নিজস্ব প্রতিনিধি :
‘বই কিনে কেউ কখনো দেউলিয়া হয়না’ সৈয়দ মুজতবা আলীর সেই বিখ্যাত উক্তিটির গুরুত্ব দিনদিন হারাতে যাচ্ছে। ফেনী জেলা গণগ্রন্থাগার, নবীন চন্দ্র সেন পাবলিক লাইব্রেরি ও ফেনী সরকারি কলেজ লাইব্রেরিতে বই পড়তে আগ্রহী পাঠকদের চেয়ে চাকুরী প্রত্যাশীর ভীড় বেশি দেখা যায়। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেও এর সত্যতা মিলেছে। ফলে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে অগ্রসর জেলা হিসেবে সুপরিচিত ফেনীতে আগামীতে জ্ঞানভিত্তিক মেধাবী নেতৃত্ব উঠে আসার পথে ফেসবুক অন্তরায় হচ্ছে কিনা এনিয়ে সচেতন মহল বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।
আজ বিশ্ব বই দিবস। দিনটি ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’ নামেও পরিচিত। বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২৩ এপ্রিল ইউনেস্কোর উদ্যোগে এই দিবস পালন করা হয়। সাহিত্য জগতের তিন কিংবদন্তী উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, মিগেল দে থের্ভান্সেস ও ইনকা গার্সিলাসো দে ভেগার প্রয়াণ দিবস এই ২৩ এপ্রিল।
সরেজমিনে জানা গেছে, শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের শিল্পকলা একাডেমী সম্মুখস্ত স্থানে রয়েছে জেলা গণগ্রন্থাগার। এখানে কেউ বই কিংবা পত্রিকা পড়ছেন। তবে পাঠকের বেশিরভাগ চাকুরী প্রত্যাশী কলেজ ও মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আসন সংখ্যা রয়েছে শতাধিক। প্রতিদিন অন্তত অর্ধশত পাঠক সেখানে যাওয়া-আসা করেন।
এখনকার একজন নিয়মিত পাঠক জামিল আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর ফেনীতে স্বপরিবারে অবস্থান করছেন। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে লাইব্রেরিতে সময় কাটাই। বেশিরভাগ সময় উপন্যাস, ইসলামিক প্রবন্ধ পড়ে সময় কাটে। একটা লাইব্রেরি জেলার জন্য সম্পদ।’
তার মতে, ‘অবসরে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মাতে। অযথা সময় কাটানোর চেয়ে বইয়ের দিকে মনোনিবেশ করলে মানসিকতা ভালো থাকে। দিনদিন বইয়ের পাঠকের সংখ্যা কমলেও চাকুরী প্রত্যাশীদের ভীড়ে লাইব্রেরি সরগরম থাকে। এটাও ভালো দিক।’
ফেনী সরকারি কলেজের মাষ্টার্সপড়ুয়া শিক্ষার্থী সিফাত উল্যাহ খান জানান, ‘অনার্স সেকেন্ড ইয়ার থেকে লাইব্রেরিতে যাওয়া শুরু করি। চাকুরীর প্রস্তুতির পড়াশোনা করতে সেখানে যাই। আমার মত সিনিয়র-জুনিয়র অনেকেই সেখানে চাকুরীর প্রস্তুতির পড়াশোনা করেন। বই পড়ার মানুষের সংখ্যা নাই বললে চলে।’
গণগ্রন্থাগারিক কামরুল হাসান ফেনীর সময় কে জানান, ‘গণগ্রন্থাগারে প্রায় ৩৪ হাজার বই রয়েছে। শুধুমাত্র জ্ঞানচর্চার জন্য বই ও পত্রিকা পড়তে যান এমন পাঠকের সংখ্যা তুলনামূলক কম। এক্ষেত্রে চাকুরী প্রত্যাশী তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা বেশি।’
ফেনী সরকারি কলেজের গ্রন্থাগারিক আরজিনা আক্তার চৌধুরী ফেনীর সময় কে জানান, ‘কলেজের লাইব্রেরিতে ২০ হাজারের মত বই সংগ্রহে রয়েছে। কলেজের শিক্ষার্থী না হয়েও বাইরে থেকে অনেকে পড়তে গেলেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের কারনে বসার সুযোগ পাননা। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করতে গল্পের বই সংগ্রহ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সেখানে বই পড়ে সময় কাটান।’