মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন :
১৬ পেরিয়ে ১৭ বছরে পদার্পণ করছে পাঠক নন্দিত ফেনীর সময়। ২০০৯ সালের ১৭ জুন দেশের গণমাধ্যম অঙ্গনে যুক্ত হয় দৈনিক ফেনীর সময় । তখন ফেনী থেকে দৈনিক পত্রিকার নিয়মিত প্রকাশনা ছিল কেবলই স্বপ্নের। সেই কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে পাঠকের অন্তরে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে দৈনিক ফেনীর সময়। শুরুতে আমরা কথা দিয়েছিলাম ফেনীর সময় হবে ‘সবার কাগজ’। সেই কথা আমরা অক্ষরে অক্ষরে রাখবার চেষ্টা করেছি।
অবশ্য এই বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে মূল্যও কম দিতে হয়নি ফেনীর সময় পরিবারকে। সম্পাদকের নামে দুই ডজনের বেশি মামলা ছাড়াও হামলা মামলার আরও শিকার হয়েছেন ফেনীর সময় এর লেখক-সাংবাদিকগণও। ফেনীর সময় হাতেখড়ি নিয়ে অনেক গণমাধ্যমকর্মী এখন জাতীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমে আলো চড়াচ্ছে।
অপ্রিয় সত্য প্রকাশ করায় অনেক বন্ধু শুভাকাঙ্খীও বৈরী আচরণ করেছেন আমাদের সঙ্গে। তবুও ফেনীর সময় পথ হারায় নি। ১৬ বছর নিয়মিত প্রকাশনার পরও পত্রিকাটি পতিত সরকারের রোষানলের শিকার হয়ে মিডিয়া তালিকাভুক্ত হয়নি। বঞ্চিত হয়েছে সরকারি বিজ্ঞাপন প্রাপ্তি থেকে। বেসরকারি ও স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানেও স্বার্থান্বেষী মহল হস্তক্ষেপ করেছে। তখন ভালোবাসা দিয়ে যাঁরা সাহস ও সমর্থন যুগিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা। যেসব সহকর্মী সাংবাদিক ও সম্মানীত লেখকগণ নিঃস্বার্থভাবে ফেনীর সময় এর এগিয়ে চলায় সঙ্গী হয়েছেন তাঁদের প্রতি অবিরাম ভালোবাসা।সুপ্রিয় বিজ্ঞাপনদাতাঁরাই পত্রিকাটি টিকে থাকার শক্তি যুগিয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। বিক্রয় কর্মী থেকে শুরু করে প্রতিটি পাঠক ফেনীর সময় এর গর্বিত অংশীদার বলে আমরা মনে করি। আজকের শুভলগ্নে তাঁদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। বিগত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ন্যার্য্য দাবীর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জুগিয়েছে ফেনীর সময়। তখন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ফেনীর সময়ের সাংবাদিকগণ সাহসের সঙ্গে পেশাগত দায়িত্বপালন করেছে। সেই আন্দোলনে সকল শহীদদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। সেই সঙ্গে আহত বীর যোদ্ধাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করায় এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহলের আঁতে ঘা লাগে। আবারও দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ফেলে আসা ১৬ বছরে ফেনীর সময় যেমন কোন ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর লেজুড় বৃত্তি করেনি -তেমনি ভবিষ্যতেও সাহসী পথ চলা অব্যাহত থাকবে। প্রতিবছর দিবসটি আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। যে আনন্দ ফেনীর সময় পরিবার ছাড়িয়ে পুরো শহর-জনপদে ছড়িয়ে যায়। বিগত সময়ে নানা কারণে এর কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে।
গত বছর এ দিনে পবিত্র ঈদুল আযহা থাকায় এবং আমার আম্মার ইন্তেকাল ও একই সময়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে আমি দীর্ঘ সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন বাতিল করতে হয়েছে। এবারও আমার জ্যেষ্ঠ সন্তান মোহাম্মদ শাফায়াত হোসেন ইউশার আকস্মিক মৃত্যুতে ফেনীর সময় পরিবার শোকাহত। বছরের ব্যবধানে আমার ও পরিবারের কঠিন সময়ে সহকর্মী বন্ধু-স্বজন, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীগণ যেভাবে পাশে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার নজির স্থাপন করেছেন তাঁদের প্রতি আমার অসীম কৃতজ্ঞতা।
এবার আনন্দ আয়োজন বাদ রেখে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ ও অন্যান্য কর্মসূচি থাকবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে। ফেনীর সময়ের ভবিষ্যত পথচলায় আপনাদের অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।