fenirshomoy logo black

নিজস্ব প্রতিনিধি :

আগামি বাজেটে ফেনী জেলার জন্য সর্বোচ্চ বাজেট দাবী করেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিগত বছর ফেনী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষতচিহ্ন এখনও রয়েছে। মানুষের ভোগান্তির শেষ হয়নি। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পৈত্রিক বাড়ি হওয়ায় বিগত সাড়ে ১৫বছর ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে ফেনী উন্নয়নে বৈষম্যের শিকার হয়েছে।তিনি এ জেলায় একটি মেডিকেল কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সেনানিবাস স্থাপনসহ নানা দাবী তুলে ধরেন। অবিলম্বে ফেনীর সব সমস্যা সমাধানের দাবী নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতেরও আহবান জানান। এর জন্য ফেনীর সকল মানুষ একদিন একযোগে প্রতীকী অনশন পালনের কর্মসূচি রাখার প্রস্তাব দেন তিনি।


মজিবুর রহমান মঞ্জু আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি-এবি পার্টি-গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিভিন্ন ইসলামী দলসহ গণঅভ্যুত্থানের সকল রাজনৈতিক পক্ষের ঐকমত্য হতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিচার, রাষ্ট্রীয় সংস্কার, আইন শৃঙ্খলার উন্নতি ও একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারলে জুলাই অভ্যুত্থানের স্বপ্ন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। এজন্য দেশের স্বার্থে ড. ইউনুস সরকার ও বিএনপি জামায়াত-এনসিপি-এবি পার্টি-গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিভিন্ন ইসলামী দলসহ গণঅভ্যুত্থানের সকল রাজনৈতিক পক্ষের ঐকমত্য জরুরী।গতকাল শনিবার ফেনীতে এবি পার্টির নতুন কার্যালয় উদ্বোধন, রাজনৈতিক কর্মশালা, নাগরিক সভা ও গণসংযোগ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।


সকালে ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গণসংযোগ করেন তিনি। এসময় একটি উঠান বৈঠকেও বক্তব্য রাখেন। বিকালে ফেনী শহরের মিজান রোডে দলের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন এবং দলের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মজিবুর রহমান মঞ্জু ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী শাহ আলম বাদল উপস্থিত ছিলেন।


সন্ধ্যা ৭টায় শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রত্যাশা, প্রেক্ষাপট ও সংস্কারের তরঙ্গে বদলে যেতে উন্মুখ ফেনী” শীর্ষক এক নাগরিক সভা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। ফেনী জেলা এবি পার্টির সদস্যসচিব প্রভাষক ফজলুল হকের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আহ্বায়ক মাস্টার আহসান উল্লাহ।
সভায় মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যারা জনগণের অধিকার কেড়ে নেয় জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে তারা একসময় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আজ ফেনীসহ দেশের প্রায় সকল জেলার বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতারা সবাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা আছেন তাদের মাথা হেট হয়ে আছে। অথচ কিছুদিন আগেও তাদের দাপটে মানুষ কথা বলতে পারেনি।


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বার বার ভুল করে এবং ক্ষমা চায়, কিন্তু সুযোগ পেলেই তারা আবার বাকশাল ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করে। ফেনীতে বিএনপি-জামায়াত, হেফাজত ও এবি পার্টিসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের উপর নির্মম নির্যাতনের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে যে কোন সময় পরি¯ি’তির অবনতি হতে পারে। আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না, আমরা চাই ন্যায়সঙ্গত বিচার ও খুনি লুটেরাদের শাস্তি। সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদকে খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে ড. ইউনুস সরকার ও বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি-এবি পার্টি-গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিভিন্ন ইসলামী দলসহ গণঅভ্যুত্থানের সকল রাজনৈতিক পক্ষের ঐকমত্য জরুরী।


এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে: কর্ণেল (অব.) মো: দিদারুল আলম বলেন, আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারণে ফেনী যেমনি আলোচিত, তেমনি ফেনীর জনগণকে এ কারণে গত ১৫ বছর বহু বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। এবার সকল বঞ্চনার জবাব দিতে হবে এই রাষ্ট্রকে। ফেনীর জন মানুষের উচিত হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ দাবি তোলা যে, উন্নয়নে ফেনী যেন সবচেয়ে বেশী অগ্রাধিকার পায়। তিনি মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে ফেনীর উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য সকলকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।


প্রকৌশলী শাহ আলম বাদল বলেন, এবি পার্টিকে ফেনীতে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। আমাদেরকে ইফতার মাহফিল সহ কোন সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আমরা ধৈর্য্য ধারণ করেছি। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি নিয়ে অনড় মনোবলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম। ফলে আজকে বাধাাদানকারীরাই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। আগামীতে ফেনীর প্রত্যেক ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দলের শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তোলা হবে মর্মে তিনি ঘোষনা দেন। মতবিনিময় সভায় ফেনী-২ আসনের ১২টি ইউনিয়নের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ অংশ নেন। তারা নিজ নিজ এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে নানা মতামত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এসময় ফেনীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৩০ জনেরও অধিক লোক এবিপার্টির চেয়ারম্যানের হাতে ফুল দিয়ে দলে যোগদান করেন।


সভায় এবি পার্টি ফেনী জেলার যুগ্ম-আহ্বায়ক আফলাতুল বাকী ফেনী, মোতাহের হোসেন বাহার, যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন আনসারি, নজরুল ইসলাম কামরুল, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত সাজু, কোষাধক্ষ্য শাহ আলম শাহীন সুলতানী, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক হাবীব উল্যাহ মিয়াজী, সমাজসেবা সম্পাদক এবি সিদ্দিক, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও ফেনী পৌর সদস্য সচিব রিজওয়ানুল খায়ের, সহ-দপ্তর সম্পাদক নাজরানা হাফিজ অমলান, নারী সম্পাদক জাহানারা আক্তার মনি, সহ-নারী সম্পাদক শানু, ধর্ম সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হাফিজ খন্দকার, সদস্য মোজাম্মেল হোসেন, কাজী জাহাঙ্গীর আলম, ফখরুল ইসলাম মুরাদ, ফেনী সদর উপজেলা সদস্য সচিব আবু সাইদ, যুগ্ম-সদস্য সচিব হাফেজ কামরুল, সোনাগাজী উপজেলা শাখার আহবায়ক রহমত উল্লাহ মিজান, সদস্য সচিব ওয়াসিউর রহমান খসরু, ছাগলনাইয়া উপজেলা শাখার সমন্বয়ক নাফিজ ইমতিয়াজ শিমুল, সহ-সমন্বয়ক শরীফুল ইসলাম লিংকন, এবি যুব পার্টির আহ্বায়ক শফিউল্লা পারভেজ, সদস্য সচিব এসএম ইব্রাহিম সোহাগ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিএনপি, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, হেফাজতে ইসলাম, যুব আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, জনতার অধিকার, ইমাম সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফেনীর বিশিষ্টজনরা অংশ নেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!