নিজস্ব প্রতিনিধি :
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার অন্যতম শতবছরের প্রাচীন বিদ্যাপিঠ ফেনী সরকারি কলেজের পুরোনো লাল দালানের দ্বিতীয় তলায় ছিল লাইব্রেরি। পর্যাপ্ত আলো স্বল্পতা, গাদাগাদি করে রাখা বই, ভুতুড়ে পরিবেশ ও আসন সংকটের কারনে পাঠক আকর্ষন করতে পারেনি এ লাইব্রেরি। সম্প্রতি কলেজের কমিশনার জয়নাল আবদীন ভবনের নিচ তলায় স্থানান্তরের পর লাইব্রেরির চেহারা বদলে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইনের উদ্যোগে লাইব্রেরির পরিবেশ আগের মতো নেই। কমিশনার জয়নাল আবদীন ভবনের নিচ তলার অর্ধেকাংশজুড়ে নবরুপে সাজানো হয়েছে। অবহেলা-অনাদরে থাকা লাইব্রেরি প্রাণ ফিরে হয়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন। বই রাখার আলমারি থেকে শুরু করে সর্বত্র লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। বসার টেবিলের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। আলমিরা ভর্তি বই থরে থরে সাজানো হয়েছে। কলেজ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।
ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান আরজিনা আক্তার চৌধুরী জানান, লাইব্রেরিতে ২০ হাজার বই রয়েছে। এর মধ্যে খ্যাতনামা মনীষী সহ দেশের বিশিষ্টজনের জীবনী, মুক্তিযুদ্ধ, গল্প, উপন্যাস, রেফারেন্স বই রয়েছে। শত বছর আগের দুর্লভ অসাধারণ কিছু বইও রয়েছে। ভারতের সম্রাট আশোকার জীবনীমূলক বইও রয়েছে। ২০০১ সালের ২৬ অক্টোবর ওই বইটির উপর শাহরুখ ও কারিনা কাপুর অভিনিত সিনেমা হয়েছে।
কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি নোমান হাবিব জানান, পুরোনো লাল বিল্ডিং পরিত্যাক্ত ঘোষনার পর লাইব্রেরিতে ছাত্র-ছাত্রীরা যেতে চাইতো না। আগে বসার মতো পরিবেশও ছিল না। এখন পরিবেশ হয়েছে। এখন নতুন ভবনে সবার ভালো লাগবে। সুসজ্জিত পরিবেশে শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিমুখী হবে।
ছাত্র সংসদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক নুর করিম জাবেদ জানান, লাইব্রেরিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারে ব্যাপক বই রয়েছে। নতুন প্রজন্ম বই পড়ে প্রকৃত তথ্য জানার সুযোগ রয়েছে।
ছাত্র সংসদের ভিপি তোফায়েল অহামেদ তপু জানান, কলেজের সমৃদ্ধ লাইব্রেরি থাকলেও শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে আসছিল না। নতুন লাইব্রেরি পাঠকবান্ধব হয়েছে। আশা করি শিক্ষার্থীরা এখান থেকে অনেক উপকৃত হবে।
শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক জয়নাল আবদীন বলেন, পড়ার জন্য উপযুক্ত স্থান ও পরিবেশ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরিমুখী করতে বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন নবরুপে সজ্জিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা নিজেকে গড়ে তুলতে ও গবেষনাকাজে নিয়োজিত করতে ভূমিকা রাখবে।
কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেন বলেন, আমি নিজেও ১৯৮১-৮২ ব্যাচে কলেজের ছাত্র ছিলাম। আমাদের সময় লাইব্রেরিটি লাল বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় ছিল। ওই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হলেও এতদিন সেখানে কার্যক্রম চলছিল। পড়ালেখার মানউন্নয়নের লক্ষ্যে লাইব্রেরিতে পড়তে পারে সেজন্য সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন বলেন, নবরূপে নতুন স্থানে লাইব্রেরি স্থানান্তর করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা বসে পড়াশোনা করতে পারবে। তারা জ্ঞানচর্চা করতে পারবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস রয়েছে। লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে গবেষনা কর্ম হতে পারে আমাদের সেই চেষ্টা রয়েছে। চিন্তা-চেতনা, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে শিক্ষার্থীরা সমৃদ্ধ হতে পারে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
১৯২১ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯২২ সালের ৮ আগস্ট ফেনী কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও কলেজ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর। কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ফেনী হাই ইংলিশ স্কুল (বর্তমানে সরকারী পাইলট হাই স্কুল) এর সেক্রেটারি রমনী মোহন গোস্বামীর কাছ থেকে ১৯১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর রেজুলেশনের মাধ্যমে অনুমোদনপ্রাাপ্ত হয়ে ফেনী ও বিরিঞ্চি মৌজায় কলেজ বোর্ড অব ট্রাষ্টীগণের পক্ষে খাঁন বাহাদুর মৌলভী বজলুল হক ও গুরুদাস কর ১শ টাকা ৪ কিস্তিতে পরিষদের শর্তে ৫ বিঘা ১৮ কাঠা ভূমি গ্রহণ করেন।