নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বড় মসজিদ পুন:নির্মাণ কাজে অনিয়ম-দূর্নীতির কারনে দৃষ্টিনন্দনভাবে ফুটে তুলতে পারেননি কমিটির কর্তাব্যক্তিরা। তাদের সুষ্ঠু পরিকল্পনা আর অদূরদর্শিতার কারণে এখন পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মুসল্লীরা।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১২ সালের দিকে মসজিদ কমিটির তৎকালীন সেক্রেটারী মনোয়ার হোসেন সেন্টুকে সরিয়ে দিয়ে সেক্রেটারি হন তখনকার জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুর রহমান বি.কম। তার নেতৃত্বাধীন কমিটি মসজিদ পুন:নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এরপর দুই দফা প্রকৌশলীদের কাছ থেকে ডিজাইন নিয়ে দুই দফা পরিবর্তন করা হয়। মসজিদটি জনগুরুত্বপূর্ণ ট্রাংক রোডের পাশে হলেও রাখা হয়নি পার্কিং ব্যবস্থা। আন্ডারগ্রাউন্ডে পার্কিংয়ের জায়গা রেখে পরবর্তীতে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। শুধু তাই নয়, মসজিদের ৪২শতক জায়গার মধ্যে ১২শতক জায়গাজুড়ে দোকান তৈরি করা হয়। নিচতলা ও উপর মিলিয়ে ৭৪টি দোকান সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মসজিদের বাইরে ওযুখানা ও বামপাশে তৈরি করা হয়েছে শৌচাগার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সৌন্দর্যবর্ধন করা হলেও বাইরে থেকে ১০ তলা সুউচ্চ মিনারেই বোঝা যায় মসজিদের অবয়ব। দেখলে মনে হয় যেন মার্কেট। নামাজ চলাকালীন সময়েও চলে কেনাবেচা। এনিয়ে মুসল্লীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। শুধু তাই নয়, নামাজ চলাকালীন সময়ে মসজিদের পাশ থেকে শৌচাগারের দূর্গন্ধও ছড়ায়। শুধু তাই নয়, বিশালাকৃতির এ মসজিদে রাখা হয়নি কোন জানালা। বিদ্যুত না থাকলে মুসল্লীরা অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়তে হয়।
জানা গেছে, রামপুর সওদাগর বাড়ির বাসিন্দা ব্যবসায়ী কামাল হোসেন প্রায় তিন যুগ ধরে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন। টেন্ডার ছাড়াই পুরাতন মসজিদের সামগ্রী ৫ লাখ টাকা নামমাত্র মূল্যে নিয়ে যান। তখন আবদুর রহমান বি.কম ও সহ-সভাপতি সফিকুর রহমানের নির্লিপ্ততায় নির্মাণ কাজে অনিয়ম-দূর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
মুসল্লীরা জানান, পুন:নির্মাণের সময় ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মালামাল কেনা হয়। যা ফেনীর চেয়েও অধিক দাম দেয়া হয়।
তারা আরো জানান, এটি ফেনী কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ হলেও কেউ কেউ মার্কেটের মসজিদ বলে থাকেন। সঠিক পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার অভাবে মসজিদটি দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তুলতে পারেননি। বরং বারবার টাকা অপচয় হয়েছে।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর মসজিদ কমিটির বেশিরভাগ নেতাই গা ঢাকা দেন। এদের মধ্যে কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক আশ্রাফুল আলম গীটার ও পারভেজুল ইসলাম হাজারী, সদস্য সচিব করিম উল্যাহ আজাদ ৪ আগস্ট মহিপালে ছাত্র-জনতা গণহত্যা মামলার আসামী হয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। গত ২৬ অক্টোবর শনিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ৩২ সদস্যের কমিটির মাত্র ১৭ জন উপস্থিত ছিলেন।
নির্মাণ ব্যায় সম্পর্কে জানতে গতকাল দুপুরে মসজিদে কথা হয় হিসাবরক্ষক জমির উদ্দিন ও অফিস সহকারী (ক্যাশ) দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে তারা দু’জনই তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তারা বর্তমান সেক্রেটারী সফিকুর রহমানের নির্দেশনা নিয়ে একসপ্তাহ পর যোগাযোগ করতে বলেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী সফিকুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।