অনলাইন ডেক্স :
আর্জেটিনা ফুটবলের জোরালো সমর্থক ফেনীর আবদুল মতিনের কথা নিশ্চয়ই সবার জানা। প্রিয় দলের পতাকা টাঙ্গাতে গিয়ে দূর্ঘটনা কবলিত হয়ে হারিয়েছে হাত-পা। গণমাধ্যমের বদৌলতে সেই খবর রটে গেছে বিশ্বময়। থেমে থাকেনি দেশের গন্ডিতে। দেশে আর্জেন্টিনা দূতাবাস উদ্বোধনেও নিমন্ত্রণ পায় এই মতিন।
এবার মতিনের কর্মস্থানের জন্য জন্য এগিয়ে এসেছেন ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। একটি দোকান শুরু জন্য তাকে অনুদান দিয়েছেন নগদ ৪০ হাজার টাকা। বাকি যা লাগে তা দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন মেয়র।
মেয়র বলেন, মতিন ফুটবল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিার জোরালো ভক্ত। প্রিয় দলের পতাকা লাগাতে গিয়ে সে হারিয়েছে তার হাত-পা। কর্ম করে খাওয়ার মত তার কোন উপায় নেই। এসব দিক বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে একটি দোকান করে দেব।
যেখানে বসে সে ব্যবসা করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সুখেথাকতে পারে। এদিকে মতিন তার দুই মেয়েস্ত্রী ও মায়ের জন্য ঈদ উপহার দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়। সহায়ের প্রধান সমন্বয়কমঞ্জিলা আক্তার মিমি বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করবো মতিনের সাথে থাকতে।
মতিনের স্ত্রীএ সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত। হাত-পা কোনটিই নেই মতিনের। এমন একজন মানুষকে জেনেশুনে বিয়েকরে এবং সারাজীবন সেবা করার যে দৃষ্টান্ত মতিনের স্ত্রী দেখাচ্ছে তা অনন্য।
সহায়তা পেয়ে মতিন জানায়, সকল গণমাধ্যমের বদৌলতে আজকে সে এমন সহায়তা পাচ্ছে। গণমাধ্যমের কাছে সে কৃতজ্ঞ।
এদিকে মতিনের চারটি হাত-পায়ের একটিও না থাকলেও মতিনের সাথে সংসার করছেন তার স্ত্রী। জানিয়েছেন বিয়ের আগে থেকেই তারাএকজন আরেক জনকে ভালবাসতো। দূর্ঘটনায় হা-পা হারালেও সেই ভালবাসা কমেনি। মহান আল্লাহকেখুশি করার জন্য এবং স্বামীর প্রতি ভালবাসায় সে এমনটা করছে।
ফুটবল বিশ্বকাপ ঘিরে বাঙালীর উন্মদনা ইতোমধ্যোই নজর কেড়েছে সারাবিশ্বে। প্রিয় দলের জন্য এদেশের মানুষ একেক জন একেক রকমকরে ভালবাসা প্রদর্শন করেন। তেমন একজন ফেনীর আবদুল মতিন। প্রিয় দল আর্জেন্টিনার পতাকা টাঙ্গাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়ে হারান নিজের হাত ও পা। তবুও একটু কমেনি প্রিয় দল আর্জেন্টিনার প্রতিভালবাসা।
মতিনের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞাঁ উপজেলা সিন্দুরপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে। প্রিয় দল আর্জেন্টিনার পতাকা উড়াতে গিয়ে চিরতরে হারিয়েছেন নিজের চার হাত-পা। পরিশ্রমী, কর্মঠ মতিনের ছিলো সাজানো গোছানো ব্যবসা। সুস্থ-সুন্দর শারীরিক গঠনাকৃতির মতিনের এখন কিছুই নেই। বেঁচে আছেন আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সাহায্য সহযোগিতায়। এত কিছুর পরেও কমেনি ফুটবলের প্রতি তার আগ্রহ। কমতি হয়নি টিম আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসারও। তবে তার অনুরোধ, ফুটবল উন্মাদনায় এমন কিছু যেন না হয়, যার রেশ টানতে হবে সারা জীবন।
মতিন বলেন, ২০১৪ সালের মার্চ মাসের ২৮ তারিখ। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগের ঘটনা। লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের আজিম শাহ মার্কেটের তিন তলা ছাদের উপরে এলমুনিয়াম রডের মাধ্যমে পতাকা টানাচ্ছিলাম। হঠাৎ বিদ্যুতের প্রধান সঞ্চালন লাইনের সাথে লেগে যায় এলমুনিয়ামের রডটি। মূহুর্তেই ছিটকে পড়ি একটি দেয়ালের উপর। আর হুশ ছিলোনা।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে। আইসিইউতে রাখা হয়েছিলো ২৭ দিন। সাড়ে তিন মাস চিকিৎসা চলছে। ইনফেকশান হয়ে যাওয়ায় হাত-পা গুলোকে রক্ষাকরা যায়নি কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। পুরো চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে ৭-৮ লাখটাকা খরচ হয়েছে। ব্যবসা, দোকান সব শেষ হয়েছে। সব হারিয়ে একদম শূণ্য।
নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। মতিন আর্জেন্টিনা (https://www.facebook.com/