নিজস্ব প্রতিনিধি :
‘পুন:সংযোগ প্রদান (আবাসিক), গ্রাহক কর্তৃক করণীয় কার্যাদি সম্পাদনের সময় ব্যতিরেকে ২০ কার্যদিবস, গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট বিক্রয় কার্যালয়ে নির্ধারিত ফরমে বা সাদা কাগজে আবেদনপত্র সহ হালনাগাদ গ্যাস বিল পরিশোধের প্রমাণসহ জমা দিতে হবে’। ফেনী শহরের বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড কার্যালয়ে হয়রানীমুক্ত সেবা এ লিখাটি ‘সিটিজেন চার্টারেই’ সীমাবদ্ধ। গ্রাহক সেবার বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সেবা পেতে বাখরাবাদ কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন গ্রাহকরা। এখানে সেবা নিতে আসা এসব গ্রাহকরা বছরের পর বছর ধরে ঘুরলেও কোন সমাধান মিলছেনা। ডুপ্লিকেট নথি অনুমোদন, নাম পরিবর্তন ও রাইজার স্থানান্তরের নথি অনুমোদন করাতে গ্রাহকদের হয়রানীর এ চিত্র নিত্যদিনের। এ অফিসের আওতায় ৩০ হাজার ৫২০ জন আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া এলাকার বাসিন্দা খুকু রানী নাথ হিন্দু থেকে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে নতুন নাম রাখেন সালমা ইসলাম সারা। তিনি বাখরাবাদের গ্যাস বিলে নাম পরিবর্তনের জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসে আবেদন জমা দেন। ইতিমধ্যে তিন মাস কেটে গেলেও তার নাম পরিবর্তন করা হয়নি।
বালিগাঁও ইউনিয়নের ধোনসাহাদ্দা এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদের এর নাম গ্রাহক তালিকায় করনিক ভুলে কম্পিউটারে এন্ট্রি হয়নি। ফলে ২০২২ সালের জুলাই মাসে আবেদন জমা দেন তিনি। এখন পর্যন্ত এর কোন সমাধান হয়নি। দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ হারুন নামে এক গ্রাহকের তিনটি চুলার অনুমোদন রয়েছে। তিনি বিলের অনলাইন কার্ড করতে এসে দেখেন কম্পিউটারে চুলার এন্ট্রি নেই। ২০২২ সালের জুলাই মাসে কাদের আবেদন জমা দিলেও অদ্যাবধি কম্পিউটারে তার তিনটি চুলা এন্ট্রি হয়নি। ফেনী শহরের মাষ্টারপাড়ার বাসিন্দা আবুল বশরের অনলাইন কার্ডে নাম-ঠিকানা ভুল হওয়ায় আবেদন জমা দেন ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে। এখন পর্যন্ত তিনি সংশোধিত বিলের কপি পাননি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ-আবেদন বাখরাবাদে জমা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এসবের কোন সুরাহা হচ্ছেনা।
গ্রাহকদের অভিযোগ, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া গ্রাহকের অধিকাংশ নথি অফিসের স্টোর রুমে হদিস মিলছে না। ফলে গ্রাহকদের নতুন করে ডুপ্লিকেট নথি তৈরি করতে বাড়তি টাকার পাশাপাশি ভোগান্তিরও শিকার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ডুপ্লিকেট নথি ও রাইজার স্থানান্তর অনুমোদনের জন্য একজন প্রকৌশলীর সাইট পরিদর্শনে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে। তাকে পরিদর্শনে নিতে গ্রাহকদের প্রাইভেটকার ভাড়া নিতে হয়। অন্যথায় তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে সাইট পরিদর্শনে অনীহা প্রকাশ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগে একসময় বাখরাবাদের ফেনী এরিয়া অফিসে জনবল কম থাকায় কাজের অগ্রগতি কম ছিল। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী কর্মকর্তা থাকলেও সুফল পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
গ্রাহকদের কোন আবেদন অফিসে জমা থাকার বিষয়টি জানেন না ফেনী এরিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক ও নোয়াখালী কার্যালয়ের (চলতি দায়িত্ব) উপ-মহাব্যবস্থাপক মনোজ কুমার গাইন। তার দাবী, এ ধরনের কোন অভিযোগ তিনি পাননি। তবে কোন টেবিলে ফাইল যেন না ঘুরে সেজন্য কর্মকর্তাদের বলে দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত; ২০২১ সালের মার্চ মাসে দৈনিক ফেনীর সময় এ ‘বাখরাবাদে লুটপাট’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর ফেনী এরিয়া অফিসের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্ট্যান্ডরিলিজ হয়।