সময় রিপোর্ট :
ই-জিপি বা সরকারি ক্রয়-প্রক্রিয়ায় সার্বিকভাবে ১৯ শতাংশ ক্ষেত্রে একটি মাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া দরপত্রের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিনা প্রতিযোগিতায় এভাবে ৬০ হাজার ৬৯ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ই-জিপির গত ১১ বছরে তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছে টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এর মধ্যে একক দরপত্র প্রবণ জেলা হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ফেনী ও নোয়াখালী জেলা।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯২টি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে একক দরপত্র পড়ার হার ৭৫ ভাগের বেশি এবং ৪১৬টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের ৭৫ ভাগই পেয়েছে একক দরপত্রের মাধ্যমে। ফেনী ও নোয়াখালী সবচে বেশি একক দরপত্র প্রবণ জেলা, এই দুই জেলায় প্রতি দুইটি কার্যাদেশের একটি একক দরপত্র। এরপরেই রয়েছে কুমিল্লা ও নারায়নগঞ্জ, এই দুই জেলায় প্রতি তিনটির একটি কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে একক দরপত্রের মাধ্যমে। এই তালিকায় ঢাকা জেলার অবস্থান পঞ্চম। একক দরপত্র পড়ার হার ২৮ ভাগের বেশি। জেলাগুলোর মধ্যে একক দরপত্র সবচে কম পড়ে শরিয়তপুরে, প্রায় ৫ ভাগের কম; এরপরই রয়েছে ঠাকুরগাঁও এর অবস্থান, ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
টিআইবির ‘বাংলাদেশে ই-সরকারি ক্রয়: প্রতিযোগিতামূলক চর্চার প্রবণতার বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। টিআইবি বলেছে, সরকারি ক্রয়-প্রক্রিয়ায় বড় ঠিকাদারেরা ক্রমাগত বেশি কাজ পাচ্ছে। যদিও ই-জিপির মূল উদ্দেশ্যই ছিল, এই বাজার দখলকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা।
গতকাল সোমবার টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি খাতে স্বচ্ছতা ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে ই-জিপি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। নতুন এই প্রক্রিয়ার ফলে ক্রয়প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে, ব্যয় কমেছে। তবে দরপত্র জমা ও কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাজার দখল ও একচেটিয়াকরণ অব্যাহত আছে। ফলে ই-জিপির মূল লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশ ক্রয় হয়েছে একক দরপত্র বা কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা ছাড়াই। আমরা মনে করি, সরকারি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ত্রিমুখী যোগসাজশের ফলে ই-জিপির প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
টিআইবির এই গবেষণায় ই-জিপি পোর্টালে থাকা ২০১২-২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকা ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৩৩টি ই-কার্যাদেশের সবগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।