Untitled-1

কোরবানি ইসলামের অন্যতম নিদর্শন

মাওলানা সাইফুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনী কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সাইফুল্লাহ বলেছেন, কোরবানি ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। আমরা আল্লাহর জন্য কোরবানি করবো। আল্লাহ বলেন, হে নবী আপনি বলুন আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ একমাত্র আল্লাহর জন্য। কিন্তু আমরা কোরবানি সময় বলে থাকি অমুকের নামে কোরবানি। এ ধরনের পরিভাষা না বলে এখন থেকে বলবো অমুকের পক্ষ হতে কোরবানি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে প্রত্যেক জাতির জন্য কোরবানির বিধান করে দিয়েছেন। সূরা হজ্বের ৩৪নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি। এ কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী- মুসলমান হওয়া, স্বাধীন হওয়া, (দাস-দাসির উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়) বিবেকবান হওয়া, (অর্থাৎ পাগল ও শিশুর উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়), মুকিম হওয়া (অর্থাৎ মুসাফিরের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়), কোরবানির সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেছাব পরিমান সম্পদের মালিক হওয়া, সাড়ে ৫২ ভরি রূপার সমপরিমান সম্পদ থাকা এবং কারো কাছে যদি কিছু স্বর্ণ, কিছু রূপা বা কিছু টাকা থাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি ও ফসল থাকে সেটা যদি সাড়ে ৫২ ভরি রূপার সমপরিমান হয় তাহলে তার উপরও কোরবানি ওয়াজিব।

গতকাল শুক্রবার জুমার খুতবার আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, ওয়াসিয়্যাতের এবং মান্নতের কোরবানি ওয়াজিব (এগুলোর গোশত গরীবদের মাঝে বন্টন করে দিতে হবে)। গরীব ব্যক্তি কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয়ের দ্বারা কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়। যৌথ পরিবারে কারো যদি একাধিক সন্তান থাকে সবাই যদি আয় পিতার কাছে দিয়ে দেয় তখন নেছাব পরিমান সম্পদ থাকলে শুধুমাত্র পিতার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। এক পরিবারে কয়েকজন ভাই যৌথভাবে থাকে তাদের নেছাব পরিমান সম্পদ থাকলে প্রত্যেকের উপর আলাদা আলাদা কোরবানি ওয়াজিব হয়। স্ত্রীর যদি নেছাব পরিমান সম্পদ থাকে তার উপরও কোরবানি ওয়াজিব। স্বামী চাইলেও স্ত্রীর পক্ষ থেকে কোরবানি দিতে পারবেন। নাবালক ও পাগল ছেলের পক্ষ থেকে অভিভাবক কোরবানি করলে নফল হিসেবে আদায় হবে। অন্যের পক্ষ হতে অনুমতি ব্যতিত কোরবানি করলে কোরবানি আদায় হবে না। মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে কোরবানি করা যায়। রাসুল (সা:) এবং পুরো উম্মাতের পক্ষ হতেও কোরবানি করা যায়। কোরবানি সাথে যদিও আকিকা করা জায়েজ তবে উত্তম হলো শিশু জন্মের ৭ম দিবসে আকিকা করা। এমন কি কোরবানির সাথে আকিকা করার বিষয়ে অনেক ওলামায়েকেরামরা মতবিরোধ করেছেন।

মাহমুদা খাতুন কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ আরো বলেন, কোরবানির সময় হলো ১০ জিলহজ্ব থেকে ১২ জিলহজ্ব সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। ঈদের নামাজ আদায়ের পূর্বে কোরবানি করা জায়েজ নেই। দিন ও রাতে যে কোন সময় কোরবানি করা যাবে। ৬ ধরনের পশু ধারা কোরবানি করা যায়। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। গরু, মহিষের বয়স ২ বছর, উটের ৫ বছর, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা হলো ১ বছর। ৬ মাসের ভেড়া দুম্বা যদি দেখতে যদি এক বছরের মতো লাগে তাহলে কোরবানি করা যাবে। রুগ্ন এমন পশু যা জবায়েরই স্থানে হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নেই। যে পশুর দাঁত এতো বেশি পড়ে গেছে যার করণে সে ঘাস খেতে পারে না, কান ও লেজ অর্ধেকের বেশি কাটা থাকে তা দিয়ে কোরবানি যাবে না। যে পশুর শিং গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে তা দ্বারা কোরবানি হবে না। শিং ছোট হলে অথবা কিছু অংশ ভেঙ্গে গেলে কোরবানি করা জায়েজ। যে পশুর দুটো চোখ অন্ধ অথবা এক চোখ পুরোই নষ্ট তা দিয়ে কোরবানি হবে না। যে পশু খোঁড়া, তিন পায়ে চলে এক পা মাটিতে রাখতেই পারে না সেই পশু দিয়ে কোরবানি হবে না। পশু ক্রয় করার পর ত্রুটি দেখা দিলে তা দিয়ে কোরবানি হবে না। গর্ভবতী পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ তবে মাকরুহ হবে। যে পশুর বাচুর হয় না সেই পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে। এমন পাগল পশু যে ঘাস খায় না তা দিয়ে কোরবানি হবে না।

মাওলানা সাইফুল্লাহ আরো বলেন, কোরবানি পশু থেকে কোন প্রকার উপকার হাসিল করা জায়েজ নেই (যেমন-হাল চাষ, বোঝা বহন করানো, দুধ পান করা)। ধনী ব্যক্তির বেলায় পশু ক্রয়ের পর কোন কারণে পশু পরিবর্তন করা জায়েজ। কিন্তু গরীব ব্যক্তি ক্রয়ের পর পরিবর্তন করতে পারবে না। কোরবানির পশু চুরি অথবা মারা গেলে ধনী ব্যক্তিকে আরেকটি পশু ক্রয় করে কোরবানি করতে হবে। গরীবের জন্য ক্রয় করতে হবে না। চুরি হওয়া অথবা হারানো পশু পাওয়া গেলে ধনী ব্যক্তি যে কোন একটি দিয়ে কোরবানি করতে পারেন। চুরি অথবা হারানোর পর গরীব ব্যক্তি যদি আরেকটি পশু ক্রয় করে অতপর হারানো পশু যদি পাওয়া যায় তাহলে দুটো পশুই কোরবানি করতে হবে। গরু, মহিষ ও উটে ৭ শরিকে কোরবানি দেয়া যায়। তবে শরিকদারদের সবার অংশ সমান হতে হবে। কেউ যদি আধা ভাগ কিংবা দেড় ভাগ দিয়ে কোরবানি দিতে চায় তাহলে কারো কোরবানি হবে না। পশু ক্রয়ের পরে ধনী চাইলে অংশীদার বাড়াতে পারবেন। কিন্তু গরীব ব্যক্তি পশু ক্রয় করার পর আর কোন অংশীদার বাড়াতে পারবেন না। কোন অংশীদারদের মৃত্যু ঘটলে তার ওয়ারিশদের পক্ষ থেকে কোরবানি করার জন্য অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না দিলে তার অংশের টাকা ফেরৎ দিতে হবে। আইয়্যামে তাশরীক অর্থাৎ ৯ জিলহজ্ব থেকে ১৩ জিলহজ্ব পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পুরুষ ও নারী উভয়ের উপর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষরা জোরে জোরে বলবে আর নারীরা আস্তে আস্তে তাকবীর বলবেন। আসুন আমরা জিলহজ্বের প্রথম দশকের এ সময়গুলোতে রাতদিন নফল ইবাদত এবং দিনে রোজা পালন করার জন্য চেষ্টা করবো বিশেষ করে আরাফার দিবসে রোজার রাখার মাধ্যমে অতীতের এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুণাহ আল্লাহ রাব্বুল আমীন মাফ করে দিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *