আলী হায়দার মানিক :
ফেনীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপটেন শেখ কামাল জাতীয় জুনিয়র (অনূর্ধ্ব ১৪ ও অনূর্ধ্ব ১৮) ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপ গতকাল শুক্রবার শুরু হয়েছে। খেলার উদ্বোধন করেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।
বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সভাপতি, সিনিয়র সচিব ও তথ্য কমিশনের কমিশনার ড. আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সচিব শাহ আলম সরদার, জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান, পুলিশ সুপার জাকির হাসান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ড. সিরাজ উদ্দিন মো: আলমগীর, ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বাহার।
নিজাম হাজারী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিজয়ী করতে নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন। দেশের উন্নয়ন ও শান্তির স্বার্থে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তাই শেখ হানিাকে উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রাখার লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, ফেনীতে জাতীয় পর্যায়ের যে কোন অনুষ্ঠান হওয়ার মতো ভেন্যু ও পরিবেশ রয়েছে। তিনি জাতীয় ক্রীড়া নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আগামীতেও আপনারা ফেনীতে জাতীয় পর্যায়ের যে কোন প্রতিযোগিতা করতে পারবেন। শুধু ব্যাডমিন্টন নয় ক্রিকেট, ফুটবল, দাবা সহ ক্রীড়াঙ্গনের সকল প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে ফেনীর খেলোয়াড় রয়েছেন। ফেনীতে দ্বিতীয় বারের মতো জাতীয় পর্যায়ের খেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের খায়রুল আনোয়ার পেয়ারু জিমনেসিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপটেন শেখ কামাল জাতীয় জুনিয়র (অনূর্ধ্ব ১৪ ও অনূর্ধ্ব ১৮) ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সভাপতি, সিনিয়র সচিব ও তথ্য কমিশনের কমিশনার ড. আবদুল মালেক আমাকে ও ফেনীকে বেশী ভালোবাসেন বলেই আজকে জাতীয় পর্যায়ের খেলা জেলা শহরে হচ্ছে। এটি ফেনীবাসীর জন্য গর্বের বিষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যান্টেন শেখ কালামকে ১৯৭৫ সালে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকরা মনে করেছিল সব শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আসলে কি তা শেষ হয়েছে নাকি বাংলাদেশে লাখ লাখ শেখ কালাম আজ উজ্জ্বীবিত। এ দেশ যতদিন থাকবে ততদিন কোটি কোটি বঙ্গবন্ধু ও কোটি কোটি শেখ কালাম জন্ম নিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এতে কিছু কুচক্রী মহল সহ্য করতে পারছে না। শেখ হাসিনা যতদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন দেশ নিরাপদ থাকবে। শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নের সরকার। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা খেলোয়াড় ও খেলোয়াড়দের সাথে আসা অভিভাবক ও আত্মীয় স্বজনদের সবাইকে ফেনীর ইতিহাস ঐতিহ্য ঘুরে দেখার আহবান জানান।
ড. আবদুল মালেক বলেন, আমি গর্বিত ফেনী জেলা শহরে দ্বিতীয় বারের মতো জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সাধারণত বিভাগীয় শহরে হয়ে থাকে। এটি ফেনীর জন্য অনন্য স্বাক্ষী হয়ে থাকলো। ফেনী আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছে। ফেনীর মানুষের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা রয়েছে, ফেনীর মানুষদের প্রজ্ঞা জাতীয় পর্যায়ে অনন্য ভ‚মিকা রেখেছে। নিজাম উদ্দিন হাজারীকে যখন ফোন করেছি তিনি সাথে সাথে প্রতিযোগিতাটি গ্রহন করেছেন। জেলা প্রশাসকও রাজি হয়ে গেলেন। ফেনী উদ্ভাসিত, আলোকিত ও উজ্জ্বল বাংলাদেশে নেতৃত্ব প্রদানকারী একটি স্থান।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খেলোয়াড়দের জন্য খেলোয়াড় কল্যাণ ট্রাষ্ট করে অনেক কিছু করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে যারা খুন করেছিল তারা মনে করেছি হত্যা করা হলেই তিনি শেষ হয়ে যাবেন। কিন্তু না আজ সারা দেশে কোটি কোটি বঙ্গবন্ধু রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিষ্ঠুভাবে হত্যা করা হয়েছে। লাখ লাখ শেখ কামাল রয়েছেন। আমরা শেখ কামালের স্মৃতি ধরে রাখবো। এ বাংলাদেশে আর কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বাঙ্গালীরা বঙ্গবন্ধুকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন। ভালোবাসেন বলেই শেখ হাসিান বারবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। আগামীর বাংলাদেশ প্রতিটি তরুণ শেখ কামাল হয়ে জন্ম নিবেন। ফেনীর কান্ডারি নিজাম হাজারীর নেতৃত্বে আপনারা এগিয়ে যাবেন এ প্রত্যাশা রইলো।
আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, ফেনী জেলাকে জাতীয় খেলার ভ্যানু হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য ড. আবদুল মালেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আমরা নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির নেতৃত্বে বারবার মিটিং করেছি, যেন জাতীয় খেলা মানসম্মত হয়। জেলা শহরে হলেও প্রতিযোগিতাটি জাতীয়। সেই হিসেবে আমরা সবদিক থেকে সতর্ক রয়েছি। আমাদের মূল ইভেন্ট খেলা। সেই হিসেবে খেলোয়াড়দের থাকা ও খাওয়াসহ সর্বদিক থেকে যেন জাতীয় পর্যায়ের নয় আন্তর্জাতিক মানের হয়, সেটি আমরা ব্যবস্থা করেছি। ভবিষ্যতে আবারও যেন ফেনী জেলাকে জাতীয় যে কোন প্রতিযোগিতার জন্য ভ্যানু হিসেবে চয়েজ করা হয়। ফেনীতে যে কোন জাতীয় প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য টিম ওয়ার্ক ও সার্বিক প্রস্তুতি আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপটেন শেখ কামাল সহ ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহীদের আত্মারমাগফিরাত কামনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সকল শহীদ ও জীবিত সবার অবদান আমরা চিরজীবন শ্রদ্ধার সাথে দেখবো।
জাকির হাসান বলেন, বিজয়ের মাসে চমৎকার একটি আয়োজন জাতীয় পর্যায়ের খেলা ফেনীতে হতে যাচ্ছে। এটি ফেনীর জন্য গৌরবের। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ফেনী অনন্য উচ্চতার শিখরে অবস্থান করবে। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপটেন শেখ কামাল জাতীয় জুনিয়র (অনূর্ধ্ব ১৪ ও অনূর্ধ্ব ১৮) ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপটি অনেক বেশী গুরত্ববহ। জেলা শহরে জাতীয় প্রতিযোগিতা আসলে চ্যালেঞ্জিং বিষয়। ইতিমধ্যে জেলা ক্রীড়া সংস্থা জানিয়েছেন এ চ্যালেঞ্জিং বিষয়টি গ্রহন করা সম্ভব হয়েছে একমাত্র নিজাম হাজারী এমপির মতো মানুষ থাকার কারনে। ফেনীতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে আসা খেলোয়াড় ও অভিভাবকরা থাকবেন তাদেরকে অভিনন্দন। এটি আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। সুশৃঙ্খলভাবে যেন খেলাটি সমাপ্ত হয় সেজন্য জেলা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
চ্যাম্পিয়নশীপ আহবায়ক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে পরশুরাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার, ছাগলনাইয়া পৌরসভার মেয়র মোঃ মোস্তফা, স্টার লাইন গ্রæপের ভাইস চেয়ারম্যান জাফর উদ্দিন, পোর্টল্যান্ড গ্রপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদুর রহমান, মুজিবুল হক রিপন, কেবিএম জাহাঙ্গীর আলম, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজিজ রাজীব, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ ও কালিদহ ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ডালিম।
শুসেন চন্দ্র শীল জানায়, জাতীয় পর্যায়ের এ প্রতিযোগিতায় দেশের ৪২ জেলা, ৫টি বিভাগ, ৩টি সংস্থা ও শিক্ষা বোর্ডের ১টি দল সহ মোট ৫১টি দল অংশ নিয়েছে। প্রতিযোগিতায় মোট ২০৭ জন বালক ও ৬০ জন বালিকা অংশ নিয়েছে। ৪ দিন ব্যাপী এ প্রতিযোগিতা ২ জানুয়ারি সমাপ্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের আয়োজনে ফেনী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতায় ফেনীতে দ্বিতীয় বারের মত এ চ্যাম্পিয়নশীপ শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পূর্বালী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন।