দৈনিক ফেনীর সময়

সততা-ন্যায়ের মানদন্ডে শৃঙ্খলিত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে রোজার ভূমিকা

সততা-ন্যায়ের মানদন্ডে শৃঙ্খলিত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে রোজার ভূমিকা

রহমত, বরকত এবং নাজাতের অফুরন্ত সওগাত নিয়ে প্রতিবছর মুসলিম বিশ্বে রমজান মাস আসে। রমজান মাস মুসলমানদের নিকট প্রধান ইবাদতের ও ধর্মীয় তাৎপর্যপূর্ণ মাস। এ মাসে আল্লাহতায়ালা বিশ্ববাসীর হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করেছেন মহাগ্রন্থ আল কুরআন।

এই কুরআন হলো গোটা বিশ্ববাসীর হেদায়াতের মূলমন্ত্র। মানবজাতির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনার সুনির্দিষ্ট সমাধান রয়েছে এই গ্রন্থে। রমজান মাসে একটি বিশেষ রাত রয়েছে যা শবে ক্বদর হিসেবে পরিচিত। পবিত্র কুরআনে এই রাতকে আল্লাহ তায়ালা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলেছেন। মূলত এই রাতে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল বলেই এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। রমজান মাসে ত্রিশদিন সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রোজাদার একদিকে যেমন আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহান সুযোগ পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে দিনের বেলায় পানাহার, কামাচার, ব্যভিচার থেকে শুরু করে যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত হয়ে আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের সুযোগ পাওয়া যায়। রমজান মাসে একজন রোজাদার রোজা রাখার কারণে অসহায় গরিব মনুষের ক্ষুধার জ্বালা বুঝতে পারে। লোভ, লালসা, হিংসা, মিথ্যাচার, সুদ, ঘুষ দুর্নীতিসহ প্রভৃতি নানা রকম অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচানোর দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। দীর্ঘ ত্রিশদিন ধারাবাহিকভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি জন্য যে মুসলিম সিয়াম সাধনা করেন বছরের বাকি এগারো মাস তার জন্য সততার উপর চলা সহজ হয়ে যায়। কারণ, সিয়াম সাধানার মাধ্যমে প্রকৃত রোজাদার কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। নারী, মদ,জুয়া, মিথ্যা, লোভ, হিংসা, অহংকার, দাম্ভিকতা, সুদ-ঘুষ, ঝগড়া-বিবাদ, প্রতারণা, চুরি, ডাকাতি, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, বেহায়াপনাসহ যাবতীয় অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকার প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। সমাজের বঞ্চিত, দুঃখি, অনাহারী মানুষের মর্মব্যথা বুঝে। আল্লাহর নির্দেশিত নিয়ম মেনে রোজা পালনকারী যখন কোন জনপদের প্রতিনিধি নিযুক্ত হন তখন তিনি উক্ত জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধনে নিজেকে নিবেদন করেন। তার পক্ষে অন্যায়-অবিচার, জুলুম শোষণের মতো গর্হিত ও নীতিহীন কাজকে কোনভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব হয় না। সততার উপর অটল থেকে তিনি তার শাসনকাজ পরিচালনা করে থাকবেন এমনটাই স্বাভাবিক।

অন্যদিকে যারা ব্যক্তিগত জীবনে পাপাচারে নিমজ্জিত থাকে এমন জনপ্রতিনিধিরা যেকোন জনজীবনে দুর্ভোগ বয়ে আনেন। গুম, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির যাঁতাকলে পড়ে তখন জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠে। প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও জ্ঞানসম্পন্ন সকল মুসলিমের ওপর রমযানে পূর্ণমাস রোজা রাখা ফরজ। নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষ ইসলামের এই বিধান অবধারিত। পবিত্র এ মাসে মুসলমানদের জন্য রয়েছে রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের মতো নেয়ামত। আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করে উদ্দেশ্যহীনভাবে কোন গাইড লাইন ছাড়া ছেড়ে দেননি। পৃথিবীতে একত্ববাদের জয়গান ঘোষণা করে মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করার নিমিত্তে মানব জাতির সৃষ্টি। তাই সততা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে জীবন অতিবাহিত করার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় বিধি নিষেধ আরোপ করেছন। এই বিধি নিষেধ যারা মনে চলবে তারা পৃথিবীতে সম্মানজনক জীবন যাপন করবে এবং মৃত্যুর পর অনন্তকাল জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত ভোগ করবেন। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের সুশৃঙ্খলিত জীবনধারণের জন্য কিছু মৌলিক ইবাদত অপরিহার্য করে দিয়েছেন যেমন- নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত। এগুলোর মধ্যে রোজা স্বয়ং আল্লাহরর জন্য। এর বিনিময় আল্লাহ নিজের হাতে দিয়ে থাকেন। ইবাদতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ফজিলতময়, ত্যাগের এবং কষ্টকর হলো পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনা। বাস্তবিক অর্থেই এ মাসে ঈমানদারদের জন্য রয়েছে কঠোর নিয়ম পদ্ধতি। যা অবলম্বনের মাধ্যমে বান্দার মনে আল্লাহভীতি জেগে উঠে। রোজা পালনকারীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যদি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি না হয় তাদের উদ্দেশ্য মহানবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করতে পারলো না তার শুধু খানাপিনা পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই।

রোজা ফরজ করার পেছনে আল্লাহপাক তাঁর উদ্দেশ্যও বলে দিয়েছেন। উদ্দেশ্য হলো এই যে, রোজা রাখার মধ্য দিয়ে মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করা। আল্লাহ মানুষকে কেবল তাঁরই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইবাদত করার অর্থ হলো আল্লাহ যে কাজ করতে আদেশ করেছেন তা সম্পন্ন করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। আল্লাহর হুকুম পালনের নামই হলো ইবাদত। আল্লাহ এই বিশ্বজাহানের শাসক, বিচারক এবং পালনকর্তা। তিনি চান যে তাঁর সাম্রাজ্যে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকুক এবং সকল মানুষ সুখ-শান্তি-স্বস্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে জীবনযাপন করুক। মানবজাতির জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি তাঁর পক্ষ থেকে নবী-রসূল পাঠিয়েছেন এবং মানব জাতির জন্য চিরস্থায়ী সংবিধান হিসেবে মহাগ্রন্থ আল কোরআন দান করেছেন। নাবী রাসুলদের অবর্তমানে মানুষের মধ্য থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিগণ তাঁর পক্ষে সমাজে এই বিধান কার্যকর করবেন। এটা মহান আল্লাহ নির্দেশ। তিনি পবিত্র কুরআনে এই ঘোষণা দিয়েছন। মানবজাতিকে প্রতিনিধির মর্যাদা দিয়ে তাদের উপর সুমহান আমানত হিসেবে এ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তাঁর বিধানে মানবজাতির জন্য যা কল্যাণকর তা করার আদেশ দিয়েছন এবং যা ক্ষতিকর তা করতে নিষেধ করেছন।

মানুষের সুখ-শান্তি-স্বস্তি ও নিরাপত্তা ব্যহত করে এমন সকল কর্মকান্ড তিনি হারাম করেছেন এবং দুনিয়ার জীবনে হারামকে হারাম হিসেবে কার্যকর করার দায়িত্ব তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষেরই। মূলত এ দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রশক্তির উদ্ভব ঘটিয়েছে। নবী-রসূলদের দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রশক্তি নিজেদের করায়ত্তে নিয়ে সমাজে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর করার লক্ষ্যে শাস্তি বিধানের পাশাপাশি আখিরাতে পুরষ্কার ও শাস্তিদানের ঘোষণার মাধ্যমে মানুষকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভালো কাজ সম্পন্ন এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করা। আমাদের জীবনে এ শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন খোদাভীতি এবং তাকওয়া অর্জন। সেক্ষেত্রে নামায-রোজা অত্যন্ত কার্যকর প্রক্রিয়া। নামাযের উপকারিতা সম্পর্কে আল্লাহ নিজেই বলেছেন-‘নিশ্চয়ই নামায মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে’। আর রোজা মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত থাকার নামই হলো রোজা। সব পবিত্র জিনিসই রোজাদারের জন্য হালাল। কিন্তু রমযান মাসে আল্লাহপাক রোজাবস্থায় তা হারাম করে দেয়ায় ভোগের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেবল তাঁরই ভয়ে ভোগ-বিলাস থেকে রোজাদার বিরত থাকে।

সাহরী থেকে ইফতার এই দীর্ঘ সময় ক্ষুধা-পিপাসায় অস্থির হয়ে পড়লেও লোকচক্ষুর আড়ালেও কিছু গ্রহণ করে না। এটা এই কারণেই যে, কেউ না দেখলেও আল্লাহ দেখেন। আর এমন বিশ্বাসই সুদৃঢ় করে দেয় মুমিনের রোজা। টানা একটি মাস অন্তরে আল্লাহভীতি জাগ্রত হওয়ার এ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ একজন মুসলিম রোজার মাধ্যমে লাভ করেন। সমাজে শান্তি বিনষ্ট হয় এমন সব গর্হিত কাজ পবিত্র ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে না। এর থেকে বিরত থাকার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা মাহেরমজান মাসের মতো বরকতময় মাসে রোজা রাখা অবধারিত করে দিয়েছন। প্রতি বছর এ মাসটি ফিরে ফিরে আসে। এর উদ্দেশ্য হলো এমাসে থেকে শিক্ষা নিয়ে বাকি সময় যেন শৃঙ্খলিত জীবনযাপন করা যায়।

রমজান মাস সংযমের মাস। অন্য সময়ের মতো রোজা অবস্থায়ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর এমন সবকিছু আল্লাহ হারাম করেছেন। সুদ-ঘুষ, মদ-জুয়া ও সকল নেশাজাতীয় দ্রব্য, জিনা-ব্যভিচার ও সব ধরনের অশ্লীলতা, ওজনে কম-বেশি করা ও ভেজাল দেয়া, ধোকা-প্রতারণা, ওয়াদা-প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ ও কারো আমানত খেয়ানত, ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি-কাটাকাটি, গুম-খুন, চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি, সবধরনের জুলুম-নির্যাতন ও অসদাচরণ সবই নিষিদ্ধ।

কেউ ঝগড়া করতে চাইলেও একজন রোজাদারের জবাব হবে -ভাই, আমি রোজাদার। এইভাবে রোজা মানুষকে ভদ্র ও মার্জিত ব্যবহার শেখায়।ইসলাম নামায-রোজাসহ যাবতীয় ইবাদতের মাধ্যমে মানুষের বিশ্বাসকে শাণিত করতে চায় যাতে কারো প্রলোভন বা ভয় ছাড়াই সকল পাপাচার থেকে দূরে থাকতে পারে। আল্লাহর ভয় ও সন্তুষ্টির লক্ষ্যে যারা নামায-রোজা আদায় করে, তারা নিঃসন্দেহে সৎ লোক এবং সমাজিক জীবনে সৎ মানুষ হিসেবে সমাজের কল্যাণ কামনা করে। জাতিরাষ্ট্র তাদের থেকে কেবল ভালো কিছুই পেয়ে থাকে। রোজা একজন রোজাদারকে সকল প্রকার মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। ‘রসূল (সা) বলেছেন-‘রোজা রেখে কেউ যদি মিথ্যা ও মন্দ কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে না পারে, তার রোজায় ক্ষুদার্ত-পিপাসায় কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই জোটে না’। নামাযের বিষয়েও তিনি বলেছেন-‘যে নামায মানুষকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে রাখে না, সে নামায আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে দেয়’।

আজ দুর্নীতিতে আমরা আকণ্ঠ নিমজ্জিত। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি বিরাজমান। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারে আমলা পর্যায়ের অনেকেই দুর্নীতি থেকে মুক্ত নয়। সমাজের কর্তৃত্বের আসনে যারা আছেন তাদের দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্রে অন্যায়-অপকর্ম-দুর্নীতি সাধিত হচ্ছে। মুসলিম ও পবিত্র ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের এমন অসৎ জীবন ও অসভ্যতা ইসলাম সমর্থন করে না।

দুর্নীতিবাজ ও অসৎ লোকেদের দৌরাত্ম্যে সমাজে সৎ ও ধর্মপরায়ণ লোকদের জীবন আজ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে, তারা নানাবিধ জুলুম-নির্যাতনের শিকার। গুম-খুন-ধর্ষণ হত্যাসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জনজীবন বিপর্যস্ত। কেউ আর এখন নিরাপদ নয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলিম অধ্যুষিত একটি জনপদে এমন শাসনব্যবস্থা কখনই কাম্য নয়। রোজা নৈতিকভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করে। যদি তা সত্যিকারার্থে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাখা হয়। এমাসে যথাযথ ভাবে নামায ও রোজা অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নত-নৈতিক চরিত্রের অধিকারী করে নিজেকে গড়ে তোলা সম্ভব। কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নামায ও রোজা আদায় করে থাকেন তাহলে তার দ্বারা কখনই মানুষকে কষ্ট দেয়ার মত কোন আচরণ করা সম্ভব নয়। অতএব রোজার গুরুত্ব অনুধাবন করে আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে যে, কোনভাবেই যেন রোজার ব্যর্থতা আমাদের জীবনে ধরা না দেয় অর্থাৎ নিস্ফল রোজা রাখা না হয়। কেননা রোজার আসল উদ্দেশ্য যদি ব্যর্থ হয় তবে দেহ ও মনোজগতে কোন পরিবর্তন সূচিত হবে না এবং বাস্তব জীবনে রোজার কল্যাণকর দিকগুলো সমাজে প্রতিফলিত হবে না। তাই আমাদেরকে একনিষ্ঠভাবে রোজার তাৎপর্য ও গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে যেন মহৎ উদ্দেশ্য হাছিলে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়।

ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে যেন রোজা সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা পালন করতে পারে, সেজন্য প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব হবে রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাযাতের প্রশিক্ষণ পর্বের এই মাহে রমজানে সবার অন্তরে যেন নিষ্কলুষ চরিত্রের ভিত্তি অর্জনের পাশাপাশি উত্তম নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ গড়ার মাধ্যমে উন্নত ও আদর্শ সমাজ গঠনের অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া। এ ব্যাপারে সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতি সচেতন করে রাসূল (সাঃ) একটি হাদীসে বলেন ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে তার এ কাজ তার গুনাহ মাফ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবার কারণ হবে। এ রোজাদারের রোজা রাখায় যত সওয়ার হবে, তাতে ঐ ব্যক্তির ততখানি সওয়াব হবে। এতে রোজাদারের সওয়াব একটুও কম হবে না’।

বস্তুত, মাহে রমজানে রোজার শিক্ষা নিয়ে, মেধা ও মননের উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে, ব্যক্তির চরিত্র মাধুর্য বিকাশে এবং চিন্তা ও কর্মে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে একটি শ্বাশ্বত, সুন্দর ও উন্নত আদর্শিক সমাজ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে মুসলিম উম্মাহ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। তাই আল্লাহতায়ালা রাষ্ট্রীয় জনপ্রতিনিধিদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন (নামায প্রতিষ্ঠা, যাকাত আদায়, ভালো কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে নিষেধ) তা পালনের মাধ্যমেই সম্ভব সমাজ থেকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দূর করা। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পবিত্র এই মাহে রমজানে রোজার সার্বিক শিক্ষাকে ধারণ করে কল্যাণকর আদর্শ সমাজ এবং কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র গঠনে আমরা সকলে উদ্বুদ্ধ হতে পারি।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, কবি ও প্রাবন্ধিক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!