দৈনিক ফেনীর সময়

স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ এক গর্বিত অভিযাত্রা

স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ এক গর্বিত অভিযাত্রা

উত্তম দেবনাথ

লাঙ্গলে এক হাত। অন্য হাত বলদের লেজে। কৃষি প্রধান বাংলাদেশের এটিই ছিল সনাতনী চিত্র। কালের ধারায় সেই পট পরিবর্তীত হয়েছে। দেশমাতা অতিক্রম করছে ডিজিটাল যুগ। পাওয়ার টিলার ট্রাক্টর সহ অধুনা প্রযাক্তি নির্ভর এখন বাংলার কৃষি ব্যব¯’া। লাঙ্গল জোয়াল যাদুঘরে ঠাঁই নিয়েছে। উদয়-অস্ত লাঙ্গল ধরে, বলদেও লেজ ম’লে – তি-তি; ঠাট্ধসঢ়;-ঠাট্ধসঢ়;; হর-র-র করে বলদকে কমান্ড পাস করে, রৌদ্রে পুড়ে; বৃষ্টিতে ভিজে, ঘেমে, নেয়ে, একসারা হয়ে জমি চষার কঠিন কর্মযজ্ঞের সেই যুগ আমরা অতিক্রম করে এসেছি। বর্তমানে পাওয়ার টিলার ট্রাক্টরে অতি সহজে স্বল্পশ্রম ও সময়ে চষে ফেলি জমি। ধান বোনা, রোপা লাগানো, মাঠে জলসেচা, ধান কাটা, ধান মাড়াই, ধান প্রক্রিয়াজাত করে চাল উৎপাদন, সবেতেই এখন প্রযুক্তির ব্যবহার – শ্রম ও সময় দুইই বাঁচিয়ে দিয়েছে। গরুর গাড়ী; পাল, বৈঠার পরিবর্তে ইঞ্জিন চালিত ¯’ল ও জলযানে পরিবহন সহজ; দ্রুততর ও শ্রম লাঘব হয়েছে।

“তোরা কে যাস রে – ভাটির গাঙ বাইয়া; আমার ভাইধনরে কইও নাইওর নিতো বইলা……” সংবাদ, তথ্য আদান প্রদানের সুদীর্ষ প্রতীক্ষা, দীর্ঘসূত্রিতা – দূত মাধ্যম অতিক্রম করে ডাকযোগে। এখন ডাকযোগ অতিক্রম করে, ফোনালাপ, ম্যাসেজ, ইমেইল, ফেইসবুক, হোয়াট্ধসঢ়;সঅ্যাপ, ইন্সট্রাগ্রাম অ্যাপস, অডিও, ভিডিও কল-এর কল্যাণে পুরো বিশ^ এখন হাতের মুঠোয় বন্দি হয়েছে। পৃথিবীর এক প্রান্তের খবর অন্য প্রান্তে নিমেষে পৌঁছে। নিকট অতীতে বৈশি^ক কোভিড অতিমারি অতিক্রম করল পৃথিবী। অনেক তাজাপ্রাণ বলীদান হলো কোভিডে। মৃত্যুর মিছল আরো দীর্ঘ্যতর হতো, যদি না তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ণ বর্তমান অবস্থানে না পৌঁছিয়ে মান্ধাতার আমলের হতো। কোভিড থেকে বাঁচার যে পরামর্শ, বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসের – তা’ নিমেষে বিশে^র একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌঁছায়ে, জনসচেতনতার কল্যাণে কোভিডের প্রমত্ত তান্ডব থেকে অল্পে রেহাই পেয়েছি আমরা।

একটা সময় ছিল যখন কোথাও যেতে হলে পদব্রজেই যেতে হতো। কিংবা নৌপথে- জলযানে। পরবর্তীতে ইঞ্জিন চালিত যানবাহন এলো – ¯’ল, জল, আকাশ ও রেলপথে। দূরযাত্রার জন্য পরিবহন ধরতে স্ট্যান্ডে, স্টেশনে গিয়ে লম্বা লাইন ধরে টিকেট করে যে সময়ের গাড়ী ঝুটতো, তাতে চড়ে তবেই গন্তব্যে যেতে হতো। ব্যাংক-বীমায় লেনদেনের বেলায়ও দীর্ঘ লাইন ধরে তবে কর্ম্ম সম্পাদন করতে হতো। একই কথা ভূমি কর; বাণিজ্যিক কর প্রদানের বেলায়ও প্রযোজ্য ছিল। সরকারের ডিজিটাল পরবর্তী স্মার্ট বাংলাদেশের যে পদযাত্রা তারই কল্যাণে বর্তমানে ট্রেনের, বাসের, টিকেট ভূমি ও বাণিজ্যিক কর এবং ব্যাংক লেনদেন কোন রূপ লাইন না ধরেই, ঘরে বসে, মুঠোফোন কিংবা কম্পিউটারের মাধ্যমে অ্যাপস্ধসঢ়; ব্যবহার করে অতি সহজেই সম্পাদন করা যাচ্ছে। অগ্রীম টিকেট কাটার জন্য স্ট্যান্ড বা স্টেশনে যেতে হচ্ছে না – রিক্সা, বাইক, সিএনজি ভাড়া দিয়ে। এতে করে সময় অর্থ শ্রম সবই লাঘব হচ্ছে। হচ্ছে সাশ্রয়। সেই সময়ে অন্যকাজ করে বাড়তি আয় হচ্ছে। আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমনতর সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে এখন আর প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে না। মার্কসীট বা সার্টিফিকেট উত্তোলনে কোথাও যেতে হচ্ছে না। ঘরে বসেই এসব এখন করা যাচ্ছে অনায়াসেই। অনলাইন মার্কেটিং সহ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখন ঘওে বসেই ভাড়া গাড়ী ডাকা, এ’সবই এখন মোবাইল অ্যাপস-এ এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে অতি সহজেই সম্পাদন করা যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই – গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল সহ জীবন যাপনের নিমিত্তে অত্যাবশ্যকিয় সকল ক্ষেত্রেই ক্রমাগত ভাবে এই সুযোগের বাতায়ন খুলে যাচ্ছে। নুতন দিগন্তের হাতছানি এখন নাগরিক জীবনে।

কিন্তু আমরা কয়জন সমর্থ্য হচ্ছি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুবিধা ভোগ করতে? এখন ব্যাংকে না গিয়ে, যাচ্ছি দোকানে। স্টেশনে, স্ট্যান্ডে, স্কুল, কলেজে, ভূমি অফিসে লাইন না ধরে – লাইন ধরছি কম্পিউটার দোকানে! কেন? কারণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা স্মার্ট হলেও আমরা আমজনতা আজো স্মার্ট হয়ে উঠেতে পারিনি। সুযোগ সুবিধা গুলো কাজে লাগিয়ে কর্ম সম্পাদনে আমরা এখনো পারদর্শি হয়ে উঠতে পারিনি। লাঙ্গলের হাল ও বলদের লেজ মলা ছেড়েছি কিš‘ যে বা যারা পাওয়ার টিলা, ট্রাক্টর বা এমনতর প্রযুক্তির মালিক, তাদেরকে অর্থ যোগাতে হচ্ছে। পরিবর্তিত আদল বদলের উপযোগী করে আমরা আমাদেরকে তৈরী করে নিতে পারিনি আজও। তাইতো এখন চলছে সংক্রান্তি সংকট। রাতের আঁধার ছেড়ে প্রভাত আলো ধরা দিয়েছে জাতীয় জীবনে। কিন্তু অন্ধকারে হাতড়ে চলার হাতুড়েপনা ছেড়ে মুক্তির মিছিলে সামিল হওয়ার যোগ্যতা আছে আমাদের কয় জনের?

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাতে কলমে ছাত্রদের সব তালিম দিয়ে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে অতিঅবশ্যই গড়ে তুলতে হবে। তাতে কিছুটা সময় লাগবে। তা ঠিক। কিন্তু একটা সময়ে আগামী প্রজন্ম তাদের শিক্ষাবস্থায়ই হাতে কলমে নাগরিক সুবিধার সদ্ব্যবহারের শিক্ষা গ্রহন করবে। সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত হবে এই হাতে কলমে স্মার্ট নাগরিক গড়ার পাঠসূচী। আমরা যারা বর্তমান প্রজন্ম, আমাদের মধ্যে যারা স্মার্ট তারা এখনই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু বড় একটি সংখ্যাই সে অর্থে স্মার্ট হওয়ার অবস্থানে হয়তো নেই। নেই সে মানসিকতাও। বাল্যকাল থেকে মান্ধাতার চলন বলনের অভ্যাস যা মজ্জাগত হয়ে গেছে, তা’ থেকে বেরিয়ে সহজে স্মার্ট হতে স্বাাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে, জাতীয় জীবনে তার সুফল পেতে হলে, অতি অবশ্যই প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক, উচ্ছ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, টোল সর্বক্ষেত্রেই স্মার্ট প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারে স্মার্ট নাগরিক গড়ার যোগ্য পাঠসূচি সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এই বিষয়ের যোগ্য শিক্ষাদানের উপযুক্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। তবেই জাতি, জনতা, রাষ্ট্র স্মার্ট হবে এবং স্মার্টের সুফল ভোগ করে জাতীয় জীবনে প্রভুত উন্নয়ন সাধনে সমৃদ্ধি অর্জনের সার্থকতা লাভ করবে। এর জন্য আমাদের প্রত্যেকের মন মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে স্মার্ট হওয়ার অনুকলে। তবেই জাতীয় জীবনে স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১-এর স্বপ্নময় অভিযাত্রা হবে সফল। নন্দিত গর্বিত হবে দেশ জাতি। কাঙ্খিত সুফলের ভাগিদার তবেই আমরা হতে পারবো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!