দৈনিক ফেনীর সময়

সোনাগাজীতে বাঁধ দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না নদী ভাঙন

নিজস্ব প্রতিনিধি :

সোনাগাজী উপজেলার উত্তর ও পশ্চিম চর দরবেশ এলাকায় ছোট ফেনী নদীর ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় ৬০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি বাঁধ নির্মান করেন। কিন্তু সে বাঁধটিও এখন ভাঙনের মুখে পড়েছে। বাঁধ নির্মান করেও কোন ভাবেই নদী বাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানায়, ছোট ফেনী নদীর সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় উজানের পানির চাপে মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর দুই উপজেলার নদীর তীরে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন রোধে পাউবোসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কোন সাড়া না পেয়ে ছোট ফেনী নদীর ভাঙন ঠেকাতে উপায় না দেখে সোনাগাজীর অংশে নদীতে খুঁটি, জিও ব্যাগ, বাঁশ ও বেড়া দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয়রা একটি বাঁধ নির্মাণ করে নদীর গতি পথ পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন। তবে দুই সপ্তাহ পার না হতেই সেই বাঁধও ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে সহস্রাধিক পরিবার রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের উত্তর ও পশ্চিম চর দরবেশ গ্রামের ইতালি মার্কেট সংলগ্ন তালতলি নামকস্থানে সম্প্রতি স্থানীয়রা বিভিন্ন ভাবে টাকা যোগাড় করে এ বাঁধ নির্মাণ করে ছিলেন। স্বেচ্ছাশ্রমে দেয়া বাঁধ ও অব্যাহত নদী ভাঙনের ফলে এ জনপদের মানুষদের মধ্যে চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় আবুল বাশার বলেন, জোয়ার-ভাটার পানির শ্রোত কমাতে এলাকার প্রবাসীসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে প্রায় তিন শতাধিক মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এ কাজে সহযোগীতা করছেন।

জসিম উদ্দিন নামে একব্যক্তি বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় উত্তর ও পশ্চিম চর দরবেশ গ্রামের সহস্রাধিক লোকের পরিবার রক্ষা করতে হলে দ্রুত এ স্থানটিতে একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। নদী ভাঙনে একমাসে এ এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণের পাশাপাশি এ স্থানে যদি দ্রুত বাঁধ নির্মাণ না করে তাহলে বাকি পরিবারের ঘরবাড়ি অচিরেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

উত্তর চর দরবেশ এলাকার মাও. হোসেন আহমদ বলেন, ভাঙ্গন রোধে মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণের বিকল্প নেই। সে সঙ্গে নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ডাকাতিয়া খালের মুখে মাটি ভরাট হয়ে যাওয়ার পানি অপসারণে বিঘ্ন হচ্ছে। খালটি যদি পরিকল্পিত ভাবে খনন করা হয় তাহলে ভাঙন রোধে সহায়ক হবে।

স্থানীয় ইতালি মার্কেট সমাজের সভাপতি মাহবুবুল হক বলেন, নদী ইতালি মার্কেট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। বর্তমানে নদী ভাঙন ভয়াবহ রুপ নেওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ রাত হলে একজনও তাদের বাড়ি-ঘরে থাকেন না। যদি এখানে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয় তাহলে নদীটা অন্যদিকে প্রবাহিত হবে। বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি রক্ষা পাবে।

চর দরবেশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, চর দরবেশ ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে অন্তত শতাধিক বাড়ী নদীতে ভেঙে গেছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে ৩০হাজার মানুষের অপূরনীয় ক্ষতি হবে। স্বেচ্ছায় কাজ করেও কুল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারীভাবে বড় ধরণের কাজ না করলে কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলিনের পর শুধু চর দরবেশ ইউনিয়ন নয়, পুরো সোনাগাজী উপজেলার চার পাশে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পাউবো কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। অব্যাহত নদী ভাঙনের ফলে উপজেলার জনগণের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!