মোহাম্মদ সফিউল হক :
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন ও বিরোধী দলের আন্দোলন নিয়ে দুইটি গল্প মনে পড়লো। আজ গল্প দুইটিই বলছি।
গত ১৭ জুলাই ২০২৩ ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে ৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী আরাফাত, লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির সিকদার আনিসুর রহমান, একতারা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম), গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির কাজী রশিদুল হাসান, ছড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আক্তার হোসেন, ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র তরিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, ডাব প্রতীকে বাংলাদেশ কংগ্রেসের রেজাউল করিম স্বপন ও সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান। ঢাকা উত্তর সিটি করর্পোরেশনের ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড এবং ঢাকা সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনে ভোটকেন্দ্র আছে ১২৫টি এবং ভোটার ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। এই নির্বাচনে হিরো আলম হামলার শিকার হয়। এই নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ৬ শতাংশ। ভোট শেষে কমিশন বিবৃতি দিলো… “বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণ।” এই প্রসঙ্গে একটা পুরনো গল্পের কথা মনে পড়ে গেল…..
আগেকার দিনে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষই কলকাতায় চাকরি করতে এসে মেসে থাকতেন। কেউ সপ্তাহে কেউবা মাসে একবার বাড়ি যেতেন। এক ভদ্রলোক এক-মাস বাড়ি যাননি, একদিন সকালে তার গ্রামের বাড়ির চাকর এসে হাজির।
ভদ্রলোক :- কিরে তুই হঠাৎ, ওদিকের সব খবর ভালো তো?
চাকর :- হ্যাঁ বাবু, কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সব ভালো।
বাবু :- বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কি হয়েছে ?
চাকর :- তেমন কিছু নয়, শুধু ওই কোদালটা ভোঁতা হয়ে গেছে।
বাবু :- তা কোদালটা ভোঁতা হল কি করে?
চাকর :- কোদালের আর দোষ কি বলেন, গ্রামের বাইরে ওই পাথুরে মাটি কোপানো কি কোদালের কাজ?
বাবু :- তুই খামোখা পাথুরে মাটি কোপাতে গেলি কেন ?
চাকর :- খামোখা কেন হবে, আপনিতো বলেছিলেন লালি, আপনার পেয়ারের ঘোড়াটা মরলে যেন ওকে ভাগাড়ে না ফেলে কবর দেওয়া হয়।
বাবু :- কি বললি? লালি মারা গেছে? তিন বছরের ঘোড়া মরল কি করে?
চাকর :- তিন বছরের তো কি হলো, আপনার অত বড় ফলন্ত আমগাছটা কাটছিলাম, আর ঘোড়াটা সেই সময় গাছের নিচে এসে দাঁড়ালো, আর গাছটা পড়বি তো পড় ঘোড়াটার উপরেই পড়লো, আর বাঁচে?
বাবু :- হারামজাদা, তুই আমগাছ কাটছিলি কেন ?
চাকর :- কি করব, মা-ঠাকরুন তো আপনার সামনেই কতবার বলেছিলেন, তেনার শেষ যাত্রায় যেন ওই গাছটাই দেওয়া হয়।
বাবু :- অ্যাঁ! আমার মা আর নেই, ও-মাগো, বেশ তো সুস্থ দেখে এলাম, কি হয়েছিল মার ?
চাকর :- শোক বাবু শোক, নাতির শোকটা সামলাতে পারলেন না।
বাবু :- তার মানে? আমার ছেলে, আমার ছেলে-টাও আর নেই। অ্যাঁ! সে গেল কি করে? হায়, হায়, হায়। তুই তাকেও খেয়েছিস ?
চাকর :- অন্যায্য কথা বলবেন না বাবু, মা মরা দুধের শিশু কদিন বাঁচে বলুন? তবে যাই বলুন কত্তা।
এই কয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া খবর কিন্তু সবই ভালো।
দেখি না কী করে’ সিনড্রোম
কৌতুক অভিনেতা ভানুর সেই কৌতুকটা! ভানু পুলিশের কাছে গেলো একটা নালিশ নিয়ে। গতরাতে তার বাড়ি চুরি হয়েছে। পুলিশ জিজ্ঞেস করলেন- চোর কে সেটা কি আপনি দেখেছেন? ভানু বললো- হ্যাঁ দেখেছি। চোর ব্যাটা তো আমার সামনেই সব চুরি করলো। ঘরে চোর ঢুকলে, ভানু টের পেয়েও নিঃশব্দে পড়ে রইলো বিছানায়। ভাবলো ‘দেখি না কী করে’। সিঁদ কেটে চোর ঘরে ঢুকে, মূল্যবান জিনিস নিলো; ভানু ভাবছে ‘দেখি না কী করে’। চোর কাজ শেষ করে যাওয়ার আগে ভানুর খাটের মশারি তুললো যেখানে ঘুমন্ত স্ত্রীসহ ভানু ঘাপটি মেরে পড়ে ছিলেন; চোর ভানুর বৌয়ের গলার সোনার হার খুলে নিলো। দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো, ভানু তখনও ভাবছেন, ‘দেখি না কী করে’। এবার পুলিশ বললেন, আপনার নিজের ঘরে চুরি হয়েছে আপনি যদি জেগে থেকে ‘দেখি না কী করে’ ভেবে চুপটি করে বসে বসে দেখতে পারেন, তবে পুলিশকেও দেখতে হবে, ‘দেখি না কী করে’!
বিএনপি এবং বিরোধী জোটগুলো এখন ভানুর মতই ‘দেখি না কী করে’ সিনড্রোম ভুগছে। তাদের দেখাদেখি সব বাঙালিও এখন এক-একজন ভানু হয়ে গেছে।
আগামীর সুন্দর বাংলাদেশের জন্য আমরা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না।