জানে বাংলাদেশের ব্যাপক জন গোষ্টি এখনও বিএনপির সাথে সম্পর্কিত। এজন্য বিদেশীরা সরকারকে চাপ দিচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারে। কিন্ত সরকার বহিবিশ্বের এ চাপকে হিসাবে আনছেন দ্ুিট কারনে প্রথমত আওয়ামীলীগ পরবর্তী সরকার গঠন করলে যেন সকল দেশের সহযোগীতা পয় এবং পরবর্তী আওয়ামীলীগ সরকারকে বৈধ সরকার হিসাবে স্বীকার করে। বিএনপির আন্দেলন সংগ্রাম সরকার কৌশলে এডিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের হিসাব থেকে সংলাপ আয়োজন না করে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারনা দিয়ে বিএনপি কে পরর্বতী নির্বাচন নিয়ে সংলাপের আমন্ত্রন জানানো হয়েছে।
বিএনপি বলছে, নির্বাচন কালিন সরকার গঠন তাদের মুল দাবী নির্বাচন কমিশনের সে ক্ষমতা নেই বিধায় তারা ইসির সাথে সংলাপে যাচ্ছেনা। রাজনিতীতে অভিজ্ঞতা সম্পূর্ন আওয়ামীলীগ জাতিসংঘ সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও অন্য দেশকে বলার সুযোগ পাচ্ছে- বিএনপি সংলাপ চায় না তারা সংঘাত চায়। আওয়ামীলীগ আন্তরিক চেষ্টা করছে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহনমূলক করার জন্য, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাতে সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের কিই বা করার আছে ? আপতত দৃষ্টিতে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের যে কোন ছাত্রই বলবেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান তাই বলে।
বিএনপি কি তৃতীয় সারির ডেলিগেট পাঠিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নিয়ে বলতে পারতো না সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য অপরিহায্য নির্বাচন কালিন সরকার গঠন তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে তারা পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে ইসির সাথে সাংলাপ করতে পারছেনা ? এতে তো অন্তত আওয়ামীলীগ বিএনপিকে সংলাপ বিরোধী বলে প্রচার দিতে পারতো না। বিএনপির রাজনীতি বিশ্লেষন করার খানিকটা কঠিন জানিনা তাদের সংলাপ বর্জন হয়ত ভিন্ন কোন কৌশল হইতে পারে। তবে এটুকু বুঝা যাচ্ছে সরকার দৈনিক প্রথম আলোর সাভারের এক সংবাদকর্মীর একটি অনলাইন সংবাদ যেটি ছবির ভুলের কারনে ঐ সংবাদটি প্রত্যাহার করে নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করার পরও তাকে তৎক্ষনিক জেলহাজতে প্রেরন এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের আপত্তির পরও মতিউর রহমানের বিরু্েদ্ধ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়ের পরিষ্কার পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে সরকার কোন সমালোচনা সইবে না। যদি কেউ অতিরিক্ত সমালোচনা করে তাকে পুলিশ হত্যাকারী আরাভ খানের মত বিদেশী পাসপোর্ট দিয়ে ভিন্ন দেশে ব্যবসা করার লাইন্সে দিয়ে ম্যানেজ করতে হয়। এটি ঠিক আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরুকুশ বিজয় লাভ করে বিএনপিকে সংলাপ বিরোধী, গনতন্ত্র বিরোধী বলে প্রচার দেওয়ার উপদান সংগ্রহে নিচ্ছে। বিএনপির আন্দোলনের মাত্রা যদি তৃণমূলে কার্যকরী ঢেউ তুলতে না পারে তবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া বিএনপির স্বপ্নই থেকে যাবে।
লেখক : আইনজীবী, আজীবন সদস্য, ঢাবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান এলমনাই এসোসিয়েশন
ও সভাপতি, গর্ভারনেন্স এসোসিয়েশান, ফেনী।