আলী হায়দার মানিক :
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করলেও ঈদের ১০দিনেও দেখা মিলছে না পাইকারদের। ফেনীতে এবারও চামড়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের। এছাড়াও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, সরকার ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়া সর্বনিম্ন ১৩শ ৫০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ১১শ ৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। গতবারের মতো এবারও ছাগলের চামড়ার চাহিদা নেই বললেই চলে। অনেকেই বিনামূল্যে ছাগলের চামড়া দিয়েছেন। অনেকক্ষেত্রে দাম উঠেছে ১৫ থেকে ৩০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কমে বিক্রি করতে হচ্ছে চামড়া। পাঁচগাছিয়া বাজারে রাস্তার উপর চামড়া পড়ে থাকলেও দেখা মিলছে না টেনারি মালিকদের। অন্যান্যবারের তুলনায় এবারও বেশিরভাগ কোরবানিদাতারা বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানায় চামড়া দান করে দেয়। তারাও অনেকটা পানির দরে বিক্রি করছেন পশুর চামড়া। গরুর চামড়া ৩২০ টাকা থেকে শুরু করে ৭শ টাকা দরে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঈদের দিন ও পরেরদিন চামড়া জেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
আমাদের ছাগলনাইয়া প্রতিনিধি মোহাম্মদ শেখ কামাল জানান, ছাগলনাইয়া জিরো পয়েন্টে ঈদের দিন চামড়া বিক্রি করতে আসা অনেকে চামড়া বিক্রি না হওয়ায় সড়কে ফেলে যায়। ঈদের পরেদিন পৌরসভার ময়লার গাড়িতে করে গন্ধযুক্ত চামড়াগুলো নদীতে ফেলে দেয়। এছাড়াও চামড়া নিয়ে সবাই বিপাকে রয়েছে।
এছাড়াও আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, পরশুরাম, ফুলগাজী, দাগনভূঞা এবং সোনাগাজীতেও চামড়ায় লবণজাত করা হয়েছে। তবে এবারও চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হতে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
একাধিক চামড়া ব্যবসায়ী জানান, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ চামড়া শিল্প ধ্বংসের পিছনে অসাধু ব্যক্তিরাই দায়ী। তাদের ইন্দনে চামড়া শিল্প আজ দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ চামড়া শিল্প রক্ষা করতে হলে সরকার কঠোর অবস্থানে আসতে হবে। অন্যথায় চামড়া শিল্প কিছুতেই টিকিয়ে রাখা যাবে না।
পাঁচগাছিয়া বাজারে চামড়া বিক্রি করতে আসা সাইফুল ইসলাম সোহাগ নামের এক বিক্রেতা জানান, আগে একসময় চামড়ার জন্য পাঁচগাছিয়া বাজার প্রসিদ্ধ ছিল। চামড়ার যে কদর ছিল এখন আর সেটা চোখে পড়ে না। তখন শহরের নামিদামি লোকরা চামড়া কিনার জন্য গ্রামে চলে যেতেন। উৎসবমুখর ছিল চামড়া বাজার। তখন চামড়া ছিল লোভনীয়। দামাদামি হতো খুব আন্তরিকতার সাথে। এখন মনে হচ্ছে চামড়া যেন বোঝায় পরিণত হয়েছে। সরকার কেন এ চামড়া শিল্পকে রক্ষা করছেন না। অথচ চামড়া আমাদের দেশের জন্য বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম।
মেসার্স শফিক এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর শফিকুর রহমান বলেন, এবারও প্রায় ৪ হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছি। এবার কি অবস্থা হয় এখনো বুঝা যাচ্ছে না। তবে অনেকে এবারও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তবে আমরা আশা করছি ভালো কিছু হবে। কিন্তু সিন্ডিকেটের কবলে পড়লে সব তছনছ হয়ে যেতে পারে। আমরা চাই সব জায়গা থেকে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাক। সরাসরি বিক্রেতা ও ক্রেতার সম্পর্ক হলে সেখানে ভালো কিছু আশা করা যায়। চামড়া ব্যবসা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এ শিল্পকে টিকাতে সরকার আন্তরিক হলে সিন্ডিকেট বেস্তে যাবে।
পাঁচগাছিয়া বাজারের মেসার্স নূরনবী ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর নূরনবী মেম্বার জানান, চামড়ার কথা কেউ জিজ্ঞেসও করছে না। সাড়ে ৪শ, ৫শ ও ৬শ টাকা দরে প্রায় ১০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছি। পুরো জেলা প্রায় ৫০ হাজার চামড়া লবণজাত করা হয়েছে। পুঁজি অনুযায়ী চামড়া ব্যবসায় লাভের মুখ দেখা যাবে কিনা এখনো সন্দেহ রয়েছে।
মেসার্স কবির এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর কবির আহম্মদ জানান, এখন থেকে ১৫-১৬ বছর আগে চামড়া নিয়ে টেনারি মালিকদের মাঝে যে রকম উৎসাহ দেখা জেতে সেটা দেখা যাচ্ছে না। সরকার আন্তরিক হলেও এখনও কি হয় সেটা বুঝা যাচ্ছে না। তবে আমরা এবারও ৩২০ টাকা থেকে শুরু করে ৭শ টাকা পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ করেছি। প্রতিটি চামড়ায় লবণ ও মজুরীসহ আরো ২শ টাকা খরচ পড়েছে।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: ইসমাইল হোসেন ফেনীর সময় কে জানান, চামড়ার বিষয়টি আসলে জাতীয় ইস্যু। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা চামড়ার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। মন্ত্রণালয়েও চামড়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ভালো কিছু হবে। তবে জেলা পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। তাই চামড়া নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সংরক্ষিত চামড়া দীর্ঘদিন যাবত থাকবে।