নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনীতে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত পামার পাড়া। পবিত্র ঈদুল আযহা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কামাররা তৈরি করছেন দা, বঁটি, ছুরি, ধামা সহ গোশত কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। মহিপালে বাপ-বেটা মিলেই কামারের দোকান পরিচালনা করেন। বাপ লোহা ধরে আছেন ছেলে হাতুড়ি নিয়ে পেটাচ্ছেন। তাতেই তৈরি হচ্ছে চকচকে দা, ছুরি, চাপাতি ও বঁটি।
গতকাল মঙ্গলবার ফেনী শহরের ট্রাংক রোড শিশু নিকেতন কালেক্টরেট স্কুলের বিপরীতে, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সংলগ্ম বিটু কর্মকার দোকান ও সার্কিট হাউজ রোডে নিত্যানন্দ কর্মকার দোকানে ঘুরে দেখা গেছে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কয়লার আগুনে লোহা গরম করে লাল টকটকে হলে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পশু জবাই করার অস্ত্র তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারেরা। চারদিকে কেবলই লোহা পেটানোর টুংটাং শব্দ। কেউ টানছে হাঁপর, কেউবা দিচ্ছে শান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শহরের শিশু নিকেতনের পশ্চিম পাশে রাস্তার বিপরীতে পলাশ কর্মকার দোকানে পরিবারের সবাই কোরবানির সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত। সেখানের কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও। কোরবানির ঈদে কাজের চাপ বেশি থাকায় সবাই সময় দিচ্ছে সেখানে। তারা দীর্ঘদিন যাবত পরিবারের সবাই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। তারা এ কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন পারিবারিক পেশায়। বর্তমানে প্রতিটি দা তৈরিতে প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকা। চাকু তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকা। বড় ছুরি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৭০০-৯০০ টাকা। বঁটি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৩০০-৪৫০ টাকা।
পলাশ কর্মকার দোকানের প্রোপ্রাইটর বাবুল ফেনীর সময় কে বলেন, আমার ঠাকুরদাও এ কাজ করতেন। বাবা ৩০ বছর ধরে করছেন। সবমিলিয়ে ৪৫ বছরের পুরোনো ব্যবসা আমাদের। আমরা এ কাজ করতে অভ্যস্ত।
এখন আগের তুলনায় আমাদের ব্যবসা তেমন জমে উঠেনা। এবছর কিছুটা ব্যবসা হচ্ছে। এখন ঈদ এগিয়ে আসতে আসতে যদি বিক্রি কিছুটা বাড়ে, সেই লক্ষ্যেই থেমে না থেকে একের পর এক জিনিসপত্র তৈরি করছি।
কোরবানির ঈদ আর মাত্র তিন দিন বাকি। এ চার দিনেই কামারিদের যত রোজগার। তাই ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে তাদের এমন ব্যস্ততা। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছর সংসার চালান। বছরের বেশিরভাগ সময় অল্প কাজ করে অল্প টাকা নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় কামারদের। তাই তারা এ সময়টা কাজে লাগান। যেন বাকি সময় নিশ্চিন্তে কাটাতে পারেন।
মহিপালের বিটু কর্মকার ফেনীর সময় কে বলেন, কোরবানির ঈদে আমাদের রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। এ সময় আমরা কিছু টাকা উপার্জন করি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। বছরের এই ঈদ মৌসুমটাই আমাদের মূল টার্গেট থাকে। বছরের কয়েকটা দিন ভালো টাকা, ভালো উপার্জন করার চিন্তা করলে এই দিনগুলা ঘিরেই করা হয়। কোরবানির ঈদ তাদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের উৎস। প্রতিদিন সামান্য কাজ থাকে। কোন রকম পরিবার নিয়ে চলার মত।
সার্কিট হাউজ রোডের নিত্যানন্দ কর্মকার ষ্টোরের মালিক ছোটন কর্মকার দৈনিক ফেনীর সময় কে জানান, সারা বছর কাজ কম থাকলেও ঈদের আগে কাজের চাপ বেড়ে যায়। আর তাই রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তাদের। অনেক কষ্টের পরেও এ পেশাটি ধরে রেখেছেন। কারণ এটি তাদের পৈত্রিক পেশা। কোরবানির সময়টাই আয়ের মৌসুম। এ আয় দিয়ে তারা পরিবারের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করে থাকেন।
এয়াকুব শরীফ শিমুল নামের এক ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাসা-বাড়িতে গিয়ে যারা চুরি-চাপাতি, দা-বটির কাজ করেন সেটি থেকে আগুনে পুড়িয়ে কামররা যে কাজ করেন সেটা টেকশই। মেশিনের সাহায্যে দা-বটি যে পরিমান সাদা করা হয় আসলে কাজে তা হয়। বরং হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও কয়লা দিয়ে পুড়িয়ে যে লোহা শান দেয়া হয় সেটি সবার কাছে গ্রহন যোগ্য। আমরা ছোট কালেও কামার দোকানের প্রতি অভ্যস্ত ছিলাম।