দৈনিক ফেনীর সময়

আল্লাহ তায়ালার কুদরতের হাতে সৃষ্টি চার জিনিস

আল্লাহ তায়ালার কুদরতের হাতে সৃষ্টি চার জিনিস

আল্লাহ তায়ালা অপার ক্ষমতার মালিক। পৃথিবীর সবকিছুর তিনিই একমাত্র সৃষ্টি। তিনি কোন কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলে কুন ( হও) বললেই সাথে সাথে হয়ে যায় (সূরা আল বাকারা-১১৭,সূরা আলে ইমরান-৪৭,সূরা মারইয়াম-৩৫,সূরা ইয়াসিন-৮২)। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন-কেবল চারটি জিনিস আল্লাহ তায়ালা কুদরতের হাতে সৃষ্টি করেছেন। এগুলো হলো-১.আদম, ২.আরশ, ৩.জান্নাতে আদন ও ৪. কুরসি।

আদম : মানবজাতির আদি পিতা হলেন হযরত আদম আ.। আদম ও হাওয়া থেকে সকল মানুষের সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-আর যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করবো।তারা বললো,আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন,যারা সেখানে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার গুনগান করছি এবং পবিত্রতা বর্ণনা করছি।আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা অবগত নও (সূরা আল বাকারা-৩০)। আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন, হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর,যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তদীয় সহধর্মিনী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয় হতে বহু নর ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন (সূরা বাকারা-১)। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন- দয়াময় আল্লাহ, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ (সূরা আর রাহমান,১-৩)। আরো ইরশাদ করেন- তুমি পাঠ কর তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হতে(সূরা আলাক-১,২)।

মহানবী সা. বলেন, মাটি থেকে আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আ. কে সৃষ্টি করেছেন।তিনি ইরশাদ করেন- হে ইবলিস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সাজদাবনত হতে তোকে কিসে বাধা দিল? তুই কি উদ্ধত্য প্রকাশ করলি, নাকি তুই উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন? (সূরা সাদ-৭৫)।আল্লাহ তায়ালা যখন হযরত আদম আ. কে সৃষ্টির মনস্থ করলেন,তখন ফেরেশতাদেরকে সমগ্র পৃথিবী থেকে মাটি আনতে বললেন।মাটি আনা হলে আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে মাটি দ্বারা খামীর তৈরী করেন। এ খামীর দ্বারা ষাট হাত দৈর্ঘ্য আদমের আকৃতি তৈরী করেন।অত:পর সূর্য তাপে তা শক্ত হয়ে যায়। তারপর আবার বৃষ্টিতে তা নরম হয়ে যায়। অত:পর রুহ ফুৎকার করা হয়।আল্লাহ বলেন,অত:পর যখন তাকে (আদমকে) পরিপূর্ণ আকৃতি দান করবো এবং তার মধ্যে আমার রুহ থেকে ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তাকে সেজদা করবে (সূরা হিজর-২৯)। মহানবী সা. বলেন,হাশরের মাঠে যখন লোকেরা হযরত আদম আ. এর নিকট গিয়ে বলবে, হে আদম! আপনি সমস্ত মানব জাতির পিতা।আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার রুহ থেকে আপনার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন( সহীহ বুখারী ৩৩৪০, সহীহ মুসলিম ১৯৪)। ইমাম দারেমী বলেন, আল্লাহ নিজ হাতে আদমকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ছাড়া অন্য কোন প্রানীকে তাঁর হাত দ্বারা সৃষ্টি করেননি।এ কারণে আদমকে বিশেষিত করেছেন, মর্যাদা দিয়েছেন ও সম্মানিত করেছেন (দারেমী)।

আরশ : আরশ অর্থ সিংহাসন।আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-নিশ্চয়ই তোমাদের রব হলেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন।অত:পর তিনি স্বীয় আরশের উপর সমাসীন হন( সূরা আল আরাফ-৫৪, সূরা আল ইউনুস- ৩, সূরা আর রা’দ-২, সূরা আত তাহা-৫, সূরা আল ফুরকান-৫৯, সূরা আস সিজদা-৪, সূরা আল হাদীদ-৪)। আরো ইরশাদ করেন- আর তিনি এমন সত্তা, যিনি সমস্ত আসমান-যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সময় তার আরশ পানির উপর ছিল( সূরা হুদ-৭)। হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে আরশকে আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ”আরশের উপর সমাসীন” উক্তিটি মুতাশাবিহাত। কেননা, আরশ বলতে নির্দিষ্ট সিংহাসন নয়। কেননা, নির্দিষ্ট সিংহাসনে সমাহীন হলে- সামনে কোন দিকে, পেছন কোন দিকে, ডান কোন দিকে, বাম কোন দিকে ইত্যাদি প্রশ্ন দেখা দেয়। তাছাড়া আল্লাহর আকার-আকৃতি আছে বলে বিশ্বাস করতে হয়।

কলম : মুফাসসিরগণ বলেন,কলম দ্বারা ঐ কলমকে বুঝানো হয়েছে যা দ্বারা আসমান-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে তাকদীর লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। মহানবী সা. বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন। অত:পর কলমকে বলেন, লিখ। কলম বললো, হে আমার রব! আমি কি লিখবো? আল্লাহ বললেন, লিখ আমার আইনসমূহ এবং পৃথিবী ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে( তারাবী ২৩/৫২৬, আহমদ ৫/৩১৭, তিরমিযী ৯/২৩২)।

জান্নাতে আদন : আটটি জান্নাতের মধ্যে একটি হলো- জান্নাতে আদন। জান্নাত অর্থ বাগান,আর আদন অর্থ অনন্ত সুখ-শান্তি। সুতরাং জান্নাতে আদন অর্থ অনন্ত সুখ-শান্তির বাগান।আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- জান্নাতে আদন যার পাশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে। আর এটা পাবে ঐ সকল ব্যক্তি যারা নিজেকে পবিত্র রাখে (সূরা ত্বহা-৭৬)। কুরআন মাজীদের ১১টি সূরা জান্নাতে আদনের বর্ণনা রয়েছে। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মহানবী সা. বলেছেন- আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে আদন সৃষ্টি করার পর তার গাছসমূহ নিজ হাত রোপন করেন। তখন জান্নাতে আদন বলেছে, ”কাদ আফলাহাল মুমিনুন”- মুমিনেরা সফলকাম হয়েছে (কুরতুবী, সূরা আল মুমিনুন)। ইমাম দারেমী বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আ., তাওরাত এবং জান্নাতে আদন নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। আর জান্নাতে আদনের গাছসমূহ নিজ হাতে লাগিয়েছেন (নাকযুদ দারেমী পৃষ্ঠা-৯৯)।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!