আমজাদ হোসাইন :
শতভাগ বিদ্যুতায়িত সোনাগাজী উপজেলায় বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন গ্রাহকেরা। প্রচন্ড তাপদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত দুইমাস ধরে লোডশেডিংও বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলে দিনে অন্তত ১৬-১৮ ঘন্টার মত লোডশেডিং থাকে। এখন প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ জনগণ, হাসপাতালের রোগী, আসন্ন এসএসসি, দাখিল এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ও পোল্ট্রি খামারিরা।
উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিস সূত্র জানায়, ৫ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত সোনাগাজীতে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ৯০ হাজার। দিনে ১৬-১৭ ও রাতে ১৩-১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দিনে ও রাতে ৬ থেকে ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এ কারণে লোডশেডিং হচ্ছে।
বিদ্যুতের গ্রাহকেরা জানান, বিদ্যুতের সমস্যায় নিয়মিত কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটায় উপজেলার ব্যবসায়ী, কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। বিদ্যুতের সমস্যায় ঈদের সময়ও বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে কিছু দিনের মধ্যে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের এসএসসি, দাখিল ও এইচএসসি পরীক্ষা। বিদ্যুৎ না থাকায় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছে শিক্ষার্থীরা। গত দুইমাসে দৈনিক পৌরসভায় ৫-৬ ঘণ্টা এবং গ্রামাঞ্চলে ১৬-১৮ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। দিনে ১০-১৫ বার পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে কখন আসে তারও কোন ঠিক নেই। আবার কখনো কখনো পূর্বঘোষণা ছাড়া সংস্কারের অজুহাতে টানা ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
এদিকে সোনাগাজীতে বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ স্বয়ং ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। গত বছর বেশ কয়েক মাসে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলার সব কটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লোডশেডিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। অনেকেই পল্লী বিদ্যুতের বর্তমান ডিজিএমের অদক্ষতাকে দায়ী করে তাঁর অপসারণ দাবি করেন।
সোনাগাজী পৌরশহরের ব্যবসায়ী মো. নাছির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকায় তাঁর দোকানের ফ্রিজে থাকা অনেক মিষ্টি ও কোমল পানীয়, খাদ্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়। ক্রেতাদের কাছে কফি ও বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস বানিয়ে বিক্রি করতে পারছেন না।
ফারুক হোসেন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা ও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
এসএসসি পরীক্ষার্থী কামাল উদ্দিন বলে, ‘প্রচন্ড গরম আর অসহনীয় লোডশেডিংয়ে পড়ার টেবিলে বসতে পারছি না।’ লোডশেডিংয়ের কারনে বাজারে চার্জার ফ্যানেরও দাম বেড়ে গেছে।
সুলাখালী এলাকার জাবেদ হোসেন নামে এক গ্রাহন বলেন, গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে তার বাড়িতে বিদ্যুৎ চলে যায়। সে বিদ্যুৎ আসে ভোর সাড়ে পাঁচটায়। এতে করে প্রচন্ড গরমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
ভাদাদিয়া এলাকার সুমন শর্মা নামে একব্যক্তি বলেন, তাঁদের এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ঘন্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকে না। লোডশেডিং হয় প্রায় ১৮-২০ঘন্টা। এমতব্যস্থায় প্রচন্ড গরমে তারা বিদ্যুতের আশা ছেড়ে দিতে হতাশায় দিনপার করছেন। মাঝে মধ্যে রাতে বাড়ির উঠানে মশারি টাঙিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন।
এ ব্যাপারে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সোনাগাজী জোনাল অফিসের ডিজিএম সনৎ কুমার ঘোষ বলেন, সোনাগাজী উপজেলায় ৯০ হাজার গ্রাহকের জন্য দিনে রাতে মোটামোটি ২৩-২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও কর্তৃপক্ষ মাত্র ৬-৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় অর্ধেকেরও কম। দুটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকায় গত কয়েক মাসে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে। তিনি আশা করছেন দ্রুত এর থেকে গ্রাহকরা পরিত্রাণ পাবেন। তিনি সবাইকে ধর্য্য ধরার অনুরোধে করেন।