নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনীতে এবারও চামড়া ব্যবসা সিন্ডিকেটের কবলে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিগত ১৫ বছর যাবত লোকসান টানতে হয়েছে চামড়া ব্যবসায়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ শাসনামলে চামড়া ব্যবসা চলে যায় প্রভাবশালীদের হাতে। গতকাল বুধবার শহরতলীর পাঁচগাছিয়া বাজারে চামড়া ব্যবসায়ীরা এমন মন্তব্য করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চামড়া ব্যবসা ছিল একসময় সোনার হরিণের মতো। বিগত ১৫-১৬ বছর আগেও চামড়ার কদর ছিল ভিন্ন রকম। কিন্তু এই সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দরিদ্র লোকজন। গরিবের হক মেরে চামড়ার টাকা লুটপাট করেছেন আওয়ামী লীগ নামধারী নেতাকর্মীরা। শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে পাচার করেছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। সঙ্কটে ফেলেছেন দেশের চামড়া শিল্পকে। কোরবানির চামড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে দেন। বছরের পর বছর চলে এই লুটপাটের খেলা। এবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চামড়ার দাম নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন কোরবানিদাতা ও ব্যবসায়ীরা।
চামড়া ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, আওয়ামী সিন্ডিকেটের পতনের পর নতুন করে সিন্ডিকেট হলে সঙ্কটে পড়বে চামড়া শিল্প। তাই সঠিক তদারকির মাধ্যমে চামড়ার ব্যবসায়ে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাজে লাগাতে হবে। কোরবানিদাতারা যেন চামড়ার ন্যায্য দাম পান সেই ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ কোরবানিদাতারা ন্যায্য দাম পেলে গরিব-দুঃখিরা তাদের ন্যায্য হক থেকে অন্য বছরের মতো বঞ্চিত হবেন না।
ইতোমধ্যেই পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে গত বছরের তুলনায় এবার গরুর চামড়ার দাম বর্গফুট প্রতি বাড়ানো হয়েছে পাঁচ টাকা। আর খাসি ও বকরির চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে দুই টাকা করে। তবে এতেও চামড়ার প্রতি কোন আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে না ব্যবসায়ীদের মাঝে।
পাঁচগাছিয়া বাজারের মেসার্স নূরনবী ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর নূরনবী মেম্বার জানান, চামড়া ব্যবসা পুরোটাই সিন্ডিকেটের কবলে চলে গেছে। এটি উদ্ধার করতে হলে প্রশাসনের কড়া নজরদারী প্রয়োজন। চামড়া ব্যবসা করে দুশ্চিন্তায় আছি। ঢাকাতেও আমার ব্যবসা রয়েছে। একজনের কাছে পাবো ২০ লাখ টাকা দিয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকা। তাহলে কিভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাবো।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই দেশের সম্পদ চামড়া সিন্ডিকেটের কবল থেকে মুক্ত হোক। চামড়া ধ্বংসের পিছনে আমাদের বন্ধপ্রতিম দেশও জড়িত আছে বলে তিনি জানান। এবারে একসময় চামড়া ব্যবসায়ের জন্য পসিদ্ধ ছিল। এখন আর এখানেও চামড়া ব্যবসায়ী নেই বললেই চলে।
মেসার্স কবির এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর কবির আহম্মদ জানান, দাম নির্ধারণ করে কি লাভ হবে। আমরা যখন বিক্রি করতে যাই তখন টেনারিরা আমাদেরকে পাত্তা দেয় না। আগে টেনারিরা এসে চামড়া নিয়ে যেতো। এখন আমরা চামড়া টেনারিদের কাছে পৌঁছে দেয়ার পরও কোন মূল্য পাই না। সুতরাং সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া ছাড়া চামড়া ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে না। সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত আন্তরিক হবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত চামড়া ব্যবসার গন্ধ দূর করা যাবে না।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: ইসমাইল হোসেন ফেনীর সময় কে জানান, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ভিন্ন হবে। সরকার চামড়ার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। যারা চামড়া সংগ্রহ করে বিশেষ করে এতিমখানা ও মাদরাসায় সরকারের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। সুতরাং আশা করা যায় চামড়া ব্যবসায় জৌলুস ফিরে আসবে।