মোজাম্মেল হোসেন :
কবি আল মাহমুদ। পুরো নাম মীর আবদুস শুক্কর আল মাহমুদ। বাল্যকালে আল মাহমুদ মোল্লা বাড়ির পিয়ারু নামে পরিচিত ছিলেন। শিকড় সন্ধানী কবি আল মাহমুদ জীবনকে উপভোগ করেছেন জীবনের খুব কাছে গিয়ে। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি। আল মাহমুদ একাধারে কবি, গবেষক, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, সাংবাদিক এবং শিশু সাহিত্যিক। এককথায় বলা যায় সাহিত্যের সকল শাখাতে ছিলো কবির অবাধ বিচরণ। সৃষ্টির উল্লাসে ছয় দশকের অধিক সময় সাহিত্য সৃষ্টির পথে হেঁটেছেন কবি। রবীন্দ্র-উত্তর আধুনিক কালের কবিদের মধ্যে শব্দচয়নে, জীবনবোধে, ছন্দের জাদুময়তায়, ভাব-ভাষার বর্ণনায় যিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি কবি আল মাহমুদ। বাংলা কবিতায় যে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার উন্মেষ ঘটেছে তিনি তার প্রাণপুরুষ। গদ্যপদ্য মিলে তাঁর সৃষ্টির পরিধি অনেক দীর্ঘ। মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে অনায়াসে হেঁটে গিয়েছে আল মাহমুদের কবিতার লাঙ্গল। কবির এ লাঙ্গল বাংলা কাব্যের জমিনকে করেছে উর্বর। আল মাহমুদের কবিতার বায়োস্কপে চোখ রাখলে সে উর্বরতার দৃশ্যে বিমোহিত হতেই হয় নিঃসন্দেহে।
১৯৩৬ সাল, জুলাই মাসের এগারো তারিখে প্রবল বর্ষণমুখর কোন এক সন্ধ্যারাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ‘সোনালী কাবিনের’ এই বিদগ্ধ কবি। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এ বরণ্যে কলমযোদ্ধা। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২-৭৪ সাল পর্যন্ত ‘দৈনিক গণকন্ঠ’ পত্রিকার সম্পাদকের গুরু দায়িত্বও পালন করেন কবি আল মাহমুদ। কবির প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে,
কবিতাঃ লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালি কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, প্রহরান্তরের পাশ ফেরা, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, মিথ্যেবাদী রাখাল, আমি দূরগামী, বখতিয়ারের ঘোড়া, দ্বিতীয় ভাঙন, নদীর ভেতরে নদী, উড়াল কাব্য, বিরামপুরের যাত্রী, বারুদগন্ধী মানুষের দেশে, তুমি তৃষ্ণা তুমিই পিপাসার জল, অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না, ইত্যাদি। পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধবনিক, ময়ূরীর মুখ, নীল নাকফুল, কলংকিনী জ্যোর্তিবলয়, আল মাহমুদের গালগল্প ইত্যাদি ছোট গল্পগ্রন্থ। উপন্যাসঃ কাবিলের বোন, উপমহাদেশ, চেহারার চতুরঙ্গ, নিশিন্দা নারী, ইত্যাদি। শিশুতোষ গ্রন্থঃ পাখির কাছে ফুলের কাছে। প্রবন্ধঃ কবির আত্মবিশ্বাস, কবির সৃজন বেদন, আল মাহমুদের প্রবন্ধ। এছাড়া ভ্রমণ কাহিনি ও আত্মজীবনী লিখেছেন কবি।
১৯৫০-এর দশকে যে কয়েকজন কবি ও লেখক ভাষা আন্দোলন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষন নিপীড়ন এবং পাকিস্তানি সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে কলম হাতে যুদ্ধ চালিয়েছেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। আল মাহমুদ পুরো জীবনটাই কবিতার সাথে কাটিয়েছেন। কবির জীবনের সাথে দারুণভাবে মিশে আছে বাংলাদেশের বাঁক-বদলের ইতিহাস। কবি হয়েও পাঠকের কাছে চমৎকার ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ। যাদের লেখনী শক্তিতে বাংলা কবিতা আধুনিকতার স্পর্শ পেয়েছে, কবি আল মাহমুদ তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট লেখক ও সমালোচক শিবনারায়ণ রায় বলেছিলেন, “বাংলা কবিতায় নতুন সম্ভাবনা এনেছেন কবি আল মাহমুদ, পশ্চিম বাংলার কবিরা যা পারেনি তিনি সে অসাধ্য সাধন করেছেন।” মনে হয় ঐশ্বরিক কোন ক্ষমতা ছিলো তাঁর কলমে। তিনি বাংলা কবিতাকে দিয়েছেন নতুন মাত্রা। আঙ্গিকে, চেতনায়, বাকরীতি ও ছন্দে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা কাব্য জগত। বলা হয় আল মাহমুদ কবিতার সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্ম গ্রহণ করেছেন। কাব্য কাননে আল মাহমুদের কবিতা নিত্য ফুল হয়ে ফুটতো। কবিতার সঙ্গেই গড়ে তুলেছেন নিজের একান্ত ঘর-সংসার। কবি নিজেই বলেছেন ‘কবিতাই আমার জীবন। আল মাহমুদের কবিতা সম্পর্কে আবিদ আনোয়ার বলেছেন- ‘পঞ্চাশের দশকে আবির্ভূত কবি আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান পুরুষ’।
বাস্তবেও তাই দেখা যায়। মাত্র আঠারো বছর বয়স থেকে শক্তিমান এ কবির কবিতা প্রকাশ হতে থাকে বিভিন্ন সাময়িকী ও পত্রিকায়। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’ আল মাহমুদকে স্বনামধন্য কবিদের সারিতে জায়গা করে দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে কবির প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘পানকৌড়ির রক্ত’ প্রকাশিত হয়। প্রথম উপন্যাস ‘কবি ও কোলাহল’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। এত কিছুর পরেও তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন কবি এবং শুধুই কবি। আল মাহমুদের কবিতার প্রধান উপজীব্য বিষয় নগর সভ্যতার প্রেক্ষাপটে ভাটি বাংলার জনজীবন। গ্রামীণ আবহ, নদীনির্ভর কৃষি জনপদ এবং নরনারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহ।
আল মাহমুদের সাহিত্যকর্মে যে জীবন দর্শন লক্ষ্য করা যায়, তাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। লোক-লোকান্তর থেকে সোনালি কাবিন পর্যন্ত প্রথম পর্ব। ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’ থেকে ইতিহাস দেখ বাঁক ঘুরে গেছে ফের ইতিহাসে ( মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ) পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্ব।
আল মাহমুদের কবিতায় প্রধান বিষয় হলো নারী। নারী জীবনের প্রকৃতি, মহাপ্রকৃতি উঠে এসেছে তার কবিতায়। কবি লিখেছেন জীবনের প্রয়োজনে, মানুষের আনন্দ ও সৌন্দর্যকে জাগ্রত করার জন্য। কবি তাঁর বেশিরভাগ কবিতায় নারীকে করেছেন শ্বাশত প্রেমের পূজারি। নিসর্গের মাঝেও কবি খুঁজেছেন অনিবার্য সে প্রেম, যা সৃষ্টির কার্যকারণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে।
কবি অকপটে স্বীকার করেছেন- আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো প্রেম ও নারী। তবে কবি নারী ও নারীর সৌন্দর্যকে এক না করে আলাদা দেখতে চান। কারণ নারীকে সবাই একরকম দেখে না। একজনের কাছে নারী সুন্দর, অন্য জনের কাছে ঐ একই নারী সুন্দর না ও হতে পারে। তাই কবি নারীকে সুন্দর না বলে আকর্ষণীয় বলতে চান। এর অর্থ নারী আকর্ষণ করে, নারীর মধ্যে আকর্ষণ করার শক্তি আছে। সেই আকর্ষণ বা শক্তির কেন্দ্রবিন্দু থেকে নারী ও প্রেমের বিষয়টি তার কবিতায় এতো ব্যাপকভাবে এসেছে।
আল মাহমুদের কাছে নারীর অস্তিত্ব কেবল কাম-চর্চার জন্য। নারী একসময় জননী হয়ে সংসারের গোড়াপত্তন করে, সে উপলব্ধি একদম ছিলো না কবির কাছে। তার কবিতা পাঠে মনে হয়, পুরুষ যেন নারীর প্রভু। অথচ জীবনে সুখী হতে হলে উভয়ের সহযোগিতার প্রয়োজন। কিন্তু আল মাহমুদের কাছে মানবজীবনের এই সহজ বাস্তবতা একেবারেই যেন উপেক্ষিত। আল মাহমুদ একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন : ‘আমার ক্রোধ নেই, কিছুটা থাকলেও সেটা আমার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। তেমনি তীব্র ঘৃণাও নেই আমার। তবে কামস্পৃহা খুব তীব্র। আমি সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। সব সময় প্রার্থনা করি কাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অর্জনের জন্য। তবে কাম প্রবৃত্তিই হয়তো কবিতা হয়ে বেরিয়ে এসে আমাকে প্রশমিত করে’ (নোঙর : আল মাহমুদ সংখ্যা, চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র, মার্চ ২০১৭, পৃষ্ঠা নং-১৮৯)
নারীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আল মাহমুদ নারীকে তুলনা করেছেন ভাঁজ করা জামদানির সাথে।কারুকার্য শোভিত জামদানির সৌন্দর্য দেখে যেমন আপ্লুত হয় হৃদয় চোখ, তেমনি অঙ্গ সৌষ্ঠবে অপরূপ রূপ লাবণ্যে নারীকে সৃষ্টি করেছেন বিধাতা। সে সৌন্দর্যে আপ্লুত কবির তনু মন। কবি বলেন-
নারী হলো একটা ভাঁজ করা জামদানি।
আমি আড়চোখে দেখি এর গোপন চুমকির কাজ”।
কি অসাধারণ ভাবের প্রকাশ! চিন্তার নান্দনিক উৎকর্ষতা! শব্দের ব্যঞ্জনায় নারীকে কতো চমৎকার করে উপস্থাপন করেছেন কবিতায়। প্রকৃতি ও নারীর এমন গলাগলি আল মাহমুদের কবিতাকে করে তুলেছে মায়াবী চেতনার বাহন। যে বাহনে চড়ে পাঠক অনায়াসে করতে পারে আবেগের জলে অবগাহন।
প্রেম, প্রকৃতি ও নারী এ তিনের চমৎকার সম্মিলন এবং উপমার শৈল্পিক বুনন লক্ষ্য করা যায় কবি আল মাহমুদের ‘মাপজোক’ কবিতায়-
আমাকে কতোটা উঁচু দেখায়, তা মাপতে গিয়েছিলাম,
কিন্তু যা কিছু সামনে ধরে দাঁড়াবার ছিল- পাহাড় পর্বত গাছ
কোন কিছুই আমার ভর সইতে পারলো না।
———
হেসে বললে- এই তো আমি তোমার ভর সইবার মত নগ্ন কাঁধ
তোমার টান সইবার মত উন্মুক্ত বাহু
আমি নারী, মাপো আমাকে।
একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, আল মাহমুদের সবচেয়ে বিখ্যাত, সাড়া জাগানো এবং পাঠকনন্দিত কাব্যগ্রন্থ হলো ‘সোনালী কাবিন’ (১৯৭৩)’। কবি নিজেও একথা বলতেন। সোনালি কাবিনে আবহমান বাংলার গ্রামীণ সমাজ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মিথ অনুষঙ্গ হিসেবে প্রকাশ পেলেও, স্পষ্টভাবে নারীর প্রতি কবির গভীর প্রেমও প্রকাশ পেয়েছে। এ একটি কাব্যই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে মহাকালের অক্ষয় সীমান্তে। মানস সুন্দরীর কাছে নিজেকে ভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ করার কৌশল দেখা যায় তাঁর কবিতায়। প্রিয়জনের কাছে আত্মসমর্পণই এক অর্থে প্রেমকে নতুনভাবে উন্মোচিত করে এবং গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে। প্রেমের এ নতুন উপলব্ধি প্রকাশ পায় আল মাহমুদের কবিতায়-
‘সোনার দিনার নেই,
দেন মোহর চেয়ো না হরিণী
যদি নাও, দিতে পারি
কাবিনহীন হাত দুটি।
‘সোনালি কাবিন’ কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম কবিতায় কবি লিখেছেন-
বিবসন হও যদি দেখতে পাবে আমাকে সরল
পৌরুষ আবৃত করে জলপাইর পাতাও থাকবে না;
তুমি যদি খাও তবে আমাকে দিও সেই ফল
জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরস্পর হবো চিরচেনা পরাজিত নই নারী, পরাজিত হয় না কবিরা;
দারুণ আহত বটে আর্ত আজ শিরা-উপশিরা।’
লোক লোকান্তরদ-কাব্যগ্রন্থের দসিম্ফনিদ কবিতায় শুধু রমণীর শরীরকে আরাধ্য করেননি তিনি, কবি লিখেছেন-
শঙ্খমাজা স্তন দুটি মনে হবে শ্বেতপদ্ম কলি
লজ্জায় বিবর্ণ মন ঢেকে যাবে ক্রিসেনথিমামেদ।
‘শোকের লোবানদ কবিতা নিবেদিত নারীর দাবি পূরণের গল্প-ভালোবাসার কথা তুলে ধরেছেন এভাবে-
নগ্ন হও, শিশু যেন দ্যাখোনি পোশাক
ভালোবাসো, তামসিক কামকলা শিখে এলে
যেন এক অক্ষয় যুবতী
তখন কবিতা লেখা হতে পারে একটি কেবল
যেন রমণে কম্পিতা কোনো কুমারীর নিম্ননাভিমূল।
‘শূন্য হাওয়াদ কবিতায় কামবিন্দুকে ঘিরে নারী-পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ইতিবৃত্ত গড়ে উঠেছে-
দঘুমের ছল কামের জল
এখনো নাভিমূলে,
মোছেনি তবু আবার এলো
আগের শয্যায়।
প্রকৃতি ও নারীর প্রতি মুগ্ধতার চমৎকার উদাহরণ খুঁজে পাই কবির ”আত্মার কুহুধ্বনি” কবিতায়-
“কত নারী কত ঘাটে কত বাটে মাঠে তেপান্তরে
আমাকে তাদের বশীকরণের ফুঁৎকারে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে।
আমি কেঁপেছি ঠিকই,
কিন্তু এক দৈব নির্দেশের মতো আমার ভেতরের কোকিল
আমাকে ডাকতে ডাকতে পার করে নিয়েছে তেপান্তরের মাঠ থেকে ।
কিছু কিছু কবিতায় আল মাহমুদের নারী অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ও কামোদ্দীপক। নারীদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গের বর্ণনা চিত্রকল্পের সাহায্যে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছেন।
‘আমার চুম্বন রাশি ক্রমাগত তোমার গতরে
ঢেলে দিবো চিরদিন মুক্ত করে লজ্জার আগল।
এর ব্যতিক্রমে বানু এ-মস্তকে নামুক লানৎ
ভাষার শপথ আর প্রেমময় কাব্যের শপথ।’
কামউদ্দীপনা সৃষ্টিকারী হিসেবে নারীর যৌনতা, আকাঙ্ক্ষা ও ভোগের লালসাকে তিনি শিল্পের অংশ হিসেবেই দেখছেন।
প্রকৃতির সাথে নিবিড় সম্পর্ক, সোঁদামাটির ঘ্রাণ, গ্রামীণ জীবন এবং ঐতিহ্য, লোকজ উপাদানের ব্যবহারে আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন।
ফুল পাখি নদী এসব আল মাহমুদের কবিতায় স্থায়ী নিবাস তৈরি করেছে। তাইতো কবি প্রকৃতি ও তিতাস নদীকে অমরত্ব দিয়েছেন তার কবিতায়।
তিতাস একটি নদীর নাম’ কবিতায় এই নদী মেঘনার শান্ত মেয়ে। যে নদীটি কবির অসংখ্য গল্প কবিতা উপন্যাসে স্থান পেয়েছে। কবি বলেছেন-
মেঘনার শান্ত মেয়ে তিতাসে
মেঘের মতো পাল উড়িয়ে কি যে ভাসে। (ভরদুপুরে)
তিতাস কবিতায়ও প্রকৃতি ও নারীর প্রেমে মুগ্ধতার সন্ধান মিলে-
সারাদিন তীর ভাঙে, পাক খায়, ঘোলা স্রোত টানে
যৌবনের প্রতীকের মতো অসংখ্য নৌকার পালে
গতির প্রবাহ হানে। মাটির কলস জল ভরে
ঘরে ফিরে ছলিমের বউ তার ভিজা দুটি পায়।
নদীর ভিতরে নদী কবিতায়ও চিরন্তন প্রেম প্রকৃতি সাড়া দিয়েছে কবি হৃদয়ে। কবি লিখেছেন –
“তোমার গোসুল আমি দেখেনি কি একদা তিতাসে?
মনে পড়ে? শ্মাশান ঘাটের সেই সিঁড়ি ছুঁয়ে নেমে যায় জল
ডোবা সে পাদপদ্ম। সাফরী পুঁটির ঝাঁক আসে আঙুল ঠুকরে খেতে। নদী যেন নদীতে পাগল।’
মানব জীবনের অন্যতম অনুসঙ্গ প্রেম,প্রকৃতি ও নারী, সবই যেন মিলেমিশে একাকার আল মাহমুদের কবিতার মোহনায়। যে কবিতা বাস্তব জগত অতিক্রম করে কল্পনা জগতের সৌন্দর্য আস্বাদন করতে পারে তাই মহৎকবিতা। কবি আল মাহমুদ সে মহৎ কবিতার জনক। সীমার মাঝে অসীমকে ধারণ করার যে ক্ষমতা তা কেবল আল মাহমুদের মতো মহৎ কবির পক্ষেই সম্ভব। বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তিতুল্য কবি ও শক্তিমান কথা সাহিত্যিক আল মাহমুদ ধুলোমাটির এই পৃথিবীর সমস্ত মায়া ছিন্ন করে বিদায় নিয়েছেন আমাদের থেকে। কবির মৃত্যু যেন মৃত্যু নয়। এ যেন অমৃতের পথে মহাপ্রয়াণ। ধ্রুবতারার মতো তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর সাহিত্য কর্মে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক (বাংলা)।