অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের দুই মাস শেষ হলো। বাজার থেকে প্রশাসন সব ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি অব্যাহত আছে। রাস্তায় কোনো শৃঙ্খলা নেই। গণপরিবহন, প্রাইভেট গাড়ি ইচ্ছে মতো সড়কে চলছে। গণপরিবহনে ভাড়ার কোনো সিস্টেম মানছে না। বাজারব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বিগত সরকারের তুলনায় বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সময়ের নিত্যপণ্যের বাজার সম্পূর্ণভাবে অনিয়ন্ত্রিত। কারণ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। বিগত সরকারের অনেক ব্যবসায়ী মামলা হামলার ভয়ে ছটকে পড়েছে। ফলে ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ। আট দশ নামের তফসিলি ব্যাংক গ্রাহককে চাহিদা মতো টাকা দিতে পারছে না। ওই সব ব্যাংকে তারুল্য সংকট বিদ্যমান। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিষ্কার করে কোনো ব্যাংক সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে না। ফলে গ্রাহক মহল চরম উদ্বিগ্নতার মধ্যে আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংক সম্পর্কে বিভিন্ন সময় নেতিবাচক কথাবার্তা হচ্ছে। এক কথায় এক বিশৃঙ্খল পরিবেশে বাজার ব্যবস্থা ব্যাংক লেনদেন অর্থনৈতিক পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ।
জনগণ বুকভরা আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল অন্তত নিত্য পণ্যের ক্রয়ক্ষমতা নাগালের মধ্যে পেয়ে যাবে। কিন্তু অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের দুই মাসে জনগণ বাজার ব্যবস্থাপনায় কোনো প্রকারের শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ দেখছে না। অনিয়ন্ত্রিত বাজার। লাফিয়ে লাফিয়ে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত। নতুন করে চালসহ মাছ মাংস তরিতরকারী কোনো সময় নিয়ন্ত্রিত আবার কখনো কখনো আকাশচুম্বী দামে নাগালের বাইরে চলে যায়। ডিম, আলু, শাক সবজি সব ধরনের তরকারির দাম শত টাকা অতিক্রম করে চলছে। বাজার মনিটরিং এর জন্য সরকারি-বেসরকারি একাধিক সংস্থা কাজ করলেও জনগণ তার ফল খুব একটা ভোগ করতে পারেনা। আসলে বাজারমূল্য বেচা-বিক্রি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় সাধারণ জনগণ সেটা বুঝে উঠতে পারেনা। দাম বাড়লেই জনগণ বলে থাকেন সিন্ডিকেট ক্ের এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। সরকার টিসিবির মাধ্যমে সারা দেশে কতিপয় পণ্যের খোলাবাজারে বিক্রি করলেও তবুও বাজারে জনগণের নাগালে নিত্যপণ্য পাওয়া কঠিন। ডাল পিঁয়াজ আদা রসুন সবকিছুর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। হু হু করে চালের বাজার বেড়ে এখন মোটা চাল কেজি ৭০ টাকার মধ্যে এসে থেমেছে। এভাবে সব ধরনের নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি জনগণকে মহা অর্থসংকটে ফেলছে। দুর্নীতি ও অর্থ, ডলার পাচারের মাধ্যমে দেশের জাতীয় অর্থনীতি তলানিতে। সরকারি ও বেসরকারি কতিপয় লোভি দুর্নীতিবাজ লোক জনগণের অর্থ ও দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে। গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এটি কোনো চরিত্র হতে পারে না। লুটপাট আর দুর্নীতির একটা সীমা থাকা চাই। সরকার যারা চালায় তারা বাস্তবে এই সব দুর্নীতিবাজদের কিভাবে আশ্রয় – প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে সেটিই জনগণের প্রশ্ন। সাংবিধানিক অধিকার জনগণের মৌলিক নাগরিক অধিকার কী সেই কথাও মনে হয় ক্ষমতাসীনরা ভুলে যায়।
উঁচু তলায় বিত্তশালী ব্যবসায়ী শিল্পপতি আমলা চাকরিজীবী যারা আছেন তাদের জন্য মূল্যবৃদ্ধি কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা শুধু নিম্ন মধ্যবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের বেলায়। এসব মানুষের সংখ্যা ৮৫ ভাগ। তাদের কথা চিন্তার জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ স্থিতিশীল রাখবার উদ্দেশ্যেই মন্ত্রণালয় রয়েছে। বাজার মনিটরিং কমিটি রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। তবুও কেনো অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা জনগণের প্রশ্ন। মানুষের যখন আয় ইনকাম সীমিত, কেউ বেকারত্বের অভিশাপে জীবন পার করছে, এক বেলা খেয়ে এক বেলা না খেয়ে বন্যাকবলিত মানুষগুলো যখন মানবেতর জীবন যাপন করছে তখন মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতি লাভের আশায় নিত্যপণ্য মূল্যের দাম বৃদ্ধির কুষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। বন্যার অযুহাত দেখিয়ে তরিতরকারী ডিম মাংসের সিন্ডিকেট সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সরকারকে তৃণমূল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সাথে বসা কোনো বিকল্প নেই। এসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কালোহাত ভাঙ্গতে হবে। তেল সিন্ডিকেট চিনি সিন্ডিকেট চাল পিঁয়াজ সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নজরদারীতে মাঠে থাকতে হবে। সহনীয় মূল্যের বাইরে যারা ব্যবসার নামে মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পকেট কর্তন করছে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। দোকান বাজারে সাধারণ জনগণ অসহায়। পেটের অভাবে যে ধরনের মূল্য দোকানদার চায় তা দিয়েই গ্রাহককে পণ্য ক্রয় করতে হয়। বাজার মার্কেটে দেখা যায় পণ্যের মান যাই হোক না কেনো সিন্ডিকেট করে একইভাবে সকলেই একযোগে একই দামে পণ্য বিক্রি করছে। হঠাৎ করে ডিম ও আলুর সিন্ডিকেট কারসাজিতে মধ্যবিত্ত পরিবারে সংকট তৈরি করেছে। অসহায়ভাবে পণ্য গ্রাহককে পণ্য ক্রয় করতে হয়। সরকার মাঝে-মধ্যে পণ্যের তালিকা দোকানে রাখার জন্য বললেও সেটায় তেমন একটা ফল ভুক্তভোগী জনগণ পায়না। জনগণকে খাদ্যে নিরাপত্তা এবং তাদের নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী সরবরাহে সরকারকে সর্বদা জনগণের পাশে থাকতে হবে। বাজার মার্কেটে পাইকারি খুচরা মূল্য সবসময় তদারকির আওতায় রাখতে হবে। খাদ্যপণ্য বাজার নিয়ন্ত্রণ জনগণের নাগালের মধ্যে রাখা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। সে দায়িত্ব কোনো অবস্থায় দুর্বলভাবে ছেড়ে দেয়া যায়না।
নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের সিংহভাগ মানুষদের রুজি রুটির অধিকার নিশ্চিত করা সাংবিধানিক দায়িত্ব। তাদের রুজি রোজগারের আয় বৃদ্ধির চিন্তা সরকারকে রাখতে হবে। এ দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রকে পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হবে। কারণ যারা ক্ষমতায় আসছে তারা জনগণের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। জনগণের সুবিধা অসুবিধা খাদ্যের প্রয়োজনীয় পণ্য সঠিকভাবে সরবরাহ মূল্য নিয়ন্ত্রণ বাজারজাত সবকিছু তাদের দায়িত্ব। কোনো অবস্থায় এসব দায়িত্বকে অবহেলার চোখে রাখা যায়না। জনগণের সুখ ও দুঃখের বিচার বিশ্লেষণ সর্বদা রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। এসব বিষয়ে অবহেলা দুর্বলতা প্রকাশ পেলে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই উঁচু থেকে নিচু ছোট থেকে বড় ধনী থেকে গরিব সব শ্রেণি পেশার মানুষ যেনো আত্মমর্যাদার সাথে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সেটায় রাষ্ট্রকে দেখতে হবে। সামাজিক বৈষম্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সব ধরনের নিত্য পণ্য সর্বরাহ প্রাপ্তি মূল্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারকে এসব বিষয় মাথায় রেখে মানুষের রুটি রুজির নিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে আসা জনপ্রত্যাশা।
লেখক : ব্যাংকার, কবি ও প্রাবন্ধিক।