মাওলানা রশিদ আহমদ শাহীন
প্রতিটা মানুষ মনের গহীনে বড় বড় স্বপ্ন লালন করে থাকে। সে লালিত স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সুন্দর একটি পরিকল্পনা। সঠিক পরিকল্পনা করতে পারলে লক্ষ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। পরিকল্পনা ছাড়া লক্ষ বাস্তবায়ন করা কখনো সম্ভব নয়। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে ক্যারিয়ার গঠন করতে হবে। ক্যারিয়ারটা শুরু করে ফেলে ছঠি কই কিন্তু এ পথে সফলতা আনতে খুব কষ্ট হচ্ছে? সমস্যাটা কোথায় বুঝতে পারছনা। সমস্যাটা হচ্ছে যে, তোমার ভিতরে তুমি। নিজেকে একটি সীমার মধ্যে আবন্ধ করে রেখেছ। জ্ঞানের সীমানাটা ও সীমিত। একটানিদির্ষ্ট বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে ক্যারিয়ারে সফলতা আনা সম্ভব নয়। সফল ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে তোমার ভিতরের তোমাকে উন্নত করতে হবে। অর্থ্যাৎ নিজেকে আত্মউন্নয়ন করতে হবে। আসুন আমরা জেনেনি ক্যারিয়ার কি ও কেন? ক্যারিয়ার প্ল্যানিং কেন প্রয়োজন?
ক্যারিয়ার কি : অভিধানিক অর্থ জীবনের পথে অগ্রগতি, জীবনায়ন, বিকাশক্রমে জীবিকা অর্জনের উপায়। ক্যারিয়ার হলো জীবন অভিজ্ঞতার সম্মনিতরূপ। যা এক জন ব্যক্তি সারাজীবন অর্জন করে। পি.এইচ কলিনের মতে ক্যারিয়ার হলো এমন একটি কাজ যার জন্য আপনাকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে এবং আপনি সারাজীবন এ ধরণের কাজ করে যাওয়ার আশা করেন। ক্যারিয়ার হলো শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে অর্জিত এমন এক কর্ম যেখানে ব্যক্তির সমগ্র কর্মজীবনে গুণগত এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত উত্তেরোত্তর সমৃদ্ধি আসে। দায়িত্বের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায় এবং জীবনযাপনে পর্যাপ্ত অর্থের নিশ্চয়তা থাকে।
তবে ক্যারিয়ার অর্জনে একটি সুস্পষ্ট ও সুউচ্চ টার্গেট মানুষের সাধনা ও গতিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। মূলত এর অভাবেই আমরা নিজেকে একটি সুন্দর পর্যায়ে উন্নীত করতে পারিনা। যে সময় পারস্য সাম্রাজ্য ছিল বিশ^ব্যাপী এক অপরাজেয় শক্তি আর মুসলমানেরা ছিল হাতেগোনা সামান্য ক’জনার মিলিত শক্তি, ঠিক সেই সময়ই মুসলিম শক্তি কর্তৃক পারস্যের পদানত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ্আল্লাহর রাসূল (সা:)। এটি একদিকে যেমন কাফেরদের হাসাহাসির কারণ হয়েছিল অপরদিকে মুসলমানদেরকে দীপ্ত সাহসী ও পরিশ্রমীকরেছিল। আর এভাবেইপরবর্তিতে পারস্য বিজয়সম্পন্নহয়েছিল। এক কাঠুরিয়ার ছেলে সুদৃঢ় স্বপ্ন দেখেছিল সে আমেরকিার প্রেসিডেন্টহবে। সাধনার বলে তিনিই হয়েছিলেন আব্রাহাম লিংকন। সুতরাং ক্যারিয়ার অর্জন বা মৌলিক সাফল্যের জন্য একটি সুস্পষ্ট ও সুউচ্চ টার্গেট নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি। বিশ^ বিজয়ী এক অনন্য বীর জুলিয়াস সিজার বলতেন ‘অধিকাংশ মানুষ বড় হতে পারেনা, কারণ সে সাহস করে আকাশের মত সুউচ্চ টার্গেটের দিকে তাকাতে পারেনা। তাই আমরা বলি “জ্ঞানের আলোয় খুঁজি দ্বার আগামীর দিন শুধু সম্ভাবনার”।
ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কেন : ভবিষ্যতে কি করতে হবে তার অগ্রিম সিদ্ধাৃন্ত গ্রহণই হল পরিকল্পনা। ক্যারিয়ার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সঠিক সময়ে বিকল্প পেশা থেকে সর্বোত্তম পেশা বাছাই করা এবং সেই পেশার জন্য কি কি যোগ্যতা, দক্ষতা লাগবে তা অর্জন করতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, তা অগ্রিম ঠিক করে রাখার নামই ক্যরিয়ার পরিকল্পনা। অদূর ভবিষ্যতে করণীয়কার্য সমষ্টির অগ্রিম সুচিন্তিত বিবরণই পরিকল্পনা। এটা আমরা কোথায় আছি এবং ভবিষ্যতে কোথায় যেতে চাই তার মধ্যকার সেতুবন্ধন।
একটা উদাহরণ দেই এ পর্যায়ে। ধর তুমিবাসেচট্টগ্রাম যাবে। এ উদ্দেশ্যে বাস স্টেশনে গিয়ে হাজির হয়েছে। ভুলবশত বা অন্য কোন কারণে জেনে না ওনি কোন বাস চট্টগ্রাম যাবে। পাশাপাশি দুটোবাস দাঁড়ানো দু’টো বাসের যে কোনটিতে উঠেই কি তুমি চট্টগ্রাম যেতে পারবে ? না পারবেনা। তোমার জীবনের ইপ্সিত গন্তব্যস্থলেও পৌঁছার ব্যাপারে একই ধরনের সমস্যায় ফেলবে তোমাকে। সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে তোমাকে এবং সঠিক সময়েই তা নিতে হবে এই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্যে। আর যদি লক্ষই ঠিক না হয়ে থাকে তবে কোথায় যাবে তুমি শেষ পর্যন্ত ? এভাবে এদেশের অধিকাংশ যুবকের ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্তহীনতা সমস্যা সৃষ্টি করছে সঠিক পেশায় পৌঁছার ব্যাপারে। তাই প্রয়োজন ক্যারিয়ার প্ল্যানিং অর্থাৎ প্রথমে পেশা নির্বাচন এবং পরে সে অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন।
পেশা নির্বাচনের উপায় : সীমিত ধারণার উপর ভিত্তি করে ক্যারিয়ার হিসেবে কোন পেশাকে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা নেওয়া উচিত নয়। কাঙ্খিত পেশাটি ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় স্থান দেওয়ার পূর্বে সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পঠন-পাঠন এবং পরীক্ষা খুবই জরুরী। তুমি যদি হতে চাও জজ, ব্যাংকার, গবেষক, ইসলামী স্কলার, সাংবাদিক, আইনজীবি, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, আলেম তাহলে নিজেকে গড়ে তুল দক্ষ নাগরিকে।
পাঠে বৈচিত্র আনো : তুমি একটা কার্যপ্রণালী তৈরি করবে। সেখানে বিভিন্ন বিষয় থাকবে। মাঝে মাঝে ক্লান্তিবোধ হলে পাঠ-পরিবর্তন করবে। ধরো, তুমি ইংরেজি পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে। তখন বাংলাবা আরবি সাহিত্য নিয়ে বসবে। এই পাঠ-পরিবর্তন পূর্বোক্ত ক্লান্তি দূর করতে তোমাকে সাহায্য করবে।
পড়ার কলা-কৌশল : পড়ার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিকে আমি সব চেয়ে বেশি কার্যকর বলে মনে করি তাহল, পুরো বইয়ের উপর প্রথমে একবার দ্রুত নজর বুলাবে। তারপর ধীরে সুস্থে প্রত্যেকটি পরিচ্ছেদকে বুঝে বুঝে পড়বে। কখনও ভয় পাবেনা। পরীক্ষা ভীতি মেধাহীনতা কিংবা অলসতা বা ভীরুতার কারণে হয় না। বরং ভিন্ন কিছু কারণে অনেকসময় এমনটা হয়ে থাকে।
স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল ভেবোনা : অনেক ছাত্র পরীক্ষার হলের সামনে দাঁড়িয়ে পুরো বইয়ের বিষয়বস্তকে ব্রেনে উপস্থিত করার চেষ্টাকরে। যদি কোন বিষয় স্মরণ করতে না পারে তখন সে ভাবে, আমি পড়াশুনা ঠিকমতো মুখস্ত করতে পারি নাই। এতে করে তার ভেতর এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয় এবং সে উৎকণ্ঠাবোধ করে। অথচ বাস্তবতা হল, প্রত্যেকটা বিষয় জানা থাকলেও একসাথে সেগুলো মনে করতে পারা অনেকটাই দুঃসাধ্য। প্রতিটাপাঠ শেষ করার পর তুমি সামান্য বিশ্রামনাও।
সফলতা প্রার্থনা করো : পরিপূর্ণ যোগ্যতা অর্জন এবং নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণের পর আল্লাহর প্রতি পূর্ণ মনোনিবেশ করে প্রার্থনা করো এভাবে- হে আমার রব, আমি সাধ্যানুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে আরো অনেক বিষয় রয়ে গেছে যা আমি সম্পাদন করতে পারি নাই। আপনিই তা করে দিতে সক্ষম। সুতরাং আপনি আপনার ক্ষমতা বলে আমার জন্য সফলতার ফয়সালা করুন। আমার উত্তরপত্র যাতে এমন পরীক্ষকের হাতে না পড়ে যিনি পাথরমনা হওয়ার দরুন শিথিলতা এড়িয়ে চলেন কিংবা অমনোযোগী হওয়ার দরুন ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করেন না অথবা অসন্তুষ্ট কিংবা ক্লান্ত হওয়ার দরুন উত্তরপত্রে যথাযথ নাম্বার প্রদানে সক্ষম হননা।
লেখক : অধ্যক্ষ, তাযকিয়াতুল উম্মাহ মডেল মাদ্রাসা, ফেনী।