নিজস্ব প্রতিনিধি :
সোনাগাজীতে পেটে আঘাত করা ছোরাসহ ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধু হাজেরা খাতুন (২৮) ও বিছানা থেকে তার ছেলে ইমরান হোসেন (৭) এর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় এক বছর বয়সী ছোট ছেলে ইরফান হোসেনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের আহাম্মদপুর এলাকার কাজীপাড়ায় এ ঘটনায় ঘটে। ঘটনার পর থেকে হাজেরার স্বামী মো: সোহেল পলাতক।
হাজেরার মায়ের দাবী, পারিবারিক কলহের জের ধরে তার মেয়ে হাজেরা খাতুনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার পর গলায় রশি বেঁধে ঘরের আড়ার সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে এবং নাতি ইমরানকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ রেখে পালিয়েছে সোহেল। তার ছোট নাতিকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, দীর্ঘদিন ধরে যৌতুকের দাবিতে হাজেরার সঙ্গে তার স্বামী রিকশা চালক মো: সোহেলের পারিবারিক বিরোধ চলে আসছে। সোমবার সকালেও পারিবারিক কলহের জের ধরে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর সোহেল রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। স্থানীয়দের ধারনা, সকাল ১০-১২টার মধ্যে কোন এক সময় বাড়িতে এসে সোহেল তার স্ত্রীকে পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যার পর গলায় রশি বেঁধে লাশ ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। এসময় সন্তানরা ঘটনা দেখে ফেলায় বড় ছেলেকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং ছোট ছেলেকে শ্বাসরোধ ও কিছু খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করে মৃত ভেবে লাশ ঘরে খাটের ওপর ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। হত্যাকান্ডের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় শতশত মানুষ ওই বাড়িতে ভিড় জমান।
আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল হক হিরন বলেন, খবর পেয়ে তিনি ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। দুটি লাশ দেখে মনে হচ্ছে তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর একজনের লাশ রশি দিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর ছেলের লাশ খাটের ওপর পড়ে আছে। তার ধারনা, পারিবারিক কলহের জের ধরে সোহেল তার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করেছে। তবে পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করবে।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো: খালেদ হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের অবস্থা দেখে পরিস্কার হন যে এটি একটি হত্যাকান্ড। এতে কোন সন্দেহ নাই। হাজেরার মা বলেছে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহের জের ধরে হাজেরার সঙ্গে স্বামী সোহেলের বিরোধ চলছে। এরই জের ধরে সোহেল হাজেরা ও ইমরানকে হত্যা করেছে। ছোট ছেলেকেও হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশ ও স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় ছোট ছেলেকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী সোহেল পলাতক রয়েছে। বিকালে কুমিল্লা থেকে সিআইডির একটি বিশেষ দল এসে ঘটনাস্থল থেকে হতাকান্ডের বিভিন্ন ধরনের আলামত সংগ্রহের পর প্রাথমিক তদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী শেষে দুটি লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িত বা জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে পুলিশ, পিবিআই, র্যাব সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন।