আরাফা একটি ঐতিহাসিক মাঠ। যা মসজিদে হারাম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। এটি ১০.৪ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। পিতা আদম (আ) ও মা হাওয়া (আ) জান্নাত থেকে বহিস্কৃত হয়ে দীর্ঘদিন ঘুরাফিরার পর এখানে উভয়ের পরিচয় ঘটে। ফলে এ জায়গার নাম হয়ে গিয়েছে আরাফা বা পরিচয়ের স্থান। অন্য বর্ণনা মতে হযরত জিবরাঈল (আ) মুসলমানদের জাতির পিতা এবং কা’বা ঘরের নির্মাতা হযরত ইবরাহীম (আ)-কে এখানে হজের বিধি বিধান শিক্ষা দিতে গিয়ে বলে ছিলেন, হাল আরাফাতা- আপনি বুঝেছেন? হযরত ইবরাহীম (আ) বলে ছিলেন- আরাফতু আমি বুঝেছি। এ থেকে এ জায়গার নাম হয়ে গিয়েছে আরাফা।
ফযীলত : আরাফায় অবস্থান করা হজের শ্রেষ্ঠতম রুকন। ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ী ও ইবন মাজাহ (র) হযরত আবদুর রহমান ইবন ইয়ামার থেকে বর্ণনা করেছেন, মহানবী (স) জনৈক ঘোষনাকারীকে এই মর্মে ঘোষনা করতে আদেশ দেন যে, আলহজ আল আরাফা- হজ হলো আরাফা তথা আরাফায় অবস্থান। যে ব্যক্তি ৯ই জিলহজ্জ আরাফায় দিনে বা রাতে অবস্থান করবে তার হজ হবে। যে ব্যক্তি আরাফায় দিনে রাতে অবস্থান করবে তার হজ্জ হবে না। মহানবী (স) বলেছেন- শয়তানকে আরাফার দিন অপেক্ষা এত অধিক অপমানিত, এত অধিক লাঞ্চিত ও এত অধিক ধিকৃত এবং এত অধিক ক্ষুদ্ধ কোনো দিন দেখা যায় নি। যেহেতু সে দেখতে পায়, বান্দাদের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হচ্ছে ও তাদের বড় বড় পাপ ক্ষমা করা হচ্ছে (মুয়াত্তা, শরহে সুন্নাহ, মিশকাত)। রাসূল (স) বলেছেন, আরাফার দিন অপেক্ষা এমন কোন দিন নেই যাতে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর বান্দাদেরকে জাহান্নাম হতে অধিক মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর তিনি সেদিন বান্দাদের অতি নিকটবর্তী হন ও তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। অতপর বলেন, তারা কি চায়? (মুসলিম, মিশকাত)। মহানবী (স) আরো বলেন, সকল দোয়ার সেরা দোয়া হলো আরাফার দিনের দোয়া (তিরমিযী)
হযরত ইবন আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, দিন সমূহের মধ্যে জিল হজের ১০ দিন অপেক্ষা এমন কোন দিন নেই, যাতে কোন উত্তম কাজ আল্লাহ তা’য়ালার নিকট অধিকতর প্রিয়। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয় কি? রাসূল (স) বলেন, না আল্লাহর পথে জিহাদও না; তবে ঐ ব্যক্তি যে নিজের জান ও মাল নিয়ে (জিহাদে) বের হয়েছে আর সে এর কিছুই নিয়ে ফিরেনি (সহীহ বুখারী, মিশকাত)।
আরাফার দিনের রোযা : হযরত আবু কাতাদাহ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা মহানবী (স)-কে আরাফার দিবসের রোযার ফযীলত প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। তিনি প্রত্যুত্তরে বলেছেন, এ দিনের রোযা অতীত এবং ভবিষ্যতের এক বছরের গুনাহের কাফফারা (মুসলিম হাদীস নং ১১৬২)। হযরত হাফসা (রা) থেকে বণিত, চারটি আমল রাসূলুল্লাহ (স) কখনো ছাড়তেন না; ১. আশুরার রোযা, ২. জিলহজের প্রথম দশকের তথা ১ থেকে ৯ তারিখের রোযা; ৩. প্রতি মাসের তিন দিনের রোযা, ৪. সকালের নাস্তার পূর্বের দু’রাকাআত (ইশরাকের) নামায (আহমদ, নাসায়ী)। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, উলামায়ে কিয়ামের মতে আরাফার দিনের রোযা আরাফায় ব্যতিত ও অন্য সব জায়গায় মুস্তাহাব।
রোযা কোন দিন রাখবে : আরাফার দিন আমাদের দেশে হয় ৯ই জিলহজ। আর পবিত্র মক্কা মুয়াজ্জমার হিসেবে ৮ই জিলহজ। এখন কোন দিন রোযা পালন করবে এ ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন অভিমত পাওয়া যায়। বিজ্ঞ ফিকহ বিদদের অভিমত হলো- রোযা রাখার নির্দেশ-“ইয়াউমে আরাফা তথা আরাফার দিন। আর আরাফার দিন হলো আমাদের দেশের হিসাব অনুযায়ী ৮-ই জিলহজ। সুতরাং রোযা রাখতে হবে ৮-ই জিলহজ। কেননা, আরাফা দু’দিন হয় না।
লেখক : প্রধান ফকিহ্,আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা, ফেনী।