দৈনিক ফেনীর সময়

সোনাগাজীতে ৫০ বছর ধরে নৌকা তৈরি ও মেরামত করে জীবিকা চালান হালিম

সোনাগাজীতে ৫০ বছর ধরে নৌকা তৈরি ও মেরামত করে জীবিকা চালান হালিম

নিজস্ব প্রতিনিধি :

একসময় নৌকায় মাছ ধরার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এর ফাঁকে ফাঁকে আগ্রহের বশে আবুল কালাম নামের স্থানীয় এক কাঠমিস্ত্রির কাছে নৌকা বানানো ও মেরামতের কাজ শিখতে শুরু করেন। পরে নৌকা বানানো ও মেরামত করাই পেশা হয়ে উঠে আবদুল হালিমের (৬৮)। প্রায় ৫০ বছর ধরে এই পেশার মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি। প্রতি মাসে নৌকা বানানো ও মেরামত করেই গড়ে তাঁর আয় হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। আবদুল হালিম সোনাগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চর খোন্দকার গ্রামের বাসিন্দা।

সোমবার দুপুরের দিকে উপজেলার মুহুরী প্রকল্প এলাকায় গিয়ে বড় ফেনী নদীর তীরে দেখা যায়, আবদুল হালিম একটি মাছ ধরার নৌকা মেরামতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ওই নৌকার পাটাতনে কাঠ লাগানো এবং ছিদ্র মেরামতের কাজ করছেন তিনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আলাপ হয় আবদুল হালিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, নদী ও সাগরে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এই সময়ে অনেকেই নৌকা মেরামত করেন। তিনি এরই মধ্যে ১০-১২টি নৌকা মেরামতের কাজ পেয়েছেন।

আবদুল হালিম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় দম ফেলার ফুরসত পাওয়া যায় না। খুব ভোরে তিনি কাজ শুরু করতে হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা কাজ করি।’

আবদুল হালিম যে স্থানটিতে নৌকা মেরামত করছিলেন এর পাশেই একটি নৌকায় আলকাতরা লাগিয়ে শুকানো হচ্ছে। ওই নৌকার মালিক জয়নাল আবেদীন বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই নৌকাটি মেরামত করার জন্য দৈনিক ১৮০০ টাকা মজুরিতে আবদুল হালিমের সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। মোটামুটি চার দিন কাজ করেই তার নৌকার মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। এখন তিনি নিজেই নৌকায় আলকাতরা লাগিয়ে রোদে শুকাচ্ছেন।

স্থানীয় জেলে ও নৌকার মালিকেরা জানান, আবদুল হালিমের কাজের মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় বেশির ভাগ নৌকা মেরামতের জন্য তার ডাক পড়ে।

স্থানীয় জেলে প্রিয় লাল জলদাস বলেন, তিনি ছোটকাল থেকে আবদুল হালিমকে নৌকা ও ট্রলার তৈরি এবং মেরামতের কাজ করতে দেখে আসছেন। নিখুঁতভাবে কাজ করায় তিনি নৌকা মালিক ও জেলেদের কাছে ভালোভাবে পরিচিত।

চর খোন্দকার জেলেপাড়া এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ট্রলার মালিক সফি উল্যাহ বলেন, আবদুল হালিম একজন দক্ষ ও ভালো মানের নৌকা তৈরির কারিগর। নিয়মিত নৌকা ও ট্রলার তৈরি এবং মেরামতের কাজ করে আসছেন কয়েক যুগ ধরে।

জানতে চাইলে আবদুল হালিম বলেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে নৌকা মেরামতের কাজ কমে যায়। তখন গাছ কিনে নৌকা তৈরি করে জেলে ও মৎস্যজীবীদের কাছে বিক্রি করেন তিনি। এতে ভালো আয় হয় তার। পরিবারের খরচ মিটিয়ে সঞ্চয়ও করতে পারেন। নিয়মিত পরিশ্রম করার কারণে তাঁর স্বাস্থ্যও ভালো রয়েছে।

পরিবারে নয়জন সদস্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের দেশ-বিদেশে ব্যবসা ধরিয়ে দিয়েছি। তাদের নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আমি নিজেও ছেলেদের কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নিই না।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!