নিজস্ব প্রতিনিধি :
সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় বন্যা প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ না থাকায় নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে একটি বেশি হলেই তিনটি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করার জন্য নদী উপকূলীয় এলাবায় বন্যা প্রতিরক্ষা বেডিবাঁধ নির্মাণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় যে কোন দূর্যোগ আসলেই উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা জালমাল রক্ষায় চিন্তিত হয়ে পড়েন।
উপজেলার সদর,আমিরাবাদ ও চর চান্দিয়া ইউনিয়নের নদী উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা বলেন, ২০০৮ সালে বড় ফেনী নদীর ভয়াল থাবায় দুটি ইউনিয়নের চর খোন্দকার, জেলেপাড়া, দক্ষিণ পূর্ব ও পূর্ব চর চান্দিয়া এলাকার হাজার হাজার ফসলি জমি, ঘর-বাড়ি ও বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে নদী ভাঙন অনেকটা রোধ হয়ে চর জেগে উঠলেও উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের ঝড় জলোচ্ছ্বাস ও দূর্যোগ থেকে রক্ষায় বেড়িবাঁধ বা বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যার ফলে বছরের পর বছর ছোট-বড় সকল দূর্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জানমাল,গবাদিপশু (গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল) ও মাঠের ফসল মারাত্মক ভাবে ক্ষতির হয়ে আসছে। তাই উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের একটাই চাওয়া উপকূলে একটি বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা।
দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া এলাকার বাসিন্দা নুর নবী বলেন, নদী ভাঙনের পর থেকে নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে একটু বেশি হলেই জোয়ারের পানি বাড়ি-ঘরে ঢুকে যায়। জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে মাঠের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ভেসে যায় পুকুরের মাছ। নদী ভাঙন রোধ হয়ে উপকূলে চর জেগে উঠেছে। এখন উপকূলীয় এলাকায় একটি বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মান করা হলে অনেক বড় ঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে বাসিন্দারা রক্ষা পাবে।
চর খোন্দকার এলাকার মৎস খামারি দেলোয়ার হোসেন বলেন, উপকূলীয় চরাঞ্চলে শতশত মানুষের মাছের খামার রয়েছে। নদী ভাঙন রোধ হলেও উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে তাদের মৎস প্রকল্পের মাছগুলো জোয়ারের পানিতে ভেসে কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে।
চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন বলেন, তার ইউনিয়নের জেলেপাড়া, পূর্ব ও দক্ষিণ চর চান্দিয়া এলাকাটি পুরোপুরি উপকূলে অবস্থিত। ২০০৮ সালে নদী ভাঙনের সময় মানুষের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমির সঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে করে সকল প্রাকৃতিক দূর্যোগে তার ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সামুদ্রিক জোয়ারের লোনা পানি অবাধে ফসলি জমিতে প্রবেশ করার কারনে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। পানিতে বেসে যায় শতশত খামার ও পুকুরের মাছ। বাড়িঘরে পানি ঢুকে মানুষকে চরম ভোগান্তি পোয়াতে হয়। এজন্য তিনি একাধিকবার উপকূলীয় এলাকায় একটি বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মানের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে এবং উপজেলার সমন্বয় সভায় বলেও কোন সমাধান পাননি।
তিনি বলেন, নদী ভাঙার জেগে উঠা চরের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দিয়ে মানুষের চলাচলের জন্য একটি সড়ক নির্মাণ করে দিয়েছেন। সেটিও বন্যার পানিতে ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে। উপকূলীয় এলাকায় একটি বন্যা প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মান করা হলে যে কোন ঝড়- জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলের বাসিন্দারা রক্ষা পাবে। সে সঙ্গে গবাদিপশুগুলোও নিরাপদে থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব কেটে গেলে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের জানমালের রক্ষায় সবার সঙ্গে আলোচনা করে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।