দৈনিক ফেনীর সময়

সেই আদর্শের পথেই হোক আমাদের নবযাত্রা

সেই আদর্শের পথেই হোক আমাদের নবযাত্রা

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা. শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কল্যাণের প্রতীক। আধুনিক এ যুগে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে পরিবেশে বাস করতে চাইলে এ আদর্শ ধারণের কোনো বিকল্প নেই। পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনসহ প্রতিটি পর্যায়ে ইসলামের আদর্শ আমাদের সামনে আলোকবর্তিকার মতো। এ আদর্শ জীবন্ত। কারণ তা শুধু কথা সর্বস্ব নয়। এ আদর্শের কেন্দ্রে আছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রত্যক্ষ জীবন। এ জীবনে চর্চিত ও অবলম্বিত কর্মকে বাস্তব অনুসরণের নমুনা বানানো হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে অতি উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব : ২১)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ এই ধরাধামে প্রেরণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তা সভ্যতার ইতিহাসে নজিরবিহীন। মহানবী সা.-কে শান্তি, মুক্তি, প্রগতি ও সামগ্রিক কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত হিসেবে আখ্যায়িত করে পবিত্র কালামে হাকিমে বলা হয়েছে, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমতরূপে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭) তাই মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. বিশ্বশান্তির স্মারক হয়ে আছেন এবং থাকবেন। ‘দ্য হান্ড্রেড’ গ্রন্থে মাইকেল এইচ হার্ট রাসূল সা. কে সর্বযুগের ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছেন,’’বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে মুহাম্মদের নাম দেওয়া কিছু পাঠককে অবাক করে দিতে পারে এবং অন্যদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু তিনিই ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ উভয় স্তরেই অত্যন্ত সফল ছিলেন।

আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে বিভিন্ন গোত্রের নিকট নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি অপরাপর নবী-রাসূলদের বিভিন্ন গোত্রের জন্য বা নির্দিষ্ট এলাকার জন্য প্রেরণ করলেও রাসূল সা.কে শেষ নবী হিসাবে সমগ্র বিশ্ব মানবতার জন্য প্রেরণ করেছেন। আর সে মিশনে তিনি পুরোপুরি সফলও হয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমরা আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যই সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী বানিয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বোঝে না।’ (সূরা সাবা : ২৮)। সূরা ফাতহ-এর ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন, ‘তিনি আল্লাহ যিনি তার রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য জীবনব্যবস্থাসহ পঠিয়েছেন, যেন তিনি এ দ্বীনকে সমস্ত বাতিল ব্যবস্থা সমূহের উপর বিজয়ী করেন। আর সত্য প্রতিষ্ঠাতা রূপে আল্লাহর যথেষ্ট।’ ঘোর তমসাচ্ছন্ন মানবজাতিকে হিদায়াত ও বিশ্বময় সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসূল সা.কে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন। তিনি যে মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হবেন তা প্রাক-নবুয়াতি যুগেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। বস্তুত সমাজে অনাচার, অবক্ষয় ও অশান্তি দেখে রাসূল সা. মর্মপীড়ায় ভুগতেন এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটা যৌক্তিক উপায় খুঁজে বের করতে মনোনিবেশ করেছিলেন। মূলত নবুওয়াতের পূর্বে দীর্ঘদিন ধরে আওস ও খাজরাস গোত্রের মধ্যে বিদ্যমান যুদ্ধে তিনি মর্মাহত হন। এ রক্তক্ষয়ী ও ভয়াবহ যুদ্ধ থেকে বিবদমান গোত্রগুলোকে বিরত করে নিরীহ মানুষের জানমালের হেফাজতের জন্য উদ্যমী ও শান্তিকামী যুবকদের নিয়ে ‘হিলফুল ফুযুল’ নামে একটি শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। মহানবী প্রাক-নবুওয়াতকালীন সময়ে ‘হিলফুল ফুযুল’ নামের শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করে অন্যায়, অনিয়ম, অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। গণমানুষের কল্যাণে তাঁর গড়া স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সাংগঠনিক রীতিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। মহানবী সা. হিলফুল ফুযুল গঠনের মাধ্যমে মক্কা থেকে যাবতীয় অন্যায়-অত্যাচার, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ উচ্ছেদ করে আদর্শ সমাজগঠনে সচেষ্ট হন। ফলে সেখানে সার্বিকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।মূলত ‘হারবুল ফিজার’ই বিশ্বশান্তির অগ্রসৈনিক বিশ্বনবী সা.-এর মনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। যুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি সমবয়সী তরুণদের একত্রিত করে অন্যায় যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং প্রচলিত সমাজব্যবস্থার জাঁতাকল থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য কী করা যায় তার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। আলোচনার পর গঠিত হয় ‘হিলফুল ফুযুল’ নামক একটি শান্তি সংঘ। যা সভ্যতার ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ স্থান দখল করে আছে। এ সংঘের সদস্যগণ প্রতিজ্ঞা করলেন : ১. আমরা সমাজের অশান্তি দূর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। ২. ভিনদেশীদের ধন-প্রাণ ও মান-সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব। ৩. দরিদ্র ও অসহায় লোকদের সাহায্য করতে আমরা কখনো কুণ্ঠিত হবো না। ৪. অত্যাচারী ও তার অত্যাচারকে দমিত করতে এবং দুর্বল মানুষদের অত্যাচারীর হাত থেকে রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করব।

রাসূল সা. ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত প্রাপ্তির পর কোরাইশদের চরম বাধা, জুলুম, নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হন। তায়েফে তিনি দ্বীনে হকের দাওয়াত দিতে গিয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে রক্তাক্ত হলেও তিনি তাদেরকে অভিশাপ দেননি বরং তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন আল্লাহ তাকে বিশ্বজাহানের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। রাসূল সা. কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এবং আল্লাহর নির্দেশে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সুবিধার্থে মদিনায় হিজরত করলেন। কিন্তু তিনি শান্তি ভঙ্গের মতো কোনো উগ্রপন্থা গ্রহণ করলেন না। হিজরতের পর মদিনায় বসবাসরত মুসলমান, ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজমান কলহ-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষপূর্ণ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে তিনি একটি ইসলামী সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার সঙ্কল্প করেন। বিশ্বশান্তির অগ্রনায়ক রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, নাগরিকদের মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ নানা দিক বিবেচনা করে মদিনার সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন যা মানব ইতিহাসের প্রথম প্রশাসনিক সংবিধান ‘মদিনা সনদ’।

মহানবী সা.-এর শান্তিপূর্ণ ‘মক্কা বিজয়’ মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে অদ্বিতীয় ঘটনা। বস্তুত তিনি বিনা যুদ্ধে ও রক্তপাতহীনভাবে মক্কা বিজয় সম্পন্ন করেন। শত অত্যাচার-নির্যাতন ও যুদ্ধ করে আজীবন যে জাতি নবী করিম সা.-কে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে, সেসব জাতি ও গোত্রকে মক্কা বিজয়ের দিন অতুলনীয় ক্ষমা প্রদর্শন করে এবং তাদের সঙ্গে উদার মনোভাব দেখিয়ে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। যদি তিনি প্রতিশোধপরায়ণ হতেন তাহলে মক্কা বিজয়ের সময় ভিন্নতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারতো এবং ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো। কিন্তু তিনি সে পথে অগ্রসর হননি বরং পরম শত্রæদের ক্ষমা করে মানবেতিহাসে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। যা ইতিহাসে তাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেছে।

রাসূল সা. যে বিশ্বশান্তির মহানায়ক ছিলেন তা তার শাসনব্যবস্থার দিকে তাকালেই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি যেসব মূলনীতি গ্রহণ করেছিলেন তা তার শান্তি প্রতিষ্ঠার মিশনে খুবই সহায়ক হয়েছিল। মূলত রাষ্ট্র পরিচালনার সময়োপযোগী মূলনীতি এবং সে ক্ষেত্রেই সাফল্যই তাকে সর্বকালের ও সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। যা একবিংশ শতাব্দীতে এসেও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আদর্শ। ১. স্বরাষ্ট্রনীতি : মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. ছিলেন শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও সফল এবং সার্থক রাষ্ট্রনায়ক। তিনি সকল নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণকেই রাষ্ট্র্রের মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। উগ্রবাদ নয় বরং সার্কিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ছিল স্বরাষ্ট্রনীতির মূলকথা। যার ছিল না কোন নিয়মিত সৈন্যবাহিনী, না ছিল কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কর্মসূচি। অথচ তিনি এমন একটি আদর্শ রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করলেন, যার নিদর্শন আজও ইতিহাসে বিরল। ২. সমরনীতি : রাসূল সা. ব্যক্তিগত জীবনে নম্র স্বভাবের অধিকারী ছিলেন ঠিক, কিন্তু আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। গোটা জাতিকে মুক্তির দিশা দেওয়ার জন্য সমরনীতির কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। যা ছিল খুবই ইনসাফপূর্ণ। ৩. স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র হচ্ছে মহানবী সা.-এর বিপ্লবের একটা মজ্জাগত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পদক্ষেপ। যে সাম্যমৈত্রী ও স্বাধীনতার জন্য খ্রিষ্টান জগৎ বিপ্লবের দাবানলে বহুবার ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে, যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীর গণ রক্তক্ষরণে কলঙ্কিত, সে গণতন্ত্র স্বাধীনতার এবং সাম্যই ইসলামের ব্যবহারিক জীবনের মূলভিত্তি। এখানে আমির ফকিরের ভেদাভেদ মূলভিত্তি। ৪. পররাষ্ট্রনীতি : মহানবী সা. প্রেরিত হয়েছিলেন শান্তির বাণী নিয়ে বিশ্বে শান্তি স্থাপন করতে। তার পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র যুদ্ধ নয় শান্তি এবং কাউকে আগে আক্রমণ নয় বরং আক্রান্ত হলে তার সমুচিত জবাব। মূলত এটিই ছিল ইসলামী পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র। পারস্পরিক সহযোগিতা ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে বিশ্বের সকল মুসলমানকে এক করার উদ্দেশ্যে সর্ববিধ উপায় অবলম্বন করাই ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তব্য ও দায়িত্ব। ৫. কূটনীতি : কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে হযরত সা. সার্থক ও শ্রেষ্ঠ আদর্শের নজির স্থাপন করেছেন। আল্লাহপাক কালামে পাকে ইরশাদ করেছেন- জ্ঞান ও সদুপদেশ দ্বারা তোমার প্রভু আল্লাহর পথে আহবান কর এবং তাদের সাথে তর্ককালে উৎকৃষ্ট যুক্তির অবতারণা কর। তিনি তার কুটনীতি কর্মসূচির মাধ্যমে হুদাইবিয়া পরে মক্কা বিজয় করার মতো কৌশল মানব অবলোকনে তুলে ধরেন। ৬. অমুসলিমদের প্রতি আচরণ : অমুসলিম সংখ্যালঘুদেও প্রতি সদাচরণ রাষ্ট্রনায়ক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর অন্যতম মহান কীর্তি। অমুসলিমদের প্রতি তিনি সম্পূর্ণ মানবীয় অধিকার দিয়েছেন। কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ নয় বা ধর্ম পালনের সকল ধর্মের লোকদের সুযোগ প্রদানই রাসূলের তথা রাষ্ট্রজীবনের বড় কৃতিত্ব ছিল। মূলত রাসূল সা.-এর মহীরুহতুল্য ব্যক্তিত্ব, কর্তব্য নিষ্ঠা, দূরদর্শিতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, উদারতা, মানুভবতা সর্বোসরি গণমানুষের অধিকার রক্ষায় আপসহীনতা ও সুশাসনই তদানীন্তন বিশ্বে শান্তি ও প্রগতির সমীরণ বয়ে দিয়েছিল। যা ইতিহাসে তাকে অন্যন্য সাধারণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজজীবন ও রাষ্ট্রীয়জীবনে সমানভাবে সফল ছিলেন।

রাসুল (সা.)-এর এসব আদর্শ বিশ্বজনীন, চিরন্তন ও কালজয়ী। এর আবেদন আন্তর্জাতিক ও অসাম্প্রদায়িক। দেশ, কাল, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি ও অঞ্চল নির্বিশেষে সবার জন্যই তা প্রয়োজনীয় ও অনুসরণীয়। এ কালজয়ী ও বিশ্বজনীন আদর্শ অসত্যের ধ্রæমজাল ভেদ করে একদিন স্ব-মহিমায় প্রকাশিত হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বিচার করলে আজকে আমরা ইসলামী আদর্শের অনুসরণ তো দূরের কথা, তার থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। এর ফলে সারা বিশ্বে মুসলমানগণ একটি নিগৃহীত জাতিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বায়নের এ যুগে প্রিয় নবীর জীবনে প্রতিফলিত যে আদর্শ তার প্রতি একনিষ্ঠ থাকা কর্তব্য। মূলত আল কোরআনের যত সুন্দর, সত্য, সততা, মানবতা ও কল্যাণময় গুণাবীর কথা বলা হয়েছে তার নিখুঁত, নিখাদ ও পরিপূর্ণ চিত্রায়ন ঘটেছিল রাসুল (সা.)-এর জীবনাদর্শে। একসময় মুসলমানগণ রাসুল (সা.)-এর এই অনুপম আদর্শ অনুসরণ করে সারা পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হবার গৌরব অর্জন করেছিল। মানব সমাজের উন্নতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও চারিত্রিক সবক্ষেত্রে উত্তরণের পথই হলো অনুসরণীয় আদর্শ। আদর্শহীন কোনো জনগোষ্ঠী পৃথিবীতে সমাদৃত হতে পারে না। হতে পারে না তাদের জীবন সুন্দর ও সুস্থ। পৃথিবীর আশা করতে পারে না তাদের থেকে ভালো কিছু। তাই আজকের এই করুণ মুহূর্তে যদি মুসলমানরা ফিরে পেতে চায় তাদের হারানো অতীত, তাহলে অনুসরণ করতে হবে রাসুল (সা.)-এর পবিত্র জীবনাদর্শ। সুতরাং সেই আদর্শের পথেই হোক আমাদের নবযাত্রা। আদর্শিক প্রত্যয়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক আমাদের সমাজ ও জীবন।

লেখক : ব্যাংকার, কবি ও প্রাবন্ধিক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!