নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনীতে একের পর এক বন্ধ হয়ে গেলো সিনেমা হল। একসময় ফেনী শহর ও দাগনভূঞায় ৬টা সিনেমা হল থাকলেও এখন একটিরও অস্তিত্ব নেই। বেশ কয়েকবছর ধরে দর্শক সংখ্যা কমে যাওয়ায় সর্বশেষ শহরের স্টেশন রোডের সিনেমা হলটিও ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। সেখানে বহুতল বিপণিবিতান নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রূপালী পর্দা থেকে চিরতরে আলো নিভে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন মানসম্মত চলচ্চিত্রের অভাব ও তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতায় দর্শকরা হলবিমুখ হওয়ায় এ ব্যবসা সংকটে পড়ে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুলাল সিনেমা হল, সুরত মহল, বিলাসী সিনেমা হল ও কানন সিনেমা হল নামে ফেনী শহরে চারটি সিনেমা হল ছিল। ফুলগাজীতে বিউটি সিনেমা হল ও দাগনভূঞায় ঝর্ণা সিনেমা হল নামে আরও দুটি সিনেমা হল ছিল। একসময় এসব হলে ছবি দেখার জন্য হাজার হাজার দর্শক ভিড় করতেন। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পরিবার নিয়ে আসতেন অনেকে।
১৯৫২ সালে ক্রীড়া সংগঠক খায়রুল এছাক মিয়া শহরের রেলস্টেশন সড়কে ‘দুলাল’ সিনেমা হল চালু করেন। বছর খানেক পর শহরের জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন ‘সুরত’ চালু করেন আফজালুর রহমান। ১৯৭৮ সালের দিকে আবুল কালাম আজাদ পেয়ারা ও মমতাজুল হক ভূঞার হাত ধরে মাস্টারপাড়া মোড়ে চালু হয় ‘কানন’ সিনেমা হল। ১৮৮০ সালের পরবর্তী সময়ে নুর মিয়া শহরের একাডেমি রোডে চালু করেন ‘বিলাসী’ নামের আরও একটি সিনেমা হল। ২০০৩ সালে আফজালুর রহমানের মৃত্যুর পর তার ছেলে বাচ্চু মিয়া সুরত হলের দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে সিনেমা হলটি ভেঙ্গে ‘ফেনী সুপার মার্কেট’ নামকরণ করা হয়। বিলাসী সিনেমা হলের প্রতিষ্ঠাতা নুর মিয়া মারা যাওয়ার পর তার ছেলেরা স্থানীয় কমিশনার ওমর ফারুকের কাছে ভাড়া দেন। তবে দর্শক সঙ্কটের কারণে লোকসানের মুখে ২০০২ সালে হলটি ছেড়ে দেন তিনি। এরপর থেকে সেটি বন্ধ। করোনার আগ পর্যন্ত চালু ছিল কানন সিনেমা হল। গত কয়েকবছর লোকসান হলেও কর্মচারীদের কথা মাথায় রেখে মালিকপক্ষ এটি চালু রাখে। কিন্তু করোনায় হল বন্ধ হলে তারা অন্য পেশায় চলে যান। সম্প্রতি মালিক পক্ষ হলটি ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণকাজ শুরু করেছেন।
সূত্র আরো জানায়, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্ন আসন ব্যবস্থায় সুরত ও দুলাল সিনেমা হলই দর্শকদের পছন্দের তালিকায় ছিল। এসব হলে প্রতি শো’তে ৭০০-৮০০ টিকিট বিক্রি হতো। অন্য সিনেমা হলগুলোতে ভালো ছবি না থাকায় দর্শক সমাগম কিছুটা কম হতো। তবে সেগুলোতেও প্রতি শো’তে ৪০০-৬০০ দর্শকের সমাগম ঘটতো। শহরের চারটি সিনেমা হলে প্রতিদিন অন্তত ১০-১২ হাজার দর্শক বিনোদন সুবিধা পেতেন।