- প্রায় ২২ একর পরিত্যক্ত জায়গা গাড়ির পার্কিং
- মিলটি চালু করতে স্থানীয়দের প্রাণের দাবী
আলী হায়দার মানিক :
ফেনী শহরের অদূরে সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নে অবস্থিত দোস্ত মোহাম্মদ টেক্সটাইল মিলস প্রায় আড়াই যুগ ধরে বন্ধ পড়ে আছে। এতে ২১ দশমিক ৪৭ একর পরিত্যক্ত জায়গায় কিছু সংখ্যক সিএনজি ও স্কুল গাড়ির পার্কিং হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। শত কোটি টাকার মেশিন ও যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ হিসেবে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে বিভিন্ন সম্পদ খতিয়ে দেখতে গিয়ে কাগজে কলমে ৮৭টি টেক্সটাইল মিলস পাওয়া যায়। এরমধ্যে ৫টির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে সারা দেশে ২২টা টেক্সটাইল মিলস রয়েছে সবগুলো অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই টেক্সটাইল মিলসগুলো সারা দেশে বিশাল জায়গা দখল করে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ১৯৯৭ সালে দোস্ত টেক্সটাইল মিলস আংশিক বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১১ সালে সর্বশেষ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ২০০৩ সালে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাদ দেয়া হয়েছে। বিশাল এই সম্পদ রক্ষায় বর্তমানে শুধুমাত্র ১জন স্থায়ী নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন। এছাড়া হিসাব বিভাগ দেখের রাঙ্গামাটির হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা ও সীতাকুন্ডে ব্যব¯’াপক (প্রশাসক) জসিম উদ্দিন মিলস ইনচার্জ হিসেবে রয়েছেন। এছাড়াও নিজস্ব কিছু আয় দিয়ে আরো ১০জন সিকিউরিটি গার্ড রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে ৩ শিপটে প্রায় ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত ছিল। মিলের ভিতরে শুধুমাত্র ১টি মসজিদ ছাড়া সবকিছুই জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয়রা পরিত্যক্ত এ বিশাল জায়গাটিকে ভূতের বাড়ি বলে চিহ্নিত করেছেন।
এলাকাবাসীর দাবী, মিলটি চালু হলে আবারো এলাকা আলোকিত হবে। প্রায় ২৮ বছর ধরে বন্ধ পড়ে থাকায় মিলের বাহিরে থাকা ১৯ শতক জায়গাও অনেকটা বেদখলে চলে যায়। স্থানীয় আবদুল হক মেম্বার নিজের জায়গা দাবী করে আদালতে মামলা দায়ের করার পর সেই মাললায় মিলের পক্ষে দুইবার রায় আসে। তার মৃত্যুর পর এখন তার ছেলে শহীদ উল্যাহও ১৯ শতাংশ জায়গার মালিকানা দাবী করেন। সেটাও পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। মিলটি চালু করার জন্য ২০২২ সালের ১৬ জুন একটি পরামর্শমূলক কর্মশালা করা হয়েছে। ফেনী সার্কিট হাউজে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস (বিটিএমসি) এর আয়োজনে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: জাকির হোসেন। কিন্তু অদ্যাবধি মিলটি আলোর মুখ দেখেনি। ¯’ানীয় শিল্পোদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে মিলটি চালু হওয়া সহজ হবে বলে বিশিষ্টজনরা জানান।
সীতাকুন্ড টেক্সটাইল মিলস ব্যবস্থাপক (প্রশাসক) ও ইনচার্জ চলতি দায়িত্ব জসিম উদ্দিন জানান, আশা করা যায় মিলটি চালু হবে। সরকার এব্যাপারে আন্তরিক হলে চালু হওয়াটা আরো বেশি সহজ হবে। তবে মিলের যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও মেশিনারী সব বিকল হয়ে গেছে। তিনি জানান বিকল যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এখন সম্পূর্ণ নতুনভাবে চালু করতে হবে।
ফেনী জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন কবির চৌধুরী জানান, পহেলা মে শ্রমিক দিবসে স্থানীয় লোকজন তার সাথে দেখা করে মিলসটি চালুর দাবী জানান। বিএনপির হাই কমান্ডের সাথে যোগাযোগ করে মিলসটি চালুর ব্যাপারে জাতীয়ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলেও জানান। মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। অনেকে এখন আর বেঁচেও নেই। ফেনীবাসীর প্রাণের দাবী যেন মিলটি আবার প্রাণ ফিরে পায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মিলটি চালুর দাবী জানিয়েছেন তিনি।
ফেনী জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ফারুক আহমদ ভূঁইয়া আজাদ জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস আন্তরিক হলে মিলটি চালু হওয়া সম্ভব। পহেলা মে শ্রমিক সমাবেশে ফেনীর দোস্ত মোহাম্মদ টেক্সটাইল মিলস চালুর দাবী জানিয়েছেন বলে জানান। এছাড়া স্থানীয় এলাকাবাসীকে নিয়ে বড় ধরণের আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে বলেও তিনি জানান। সরকার অচিরেই যেন টেক্সটাইল মিলসটি চালু করেন সেটি স্থানীয় এলাকাবাসীরও প্রাণের দাবী। মিলটি চালু হলে কর্মকর্তা, কর্মচারী, গাড়ির চালকসহ সকল প্রকারের প্রায় দুই হাজার পরিবারের আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হবে যেন মিলটি চালু করা হয়। এছাড়া সরকারের যেখানে যেখানে বলা প্রয়োজন সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যব¯’া গ্রহন করা হবে। মিলটি চালু হলে ফেনীর আরেকটি সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। যেটি উৎপাদনমুখী শিল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চালু হওয়ার ব্যাপারে আমরা আন্তারিক রয়েছি।