Untitled-1

পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

বাংলা সংস্কৃতিতে পান্তা ভাতের পরিচিতি বহু পুরোনো। গ্রামীণ জীবনে এটি বিশেষত গ্রীষ্মকালে সকালের খাবার হিসেবে জনপ্রিয়। মূলত রাতের অতিরিক্ত ভাত ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তৈরি হয় পান্তা ভাত। যদিও শহরাঞ্চলে এটি এখন নিয়মিত খাদ্য তালিকা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে, তবে বৈশাখী উৎসব বা নানা লোকজ উৎসবে এর কদর এখনও অটুট।

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ পান্তা ভাত

পুষ্টিবিদদের মতে, পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ সেদ্ধ ভাতের তুলনায় অনেক বেশি। এতে রয়েছে নানা রকমের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যেমন:

  • আয়রন
  • ক্যালসিয়াম
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • পটাশিয়াম
  • জিঙ্ক
  • ফসফরাস
  • ভিটামিন বি-৬ ও বি-১২

গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে ১০০ গ্রাম সাদা ভাতে আয়রনের পরিমাণ প্রায় ৩.৫ মিলিগ্রাম, সেখানে একই পরিমাণ পান্তা ভাতে থাকে প্রায় ৭৩.৯ মিলিগ্রাম আয়রন। তেমনি ক্যালসিয়ামও বাড়ে কয়েকগুণ—সাধারণ চালের ভাতে যেখানে ২১ মিলিগ্রাম থাকে, সেখানে পান্তায় থাকে প্রায় ৮৫ মিলিগ্রাম।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, লাল চাল দিয়ে তৈরি পান্তা আরও বেশি পুষ্টিকর। কারণ লাল চালে ফাইবার ও মিনারেলের পরিমাণ সাদা চালের তুলনায় অনেক বেশি।


পান্তা ভাত কেন স্বাস্থ্যকর?

পান্তা ভাতকে শুধু প্রচলিত লোকজ খাবার বললে ভুল হবে, এটি আসলে এক ধরনের প্রোবায়োটিক খাবার। দীর্ঘক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখায় এতে তৈরি হয় ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া, যা হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

এর আরও কিছু উপকারিতা হলো:

  • অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে
  • হজমশক্তি উন্নত করে
  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা কমায়
  • শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে
  • ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
  • শরীরে পানির ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে
  • ভিটামিন বি-১২ এর জন্য ক্লান্তি দূর করে, শরীর চনমনে রাখে
  • ঘুমজনিত সমস্যায় সহায়ক হিসেবে কাজ করে

পুষ্টি বাড়াতে কী খাবারের সঙ্গে খাবেন?

পান্তা ভাত একাই একটি সম্পূর্ণ খাবার হলেও, এর সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান যোগ করলে পুষ্টিমূল্য আরও বেড়ে যায়। যেমন:

  • ইলিশ মাছ
  • শুঁটকি ভর্তা
  • আলু, বেগুন, ধনেপাতা, মরিচ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি ভর্তা
  • ডালভাজি, বেগুনভাজি, পুঁইশাক ভাজি ইত্যাদি

এইসব উপাদান যোগ করলে এটি একদিকে যেমন সুস্বাদু হয়, তেমনি শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেলও পাওয়া যায়।


সতর্কতা ও পরামর্শ

  • পান্তা তৈরির সময় অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করুন
  • ঢাকা পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে, ধুলা-ময়লা থেকে দূরে রাখতে হবে
  • পান্তা দীর্ঘসময় ভিজে থাকলে হালকা ঘুমঘুম ভাব আসতে পারে
  • অত্যধিক সময় রেখে খেলে পেটের সমস্যা বা ডায়রিয়া হতে পারে
  • ডায়াবেটিস বা ওজনাধিক্যে ভুগছেন—এমন ব্যক্তিদের জন্য পান্তা ভাত গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত

পান্তা ভাত কেবল একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার নয়—এটি একটি প্রাকৃতিক পুষ্টিবর্ধকও বটে। যদি পরিচ্ছন্নতা ও ভারসাম্য বজায় রেখে খাওয়া যায়, তবে এটি শরীরের জন্য উপকারী ও সুস্থ জীবনের সহচর হয়ে উঠতে পারে। তাই সময় ও সুযোগ হলে একবেলা পান্তা ভাত খেয়ে দেখুন, শরীরেই বুঝে যাবেন এর প্রকৃত উপকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!