নিজস্ব প্রতিনিধি :
সোনাগাজীতে মাকে বেঁধে রেখে কিশোরী মেয়েকে গণধর্ষণের ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফেনী শহরের মিজান রোডের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি উপজেলার নবাবাপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে।
পুলিশ জানায়, ২০০৩ সালে উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের একটি এলাকায় রাতের আঁধারে মায়ের সামনে ১৩ বছরের কিশোরী মেয়েকে গণধর্ষণের মামলায় দীর্ঘ ১৯ বছর পর গত ১৪ জুলাই অভিযুক্ত তিন আসামিকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ওসমান হায়দার। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামীরা হলেন, উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, ফকির আহম্মদের ছেলে আবুল কাশেম ও পাশের সুলতানপুর গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে মো. লাতু। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। তারা তিনজনই মামলা দায়েরর পর গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ দুই বছর জেল খাটেন। পরে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। একই মামলায় মো. ফারুক নামে অপর একজন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। মামলার চারজন আসামীর মধ্যে শুধুমাত্র খালাসপ্রাপ্ত আসামী ফারুক রায়ের দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত বলেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিনজন আসামি যেকোন সময় গ্রেফতার বা আদালতে আত্মসমর্পন করলে তখন থেকে রায় কার্যকর করা হবে। উক্ত মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিনজনের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম গ্রেফতার হলেও অপর দুজন এখনও পলাতক রয়েছেন।
মামলার বিবরণ ও আদালত সুত্র জানায়, ২০০৩ সালের ১৩ মে গভীর রাতে সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের একটি বাড়ীতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে চার দূর্বৃত্ত ভেতরে ঢুকে মা ও ১৩ বছরের মেয়েকে জোর করে টেনেহেঁছড়ে বাইরে নিয়ে মাকে বেঁধে রেখে ও ছোরা ধরে হত্যার ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে মায়ের সামনেই মেয়েকে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই মেয়ের মা বাদী হয়ে পরদিন সোনাগাজী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৩) ধারায় আসামী মো. ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাশেম ও মো. লাতুসহ চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। মাত্র তিন মাসের মাথায় মামলার তদন্ত শেষে একই বছর ১৩ আগষ্ট সোনাগাজী থানার এসআই নুরুল ইসলাম আসামী মো. ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাশেম ও মো লাতুসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার শুনানী কালে ৯ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহন করা হয়।
সোনাগাজী মডেল থানার এসআই মো. মাহবুব আলম সরকার বলেন, আদালত থেকে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় আসার পর থেকে তিনি আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের খোঁজে মাঠে নামেন। কিন্তু কোথাও তাদের সন্ধ্যান পাওয়া যাচ্ছিল না। গত কিছুদিন আগে একব্যক্তির মাধ্যমে দন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমের ছবি ও মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। এরপর সম্ভাব্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ফেনীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালান। কিন্তু গণগণ স্থান পরিবর্তন করায় তাকে গ্রেফতার করা কঠিন হয়ে যায়। এরপরও তার শেষ রক্ষা হয়নি। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রবিবার বিকাল থেকে ফেনী শহরের একাধিক স্থানে ছদ্মবেশে অভিযান চালানো হয়। পরে রাতে শহরের মিজান রোড়ের একটি বাসা থেকে জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো: খালেদ হোসেন গণধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতের মাধ্যমে ফেনীর কারাগারে পাঠানো হবে।