fenirshomoy logo black

মো: এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম :

নার্সিং শুধু একটি পেশা নয় সেবা। একজন নার্স হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে অসুস্থ্য এবং দুর্বল রোগীদের যত্ম নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত। নার্সরা চিকিৎসক ও সার্জনদের মতো অন্যান্য চিকিৎসা পেশাদার এবং কর্মীদের সাথে কাজ করে। তারা নির্ধারিত ওষুধগুলি দেয় এবং হাসপাতালে থাকার সময় স্বজনদের মতো করে রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ মে নার্স দিবস পালিত হলেও তাদের ৯০ শতাংশের আবাসন নেই। ফলে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স হাসিনা বেগম ও তমা খাতুনসহ আরও কয়েকজন নার্স জানান, সাধারণত নার্সরা পেশাদার চিকিৎসা কর্মীদের একটি দলের অংশ হিসাবে কাজ করে। যার মধ্যে চিকিৎসক, সমাজকর্মী এবং থেরাপিস্ট রয়েছে। নার্সদের সাধারণ দায়িত্বগুলো হলো; নার্সিং কেয়ার প্রয়োজনীয়তার মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা করা। ওষুধ এবং শিরা নিষিক্তকরণ নিরীক্ষণ। রোগীর নমুনা গ্রহণ, তাপমাত্রা চেকআপ, রক্তচাপ গ্রহণ রেকর্ড রাখা। কর্তব্য সংশ্লিষ্ট জুনিয়র কর্মীদের তত্ত্বাবধান করা। কাজের অর্গানাইজ করা। অপারেশন-পূর্ব এবং পরবর্তী যত্ন প্রদান করে। রোগীর এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তা প্রদান করা। ইন্টার্ণ নার্সদের শিক্ষাদান ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান। ২৪ ঘন্টায় শিফটের মাধ্যমে কাজ বন্টন করা হয়। তবে বেশির ভাগ হাসপাতালে নার্স সঙ্কট থাকায় নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়।

সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর এই দিনটি নার্স ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের অবদানকে স্মরণ করে। তাকে নার্সিং এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তিনি স্বাস্থ্যসেবায় অনেক অবদান রেখেছিলেন। ১৯৫৩ সালে প্রথমবারের মতো মার্কিন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কল্যাণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নার্স দিবস উদযাপনের প্রস্তাব করেন। অফিসারের নাম ডরোথি সাদারল্যান্ড। এই প্রস্তাব তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেভিড ডি আইজেনহাওয়ার অনুমোদন করেননি। এরপর ১৯৬৫ সালে বার আইসিএন নার্স দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেভিড ডি আইজেনহাওয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিনটি উদযাপনের ঘোষণা দেয়ায় প্রতি বছর ১২ মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালিত হয়।
তমা খাতুনের বাড়ি রাজশাহী এলাকায়। সাড়ে তিন বছর আগে তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন। দেশের সরকারি নার্সদের একজন যে পদে চাকরিতে ঢুকছেন, অধিকাংশই সেই পদেই অবসরে যাচ্ছেন। মাঝখানে এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়। কিন্তু পদ ও বেতন বাড়ে না। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বেতন পান মূল পদ সিনিয়র স্টাফ নার্সের।

রোববার সরেজমিন পরিদর্শন গিয়ে দেখা যায়, বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে সরকারি বন্ধের দিনেও দায়িত্ব পালন করছে তমা খাতুনসহ কয়েকজন নার্স। তিনি বলেন, নার্সরা বৃদ্ধ মহিলাকে মাতা, বৃদ্ধ পুরুষকে বাবা, ছোট ছেলে-মেয়েদের ভাই-বোন ও শিশুদের নিজের সন্তানের মতো সেবা দেয়। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আন্তরিকতার সাথে নার্সরা সেবা যত্ন করে। এটা খুবই আনন্দের।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, অন্যান্য কাজের সাথে চিকিৎসা সেবা পেশার কিছুটা ভিন্নতা আছে। যেহেতু হাসপাতালে ২৪ ঘন্টাই রোগী ভর্তি থাকে এবং প্রায় ক্ষেত্রেই জরুরি বিভাগ চালু থাকে, সেহেতু একজন নার্সকে তিন শিফটে সকাল/বিকেল ৬ঘন্টা, রাতে ১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। তারপরও ৯০ শতাংশ নার্সের আবাসন ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় বেতনের অর্ধেক বাসাভাড়ায় খরচ হয়ে যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘নার্সরা রোগীদেরকে নিজের স্বজনের মতো সেবাযত্ন করে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সের ৩০টি পদ থাকলেও খালি রয়েছে ৮টি। যারা আছেন, তাদের নেই আবাসন ব্যবস্থা। এর মধ্যে দুইজন থাকেন পরিত্যক্ত ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সরকারের উচিত-সারাদেশে নার্সদের আবাসন সঙ্কট নিরসন করা। এতে সরকারি স্বাস্থ্যখাত আরও উন্নত হবে। সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে’।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!