আমজাদ হোসাইন :
সোনাগাজীতে করোনা যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী মিজানুর রহমান (৩৫)। মৃত্যুর ২ বছর ২ মাস পরও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আশ্বাস ছাড়া কিছুই পায়নি মিজানের পরিবার। দুই শিশু সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন মিজানের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। এবারও ঈদে মিজানের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোন উৎসবের আমেজ নেই।
মিজানুর রহমান উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর এলাকার মকসুদ আহম্মদের ছেলে ও স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ১০ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফেনীর একটি হাসপাতালে মারা যান।
মিজানের সহকর্মীরা বলছেন, করোনার সংকটময় পরিস্থিতিতে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেলেও সোনাগাজীতে মিজানের মৃত্যুর ঘটনাটি উপজেলায় একমাত্র ঘটনা। মৃত্যুর পর মিজানের পরিবারকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারী তহবিল থেকে পাঁচহাজার টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। এরপর সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বা প্রণোদনা পাওয়া কথা থাকলেও মিজানের পরিবার কিছুই পায়নি। স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানের ভাগ্যে জুটেনি কোন সহায়তা। ঈদেও কেউ তাদের খোঁজ নেয় না। গত কয়েকদিন আগে উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর এলাকায় বাড়ির সামনে দেখা হয় মিজানের ছোটভাই স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব খাঁনের সঙ্গে। তখন মিজানের ছেলে মিনহাজুর রহমান (১০) তাঁর সঙ্গে ছিল।
মিনহাজ জানায়, তার আম্মু দুই বছর বয়সী ছোট বোনকে কোলে নিয়ে ঘরের সামনে বসে আছেন। মিজানের কথা বলতে আইয়ুব খাঁনের মন খারাপ হয়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের মুখের হাসিটা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, তাঁরা তিন ভাইয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী মিজান ছিলেন মেঝো। এমন সময় চাচা-ভাতিজা দুজনের চোখের পানি টলমল করছে।
আইয়ুব খান বলেন, ভাইয়ের কথা মনে হলে তার মা-বাবা দুজনই কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ্য হয়ে যান। মিজানের স্ত্রীও দুই সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। তিনি তাদের সব সময় সাহস দিয়ে মনবল শক্ত রাখতে চেষ্টা করেন। অভাব-অনটনের মধ্যেও বর্তমানে মিজানের স্ত্রী-সন্তানদের তিনি দেখাশোনা করছেন। বিশেষ করে ঈদের দিনে মিজানের কথা ভেবে তাদের পরিবারে আনন্দ বিষাদে রূপ নেই।
আইয়ুব খান আরও বলেন, মৃত্যুর পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মিজানের সকল কাগজপত্র ও পরিবারের সদস্যদের নামসহ বেশ কিছু তথ্য চাওয়া হয়। তিনি সব তথ্য প্রস্তুত করে উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগে জমা দেন। এরপর পর থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি। করোনার সঙ্গে মিজানের জন্ডিস ও লিভার সমস্যা দেখা দেয়। ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকা খরচ করেও তাঁকে বাঁচাতে পারেননি।
মিজানুর রহমানের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বলেন, তাদের পরিবারে কোন ঈদের আনন্দ নেই। মানুষের সেবা করতে গিয়ে তার স্বামী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর দীর্ঘ ২ বছর ২ মাস পরও এর কোন প্রতিদান পাননি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও কেউ কোন খোঁজ নেয়নি। দুইটি ছোট বাচ্চা নিয়ে কীভাবে বেঁচে আছি তাও কেউ জানে না। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পায়নি। দুই সন্তানকে মানুষের মত মানুষ গড়ার লক্ষে মিজানের অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন তিনি পূরন করতে পারবেন কিনা বলতে পারেন না। সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি সবার কাছে স্বামীর জন্য দোয়া চেয়েছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা উৎপল দাশ বলেন, মিজানের মৃত্যুর পর তিনি বাড়িতে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে তার সমস্ত কাগজপত্র তৈরী করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত কোন সাড়া পাননি। কোনো ধরনের সাহায্য এলেই তা মিজানের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।