দৈনিক ফেনীর সময়

অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র করার উপায়

অপবিত্র বস্তুকে  পবিত্র করার উপায়

মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম :

অপবিত্র বস্তু থেকে পবিত্রতা অর্জন করা মু’মিনের জন্য অপরিহার্য। অপবিত্র জিনিস গায়ে বা জামায় লাগলে তা ধুয়ে পবিত্র করা অত্যাবশ্যক। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেনÑ অবশ্যই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন (সূরা আল বাকারা-২২২)।

আরো ইরশাদ করেনÑ আর আপনার জামা পবিত্র করুন (সূরা মুদদসসির-৪)। মহানবী (স) বলেছেনÑ )পবিত্রতা ঈমানের অংগ)। অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র করার উপায় সমূহ হলো- ১. পবিত্র তরল বস্তু ঢেলে দেয়া: পবিত্র প্রবাহিত বস্তুর যেমন পানি বা অন্য কোন পবিত্র তরল বস্তু অন্য বস্তুকে পবিত্র করতে করতে সক্ষম। কোন ¯’ানে ময়লা বা এ জাতীয় কোন বস্তু দৃশ্যমান হলে পবিত্র তরল বস্তু ঢেলে দিলে সে জায়গা পবিত্র হয়ে যাবে। হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, একদা এক বেদুইন নত্ত মুসলিম মসজিদে পেশাব করে দেয়, তখন লোকেরা তাকে ঘিরে ধরে। মহানবী (স) তখন তাদেরকে বলেন, তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। রাসূল (স) আরো বললেন, তোমরা সহজ করার জন্য প্রেরিত হয়েছ, জটিল করার জন্য নয় (বুখারী, মিশকাত, হাদীস নং-৪৫১)। ২. ঘষা দেয়া: জুতার মধ্যে ময়লা বা অপবিত্র কোন জিনিস লাগলে ঘষা দিয়ে ময়লা দূরীভূত করলে জুতা পবিত্র হয়ে যাবে। মহানবী (স) বলেছেন- যখন তোমাদের কেউ জুতা দ্বারা কোন নাপাক বস্তু মাড়ায়, তবে মাটিই হলো তার জন্য পবিত্রকারী (আবু দাউদ ইবন মাযাহ)। ৩. সূর্যের আলোতে শুকনো: জমিনে পেশাব বা এ জাতীয় তরল নাপাকী পতিত হলে ঐ জায়গা সূর্যের আলোতে শুকিয়ে নিয়ে তা পবিত্র হয়ে যাবে। ৪. মশৃণ বস্তু মুছে ফেলা: মশৃন বস্তু যেমন আয়না, ছুরি, চাকু, তরবারী, নখ, হাড়, কাঁচ, তৈলাক্ত পাত্র ইত্যাদিতে অপবিত্র জিনিস পতিত হলে, তা কাপড় দ্বারা মুছে ফেললে পবিত্র হয়ে যায়। সাহাবায়ে কিরাম যুদ্ধের সময় রক্ত মাখা তরবারী মুছে তা নিয়ে নামাজ পড়তেন। ৫. টুকরা বা অংশ করা: কাঠ বা এ জাতীয় বস্তু টুকরা বা বিভিন্ন অংশ বিভক্ত করলে পবিত্র হয়ে যায়। ৬. বীর্য খুঁচিয়ে ফেলে দেয়া : পুরাতন জামার মধ্যে বীর্য পতিত হলে তা খুঁচা বা টুকা দিয়ে ফেলে দিলে জামা পবিত্র যায়। তবে শর্ত হলো পেশাব করার পর বীর্য বের না হওয়া। এবং জামা নতুন না হওয়ার কারণ পেশাব করার পর বীর্য বের হলে বীর্যের সাথে পেশাব লেগে থাকতে পারে। আর নতুন জামা বীর্যকে চুষে তার সাথে সম্পৃক্ত করবে। হযরত আয়শা (রা) বলেন, আমি মহানবী (স)- এর জামা থেকে খুঁচিয়ে বীর্য ফেলে দিতাম (মুসলিম, মিশকাত, হাদীস নং-৪৫৫)। ৭. ভিজা কাপড় দ্বারা শিংগা লাগানোর স্থান মুছে ফেলা: শিংগা লাগানো একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি। মহানবী (স)-এর সময় এর প্রচলন ছিল। তিনি শিংগা লাগাতেন। অত:পর ভিজা কাপড় দিয়ে শিংগা লাগানোর জায়গা মুছে ফেলতেন। ৮. আগুন দ্বারা পোড়ানো: আগুন দ্বারা গোবর ইত্যাদি পুড়ানো হলে তা ছাই হয়ে যায়। তখন সেই ছাই পবিত্র। ৯. মুল জিনিসকে পরিবর্তন করা: কোন বস্তুতে অপবিত্র জিনিস পতিত হলে, যদি মূল জিনিস পরিবর্তন করা হয়, তবে তা পবিত্র হয়ে যাবে। ১০. চামড়া দাবাগাত বা পরিশোধন করা: কাঁচা চামড়া অপবিত্র। কিন্তু যদি কাঁচা চামড়াকে লবণ কেমিক্যাল ইত্যাদি দিয়ে রৌদ্রে শুকানো হয়, তবে তা পবিত্র হয়ে যায়। মহানবী (স) বলেছেনÑ যখন কাঁচা চামড়া পরিশোধন করা হয় তখন তা পবিত্র হয়ে যায় (মুসলিম, মিশকাত হাদীস নং-৪৫৭)। ১১. অপবিত্র বস্তুসহ কিছু বস্তু ফেলে দেয়া: ঘি বা অন্য কোন জমাট বস্তুতে অপবিত্র বস্তু যেমন ইঁদুর ইত্যাদি পতিত হলে ইঁদুর সহ কিছু ঘি ফেলে দিলে অবশিষ্ট ঘি পবিত্র হয়ে যাবে এবং যা ব্যবহার করা বৈধ হবে। হাদীস শরীফে রয়েছে, মহানবী (স) কে ঘি-এর মধ্যে ইঁদুর পতিত হলে তার বিধান প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, যদি তৈল জমাট হয়, তবে ইঁদুর ও তার চতুসপাশের কিছু ঘি ফেলে দিলে অবশিষ্ট তৈল পবিত্র হয়ে যাবে। আর যদি তৈল তরল হয়, তবে তা খাওয়া যাবে না, তা দ্বারা উপকৃত হওয়া যাবে। ১২. পশু যবেহ করা: কোন পশুর মালিক বা মালিকের অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তি যদি বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পশু যবাই করে, তবে উক্ত পশুর গোশত খাওয়া হালাল হবে। যবাই করা ব্যতীত পশুর গোশত খাওয়া হালাল নয়। তদ্রƒপ অনুমতি ব্যতীত একজন অন্যজনের পশু যবাই করা জায়েয নয়। ১৩. কুপ থেকে নিদিষ্ট পরিমান পানি ফেলে দেয়া: কুপের মধ্যে যদি কবুতর, মুরগি, বিড়াল ইত্যাদি প্রাণী পড়ে মারা যায় এবং তা না ফুলে ও না ফাটে, তবে প্রাণীটি ফেলে দেয়ার পর চল্লিশ বালতি পানি ফেলে দিতে হবে। এ গুলোর চেয়ে ছোট প্রাণী পড়ে মারা গেলে বিশ বালতি পানি ফেলে দিতে হবে। অত:পর কুপের অবশিষ্ট পানি পবিত্র হবে। ১৪. এক দিক দিয়ে পানি প্রবেশ করিয়ে অন্যদিক দিয়ে বের করে দেয়া: খাল বা নালায় অপবিত্র বস্তু পতিত হলে খালের একদিকে দিয়ে পানি প্রবেশ করিয়ে অন্যদিক দিয়ে বের করে দিলে খাল বা নালার অবশিষ্ট পানি পবিত্র হয়ে যাবে। ১৫. মাটি পরিবর্তন করা: মাটির উপরের অংশে অপবিত্র বস্তু পতিত হলে, উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে আনলে উক্ত মাটি পবিত্র হয়ে যাবে। ১৬. মূল বস্তুকে বিভক্ত করা: একই জাতীয় বস্তুর স্তুপে অপবিত্র বস্তু পতিত হলে স্তুপকে কয়েক ভাগে ভাগ করলে কোন ভাগে অপবিত্র বস্তু রয়েছে তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না, হলে উক্ত বস্তু দ্বারা উপকৃত হওয়া জায়েয।তবে পবিত্র হবে না। (আল আশক ওয়ান নাযাইব-২য় খন্ড তাহারাত অধ্যায়, পৃষ্ঠা-১৬৭-১৬৮)। ১৭. মাটি দ্বারা ঘষা ও পানি দ্বারা ধৌত করা: কুকুর কোন পাত্রে মুখ দিলে উক্ত পাত্র প্রথমবার মাটি দ্বারা ঘষা দিলে, তারপর সাতবার পানি দ্বারা ঘৌত করলে উক্ত পাত্র পবিত্র হয়ে যাবে।

অপবিত্র বস্তু সমূহ : নিম্ন বর্ণিত জিনিস সমূহ অপবিত্র। ১. কুকুর ও শুকুরের উচ্ছিষ্ট, ২. রক্ত, ৩. সর্ব প্রকার প্রাণীর মল-মুত্র, ৪. বীর্য, ৫. মানুষের বমি ও মল-মুত্র, ৬. শুকরের গোশত ও তার দেহের সব কিছু, ৭. মদ, ৮. কুকুর, ৯. মলখায় এমন প্রাণী।

পবিত্র বস্তু সমূহ : পবিত্র বস্তু সমূহ হলো ১. শহীদের রক্ত তার নিজের জন্য পবিত্র, ২. পশু যবাই করার পর গোশতের সাথে লেগে থাকা রক্ত, ৩. রগের সাথে লেগে থাকা রক্ত, ৪. কলিজা ও তিল্লির রক্ত, ৫. রক্ত মানুষের শরীর থেকে বের হয়ে প্রবাহিত না হলে, ৬. দাশের রক্ত, ৭. ছাড় পোকার রক্ত, ৮. উকুনের রক্ত, ৯. মাছের রক্ত, ১০. পাখির বিষ্ঠা, ১১. মানুষের উচ্ছিষ্ট, ১২. হালাল প্রাণীর উচ্ছিষ্ট ১৩. গাধা, খবর, হিংস্র জন্তু ও শিকারী পাখির উচ্ছিষ্ট, যদি নাপাকী কিছু আহার করে না আসে, ১৪. বিড়ালের উচ্ছিষ্ট, যদি ইঁদুর খেয়ে না আসে।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!