নাজমুল হক :
স্রষ্টার নির্দেশিত মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে মানব সভ্যতা গড়ে উঠেছে নারী এবং পুরুষ দুটো সভ্য মানুষের বসবাসের কারণে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র দুটো জাত নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন। এখন দেখা যায় পুরুষ এবং নারীর বাহিরে ৩য় লিংগর আগমন ঘটেছে। যাদেরকে হিজড়া বলা হচ্ছে, ওদের ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে ৩য় লিংগ বলা হচ্ছে কি? হিজড়া ডিক্লেয়ারেশন এর জন্য নারী অথবা পুরুষ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে ডাটাবেইজ তৈরি করা হলে ৩য় লিংগ থাকবে কিনা সন্দেহ আছে । সরকারের উচিৎ হিজড়া চিকিৎসার পক্ষ পালন করা এবং হিজড়া হিসেবে রাস্তাঘাটে শহরে বন্দরে চাঁদাবাজ হিজড়া দাবিদারদের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করা।
উদাহরণ : ১৯৭৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আব্দুস সামাদ চিকিৎসা গ্রহণ করে পুরুষ থেকে নারী হয়েছেন। তিনি একজন মেধাবী নারী লিডার হিসেবে এনজিও পরিচালনা করছেন।। হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরি করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসমেটকে বিয়ে করেছেন। তার একটি পুত্র সন্তান আছে। তাই হিজড়া দাবীদারদেরকে নারী বা পুরুষ ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক সাজিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা উচিত।
ট্রান্সজেন্ডার কি রূপান্তরিত লিঙ্গ : ট্রান্সজেন্ডার হল সেসব ব্যক্তি যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন হতে ভিন্ন। রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গ যদি তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে ডাক্তারি সাহায্য কামনা করে তবে তাদেরকে অনেকসময় রূপান্তরকামী নামে চিহ্নিত করা যায়। রূপান্তরিত লিঙ্গ জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গ ব্যতীত অন্য লিঙ্গ পরিচয।
রুপান্তরিত লিঙ্গ (ট্রান্সজেন্ডার) হল সেসব ব্যক্তি যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন হতে ভিন্ন, রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গ যদি তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে ডাক্তারি সাহায্য কামনা করে তবে তাদেরকে অনেকসময় রূপান্তরকামী নামে ডাকা হয়। ‘এছাড়াও রূপান্তরিত লিঙ্গ একটি শ্রেণিগত পরিভাষা: যাতে এমন ব্যক্তিদেরও যোগ করা হয় যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ তাদের জন্মগত লিঙ্গচিহ্নএর বিপরীত (রূপান্তরকামী পুরুষ বা রূপান্তরকামী নারী)। এছাড়াও এতে এমন শ্রেণীও অন্তর্ভুক্ত হয় যারা স্পষ্টভাবে নারীসুলভ বা পুরুষসুলভ নয় (জেন্ডারক্যুয়্যার বা বিচিত্রলিঙ্গ, যেমন দ্বৈতলিঙ্গ, সর্বলিঙ্গ, লিঙ্গতরল বা অলিঙ্গ)। রূপান্তরিত লিঙ্গের অন্যান্য সংজ্ঞার মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গও অন্তর্ভুক্ত থাকে অথবা রূপান্তরিত লিঙ্গকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। তবে মাঝে মাঝে, বিস্তৃত পরিভাষায় রূপান্তরিত লিঙ্গ বোঝাতে ক্রস-ড্রেসার বা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধানকারীদেরকেও বোঝানো হয়, তাদের লিঙ্গবোধ যাই হোক না কেন।
রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গ বিপরীতকামী, সমকামী, উভকামী বা নিষ্কামী ইত্যাদি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন., অথবা প্রচলিত যৌন অভিমুখিতার তকমাকে বেঠিক বা অপ্রযোজ্যও মনে করতে পারেন। পাশাপাশি, রূপান্তরিত লিঙ্গ পরিভাষাটি আন্তঃলিঙ্গ হতে সম্পূর্ণ আলাদা, যার দ্বারা এমন ব্যক্তিবর্গকে বোঝানো হয় যারা জন্মগতভাবে এমন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যা পুরুষ বা নারীর দৈহিক যৌন বৈশিষ্ট্য হতে আলাদা। অনেক ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি জেন্ডার ডিসফোরিয়ায় আক্রান্ত। এদের কেউ কেউ হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি , লিঙ্গ-নিশ্চিত অস্ত্রোপচার বা সাইকোথেরাপির মতো চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। সকল ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি এসব চিকিৎসা পছন্দ করেন না। কেউ কেউ আর্থিক বা চিকিৎসাগত কারণে এগুলো করতে পারেন না।
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি : আল্লাহতাআলা আমাদের শ্রেষ্ঠ উম্মত বানিয়েছেন, সুন্দর অবয়বে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।’ (সুরা: ত্বিন, আয়াত: ৪) এ সুন্দর অবয়ব আল্লাহ প্রদত্ত আমানত ও নেয়ামত। এতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা কিংবা শরয়ি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে এ স্বাভাবিক অবয়বে কৃত্রিম উপায়ে বিকৃতি সাধন করা শয়তানি ফাঁদ এবং চরম ঘৃণ্য কাজ। শয়তানের এই জঘন্য ফাঁদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা আগেই আমাদের সতর্ক করেছেন। এবং আল্লাহর আদেশ মানার পরিবর্তে যে শয়তানি মিশন বাস্তবায়ন করবে, সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে মর্মে সাবধান করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অভিসম্পাত করেছেন এবং সে (শয়তান) বলেছে, আমি তোমার দাসদের এক নির্দিষ্ট অংশকে (নিজের দলে) গ্রহণ করবই। এবং তাদের পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই, আমি তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। আর যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৮-১১৯)
হাদিসেও এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করা হয়েছে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটায় তাদের অভিসম্পাত করা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) এমন সব নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা অঙ্গে উল্কি আঁকে ও অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়ে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে (তিরমিজি : ২৭৮২)। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডার তথা বিশেষ অস্ত্রোপচার ও হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করে স্রষ্টার সৃষ্টিতে বিকৃতি করার বিষয়টি প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। সরকারের কাছে নানারকম দাবি উত্থাপন করছে। শুধু কর্মসংস্থানের দাবি নয়, জাতীয় সংসদে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব দেখতে চান, এমন দাবিতেও পথে নামছেন এই কমিউনিটির মানুষেরা।
ট্রান্সজেন্ডার সামাজিকীকরণে হবে ভয়াবহ বিপর্যয় ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এতে সমস্যা কী, সবাই তো আর এক রকম হয় না। ওদের সংখ্যাই বা আর কত। তারা তো আমাদের কোনো সমস্যা করছে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ইদানীং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ মানুষ নিয়ে আলোচনা হতে দেখা যায়, যাদের বেশির ভাগ তৃতীয় লিঙ্গের মনে করলেও মূলত তারা তৃতীয় লিঙ্গের নয়। বরং তারা বিশেষ অস্ত্রোপচার ও হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তি, যারা মানসিক দিক থেকে তাদের সৃষ্টিগত লিঙ্গের চেয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেশি আসক্ত ছিল। ফলে একসময় তারা অস্ত্রোপচার ও হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের দেহাবয়ব পরিবর্তন করে বিপরীত লিঙ্গের বেশ ধারণ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই মতাদর্শ পলিসি বাস্তবায়নের ফলে বিভিন্ন সামাজিক, স্বাস্থ্য এবং আইনগত সমস্যা গত কয়েক বছরে অনুধাবন করা যাচ্ছে। এটি হাজার হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গভিত্তিক সিস্টেমকে ওলট-পালট করে দিচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নানা বিতর্ক। এ মতবাদ সমাজের ভারসাম্যতা ও স্বাভাবিক রীতিকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক সামাজিক বিশৃঙ্খলা। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের তুলনায় এদের মধ্যে ১৪ গুণ বেশি আত্মহত্যা চিন্তা এবং ২২ গুণ আত্মহত্যার আশংকা থাকে। আরও নানাধরণের সমস্যার কথা বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।
ট্রান্স বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অবস্থান : বিশ্বের বিখ্যাত টেক বিলিনিয়ার ইলন মাস্ক ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। এই বিষয়ে তিনি মাঝে মাঝে সোস্যাল মিডিয়াতে পোস্ট দিয়ে পিতামাতাকে সচেতন রাখেন। এই বিষয়টির ভয়াবহতা অনুধাবন করাতে সম্প্রতি তিনি একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি (যিধঃ রং ধ ড়িসধহ) শেয়ার করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বের ১৭০ মিলিয়ন মানুষ ভিডিওটি দেখেছে। (কালবেলা: ১৫ নভেম্বর ২০২৩) স্কুলের পাঠ্যক্রমে ট্রান্সজেন্ডার বা এলজিবিটি মতাদর্শ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে গত ২০ সেপ্টেম্বর কানাডার লক্ষ লক্ষ (মিলিয়ন মার্চ) পিতামাতা রাস্তায় নেমে আসেন। (কালবেলা: ১৫ নভেম্বর ২০২৩) সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ অক্ষুণ্ণ রাখতে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো এলজিবিটির বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। এমনকি উগান্ডা পশ্চিমা ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বের ব্যাংকের ঋণ স্থগিত করার মতো অর্থনৈতিক ব্যাপারকেও উপেক্ষা করেছে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোও ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শে বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়েছে। জেন্ডার আইডেন্টিটি ইস্যুতে ইতালির সরকার পরিবর্তন হয়। সম্প্রতি হ্যাংগেরি ট্রান্সজেন্ডাদের লিগালাইজেশন বন্ধ ঘোষণা করেছে। সব ধরনের সমস্যাকে সামনে রেখে রাষ্ট্রের উচিত, এ ধরনের মতবাদ যারা লালন করে, এ মতবাদ বিস্তারে যারা সক্রিয় ভুমিকায় আছে তাদের চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। নতুবা অদূর ভবিষ্যতে এমনসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে যার সমাধান বের করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের নিকট বতমান শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে পক্ষেবিপক্ষে বিভিন্ন মতামত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পাশাপাশি কিশোর কিশোরী বা ছেলে মেয়েদেরকে যযৌন নির্যাতন, যৌন শিক্ষা, জেন্ডার, হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডার ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণের নামে গানবাজনা বিভিন্ন পশুর ডাক ইত্যাদি শিখানো হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে পারে নাই বিধায় নারী অভিভাবকরা নতুন শিক্ষানীতির প্রতিবাদ করেছে। হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিবাদ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার নতুন কারিকুলামকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য শেখানোর জন্য ধর্ম বিরোধী আগ্রাসন বন্ধ করা। ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে হিজড়া সমস্যার সমাধান করা এবং ট্রান্সজেন্ডার পাঠ্যক্রম থেকে বাতিল করা এবং যৌন শিক্ষা সিলেবাস থেকে বাতিল করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোরদাবি জানাচ্ছি।
লেখক : গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।