খন্দকার নাজমুল হক :
জুলাই বিপ্লবের ১০ মাস চলছে। দেশ ও জাতির নিকট হিসাব নিকাশ চলছে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুসের কেয়ারটেকার সরকার দেশ ও জাতির জন্য কি করেছে! এ সরকারের উপদেষ্টারা বিপ্লব টিকিয়ে রাখার জন্য কি করেছে। বিপ্লবীদের সরকার কি দেশপ্রেমিক সরকার, ভারতের তাবেদারমুক্ত সরকার, নাকি সাম্রাজ্যবাদী সরকার। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে। ১,৫০০ জন মেধাবী ছাত্র শহীদ হয়েছে এবং ৩০,০০০ জন পঙ্গুত্ববরণ করেছে। বিপ্লব যারা করেছে তাহারা হলো দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তি, তার সাথে দেশপ্রেমিক বামপন্থী শিক্ষক সমাজের একটি অংশ। বৈসম্য বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের মাধ্যমে ৩৬ জুলাই সংঘটিত হয়েছে এবং ভারতের তাবেদার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। এ বিপ্লবীদের দ্বারা গঠিত কেয়ারটেকার সরকারের মূল্যায়ণ করার সময় হয়েছে, ওরা বিগত ১০ মাসে দেশ ও জাতির জন্য কি করেছে তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করা প্রয়োজন। উপদেষ্টাদের মধ্যে কতজন জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিল? যদি অংশগ্রহণ না করে থাকে তাহলে কিভাবে তারা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হলেন? এ প্রশ্নের জবাব জাতীর কাছে বৈসম্য বিরোধী ছাত্রদের অবশ্যই দিতে হবে, জবাব দিতে হবে রাজনৈতিক দলকে যাহারা সেনাপ্রধানের সাথে সেনানিবাসে বৈঠক করে প্রফেসর ড. ইউনুসকে প্রধান করে কেয়ারটেকার সরকারের রুপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরেন। এনসিপি এবং হাসানাত আসিফ এবং মাহফুজের উচিত জাতির সামনে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সফলতা এবং ব্যর্থতা তুলে ধরা। ড. ইউনুসের উচিত রাস্ট্রের সংকট সৃষ্টিকারী ফ্যাসিবাদের দোসর উপদেষ্টাদের অবিলম্বে বহিস্কার করা। ড. ইউনুস সরকারকে মোকাবিলা করতে হয়েছে লুটপাটের অর্থব্যবস্থা,নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, ফ্যাসিবাদী প্রশাসন, ফ্যাসিবাদের অনুগত পুলিশবাহিনী, শত শত আন্দোলন, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগের দলবাজি ইত্যাদি। রাজনৈতিক অংঙ্গনের টক অব দি কান্ট্রি ড. মোহাম্মদ ইউনুস একটি রাজনৈতিক দলের অযেীক্তিক আন্দোলনের কারণে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদি ড. ইউনুস সরকারের পতন ঘটে তাহলে বিপ্লব পরাজিত হবে, ফ্যাসিবাদী গোষ্টি ভারতের সহযোগীতায় দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী করবে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বতৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। আবার ভারদের তাবেদার সরকার জাতির ঘাঁড়ে ছেপে বসবে, মিশরের মতো নতুন আরেকজন সিসির জন্ম হবে। এ দেশের ১৮ কোটি মানুষ ভারতের তাবেদার সরকার আর দেখতে চায়না, সামরিক সরকার দেখতে চায়না। আমরা চাই দেশপ্রেমিক ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির সমন্বয়ে আগামী ৩ (তিন) বছরের জন্য জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার ৫টি কাজ করবে (১) রাস্ট্র সংস্কার, (২) সংবিধান সংস্খার (৩) স্থানীয় সরকার নির্বাচন (৪) আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন এবং (৫) জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ক্ষমতার দাফটে বিপ্লবের চেতনা ভুলে গিয়ে দেশপ্রেমিক ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে কাঁদাছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যার ফলে ড. ইউনুসের সরকার প্রশ্নের মুখোমুখি। রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার গেম বিগত ১৫ বছর খেলা হয়েছে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এ ইস্যু কোন কাজেই লাগে নাই। এ দেশের ১৮ কোটি মানুষ রাজাকার নাকি মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি না স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি , ভারতের দালাল না পাকিস্থানের দালাল ইত্যাদি ননইস্যু, এবং জংগী নাটক, পরিবারতন্ত্র, জেলায় জেলায় গডফাদার দেখেছে। কিন্ত এ ইস্যুর বাহিরে, লুটপাট, ঘুষ, দুনীতি, কমিশন বানিজ্য, চাঁদাবাজি, ভারতের দালালগোষ্টি, সীমান্তে ফেলানী হত্যা, তিস্তার পানি, ফারাক্কার পানি, খাদ্যদ্রব্যের দামের উধ্বগতি, পরিবারতন্ত্র, গডফাদার ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে কোন নাগরিক আন্দোলন বা রাজৈনৈতিক আন্দোলন দেখে নাই। লুটেরাদের স্বর্গরাজ্য দেখেছে। উপদেষ্টা মাহফুজ সাহেব শেখ হাসিনার মতো রাজাকার নাকি মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি না স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি নিয়ে সরকারের চেয়ারে বসে নিরপেক্ষতা এবং শপথ ভংগ করেছে। রাজাকার নাকি মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি না স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে জনগণের মাথা গামানোর সময় নেই। সংবিধান মোতাবেক দেশের জনগণ (১) রাস্ট্র সংস্কার, (২) সংবিধান সংস্কার (৩) স্থানীয় সরকার নির্বাচন (৪) আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন এবং (৫) জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করার জন্য ৩ বছরের জন্য ঘুষ ও দুনীতিমুক্ত সরকার চায় ।
ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে যেয়ে ১৫ বছর জাতীর ঘাড়ে ফ্যাসিবাদী সরকার ছেপে বসে ছিল। ২০২৪ সালে চীন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বলে অভিহিত করলে, সেদিন রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার।’ তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সেদিন রাতেই উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার।’ শিক্ষার্থীদের এই স্লোগানকে ইস্যু করে একে একে উস্কানীমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রমুখ।
ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘এসব রাজাকারদের প্রতিহত করতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। ওবায়দুল কাদেরের উস্কানীমূলক বক্তব্যের পর, সাদ্দামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, ঢাবিতে নারী শিক্ষার্থীদেরও লাঞ্ছিত করে। তবে শিক্ষার্থীরা চুপ না থেকে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে “ছাত্রলীগ মুক্ত” ঘোষণা করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এভাবে শেখ হাসিনা রাজাকার নাকি মুক্তিযোদ্ধা ইস্যুর তোপে ৩৬ জুলাই ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
উপদেষ্টা মাহফুজ সম্পর্কে প্রফেসর ড. ইউনুস বলেছেন জুলাই বিপ্লবের মাস্টার মাইন্ড, ছাত্রশিবির লিখেছে মাহফুজ তাদের সাহায্য নিয়ে ফোকাস কোচিং করেছে এবং ঢাবিতে লেখাপড়া করেছে। মাহফুজ বিয়ে করেছেন সাবেক চাকসু ভিপি জসীম সরকার এবং মীর কাশেম আলীর পরিবারে। মাহফুজ সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য ৭১ সালের চেতনা বিক্রির কৌশল হাতে নিতে পারে। বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসলেই রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার রাজনৈতিক খেলা শুরু হয়ে যায়। ক্ষমতায় থেকে দলীয় আদর্শ রাজনীতির রোডম্যাপ বাদ দিয়ে রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার চেতার গেম খেলতে যেয়ে ভারতীয় ফ্যাসিবাদ জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছিল। মাহফুজের জাতীয় লিডারদের নীতি নৈতিকতা নিয়ে কোন কথা নেই। রাজনৈতিক দলের আদর্শ দর্শন নিয়ে আলোচনা নেই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আমলাদের দুনীতি এবং ঘুষখোর দুনীতিবাজদের নিয়ে নিরব, লুটপাট নিয়ে নিরব। শুধুমাত্র পুঁজি ছাড়া ৭১ চেতনা বিক্রির হিঁড়িক। মাহফুজ আলম যদি মনে করেন ৭১ চেতনা বিক্রি করে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন অথবা দ্বিতীয় নোবেল পুরষ্কার লাভ করবেন তাহলে তার ৭১ নিয়ে আরও বেশি সোচ্চার হওয়া উচিত। মাহফুজ যদি জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারন করেন তার উচিত রাজনীতিবিদদের আয় রোজগার নিয়ে কথা বলা। জুলাই বিপ্লব টিকিয়ে রাখার জন্য রাজপথে নামা, রাজনৈতিক দলের আদর্শ দর্শন নিয়ে আলোচনা করা । ঘুষখোর দুনীতিবাজ ও লুটপাট নিয়ে সোচ্চার হওয়া। ভারতীয় আগ্রাসন মোকাবেলায় ড.ইউনুসকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাত ১২.০০ পরে অনিরাপদ জায়গা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা ও গাঁজার আসর বসিয়ে থাকে। একজন মেধাবী ছাত্র সৌম্যকে হত্যা করেছে মাদকসেবীরা। উপদেষ্টা মাহফুজের উচিত ছাত্রদের ৯.০০ টার মধ্যে ঢাবি ফেরা নিশ্চিত করা এবং মব জাস্টিস বন্ধ করা। ছাত্র সংগঠনের আধুভাইদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা । জুলাই বিপ্লব টিকিয়ে রাখতে ছাত্র রাজনীতি ৫ বছর নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। হেলমেট বাহিনীর অত্যাচারের বিচার করা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং মার্কেট গডফাদার হাজী সেলিম থেকে উদ্ধার করা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা উপদেষ্টা মাহফুজকে বোতল মেরেছে, ৩৬ জুলাই বিপ্লবের চেতনার জবি শিক্ষক ও ছাত্ররা ছিলো। তাদের সাথে আলোচনা বন্ধ করে দিলেতো আন্দোলন বন্ধ হবে না। রাস্ট্রের উচুঁ পদে থেকে রাগ করা যাবেনা , অনুরাগ ও বিরাগভাজন হওয়া যাবেনা। ভারতের চাপে পড়ে জুলাই বিপ্লবের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া যাবেনা এবং ৭১ সালের চেতনা বিক্রি করা যাবেনা। সাধারণ মানুষ চায় ঘুষখোর দুনীতিমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশ। ভারতের তাবেদার লেন্দুপ দর্জিমুক্ত সরকার চায়।
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবী জোরদার হচ্ছে। সংখ্যানুপাতিক ভোটের নির্বাচনব্যবস্থা অনুসরণ করে পৃথিবীর ৯৯টি দেশ। এ পদ্ধতিকে সবচেয়ে আধুনিক এবং কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মনে করা হয়। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টিসহ বেশ কিছু ইসলামিক দল এই পদ্ধতির পক্ষে মতামত দিয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের মতো ছোট দল একে সমর্থন করছে। অন্যদিকে শুরু থেকেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিরোধিতা করছে বিএনপি। এই পদ্ধতিতে ছোট বা বড় দলগুলো সবাই লাভবান হবে, মোট গৃহীত ভোটের ৫১ শতাংশ ভোট না পেলে কোনো দল এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবেনা। তাই এই ব্যবস্থা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বিএনপিরও পছন্দ হওয়া উচিত। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেলেও মোট ভোট পেয়েছিল ৪৮.০৪ শতাংশ এবং বিএনপি মাত্র ৩০টি আসনে জয়লাভ করলেও মোট ভোট পেয়েছিল ৩০.২০ শতাংশ। যদি সেই নির্বাচনটি সংখ্যানুপাতিক ভোটের নির্বাচন হতো, তাহলে আওয়ামী লীগ পেত ১৪৭টি আসন এবং বিএনপি পেত ৯০টি আসন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত জোট ৪১.৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে ২০০টি আসনে জয়লাভ করেছিল এবং ৪০.০২ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল মাত্র ৬২টি আসন। অথচ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হলে বিএনপি পেত ১২৩টি আসন আর আওয়ামী লীগ পেত ১২০টি আসন। অতীতে যেহেতু কোনো দলই ৫১ শতাংশ ভোট পায়নি, তাই অনেকেই ধরে নিচ্ছেন এই পদ্ধতিতে কেউই এককভাবে জয়লাভ করে সরকার গঠন করতে পারবেনা।
পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশ এই আনুপাতিক ভোটের নির্বাচন বা প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি অনুসরণ করে সুফল পেয়েছে এবং এটিকেই সর্বাধুনিক ও সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য গণতন্ত্র বলা হচ্ছে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত পার্লামেন্টে ইতিবাচক ভারসাম্য থাকবে, যা সরকারেও প্রতিফলিত হবে। সরকারী দল চাইলেই হুটহাট নিজেদের সুবিধার জন্য যা খুশি আইন পাস করে ফেলতে পারবেনা । এ ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার আশঙ্কা একদমই কমে যাবে। ৩৬ জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য, দেশে এমন একটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ফ্যাসিস্ট হতে না পারে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে সাধারণ নাগরিকরা অনেক সামাজিক সুবিধা ভোগ করবে, সংসদ সদস্যের প্রশাসনিক ক্ষমতার জোরে ১) প্রতিটি সংসদীয় আসনে পরিবারতন্ত্র কায়েম হবেনা ২) সংসদ সদস্যের স্ত্রী বা শালা/শালী উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পারবেনা। ৩) এমপির ছেলে অথবা আত্বীয় সরকারী বেসরকারী কলেজের ভিপি হতে পারবেনা । ৪) ছোট ভাই বা শালা হওয়ার সুযোগ পাবেনা পেীরসভার মেয়র। ৫) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ৬) ছোট ভাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হবেনা। আবারও ফ্যাসিবাদ কায়েম হবেনা। জাতীকে ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করতে হলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার পরিচয় দিন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে রাজনৈতিক দলের গডফাদারদের অসুবিধাসমুহ (১) ইউনিয়ন এবং পৌরসভাগুলোতে কোন চাঁদাবাজ নির্বাচিত হতে পারবেনা, এতে গডফাদারের সংসদ সদস্য হওয়া কঠিন হয়ে যাবে। (২) স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বানিজ্য করা যাবেনা, এতে বিনাপুঁজির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (৩) এম.পি নির্বাচিত হলে প্রশাসনের মাধ্যমে কারচুপির সুযোগ নিতে পারেন, এ ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ড. ইউনুসের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বনাম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে প্রথম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন, দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন এবং তৃতীয় ধাপে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে হবে।
প্রচলিত পদ্ধতিতে যেভাবে নির্বাচন হয়, সংসদ গঠিত হয়, সেটা নাগরিকদের ‘খুব একটা উপকারে’ আসছেনা। “যেমন সংসদে এমন কিছু লোক নির্বাচিত হয়ে আসছেন, যারা নিজেরা কথা বলতে পারেননা, যে লিখিত স্ক্রিপ্ট নিয়ে সংসদে আসেন সেটাও ঠিকমতো পড়তে পারেননা। অথচ তারা সংসদে এসেছেন রাষ্ট্রের আইন তৈরি করতে। স্থানীয় সরকারে যারা নির্বাচিত হবেন, উন্নয়ন হবে তাদের হাত ধরে। কিন্তু কার্যত এটা এখন এমপিদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। এমপিদের কিন্তু এটা কাজ না। এমপিদের মূল কাজের জায়গা হচ্ছে তারা দেশের আইন রচয়িতা হিসেবে ভালো আইন সংযোজন করবেন, মন্দ আইন থাকলে তা সংশোধনে বিল আনবেন। গত পঞ্চাশ বছরে নির্বাচনে দেখা যায় যে ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে কোনও একটা দল সরকার গঠন করছে। কিন্তু ৩২ শতাংশ ভোট পেয়ে পরাজিত হচ্ছে যে দল, তাদের কিন্তু সরকারে কোনও ভূমিকা থাকে না। কার্যত পাঁচ বছরে যে সরকার শাসন করে, সেখানে বিরোধীদের মতামতের অর্থাৎ ৩২ শতাংশ সমর্থন যাদের তাদের কোনও মূল্যায়ন নেই বিধায় এর পরিবর্তন হতে হবে। কেউ যেন এককভাবে কর্তৃত্বপরায়ন হয়ে না ওঠে। বিএনপির সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব আছে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হলে বিএনপির জন্য এককভাবে জয়ী হওয়ার পথ কঠিন হয়ে ।
যাবে বলেই প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য সামনে আনছেন না বিএনপির শীর্ষ নেতারা। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সরাসরি ভোটে এমপি নির্বাচনের ব্যবস্থা না থাকায় সংসদে কারা যাবেন, সেটা পুরোপুরি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। “বাংলাদেশে তো রাজনৈতিক দলের ভেতরেও গণতন্ত্র নেই। সেখানে জয়ী দলগুলোই নির্ধারণ করবে তারা যে আসন পেয়েছে, সেগুলো কাদেরকে দেবে। তখন সরাসরি জনগণের ভোটে এমপি নির্বাচিত হচ্ছে না। বরং দল যে কয়টি আসন পাচ্ছে, দলের নেতা সে কয়টি আসনের এমপি নির্ধারণ করবেন।
৩৬ জুলাই দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদের আত্বার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দিন। ছাত্রদের অংশগ্রহণমুলক নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করুন। এম.এ পাশ চেয়ারম্যান এবং বি.এ পাশ মেম্বার পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করুন। জনসাধারণ নির্ভয়ে ভোট ডাকাতি প্রতিরোধ করে সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। দুনীতি লুটপাটমুক্ত লিডারশীপ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গড়ে উঠবে। পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশ এই আনুপাতিক ভোটের নির্বাচন বা প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি অনুসরণ করে সুফল পেয়েছে, এটিকেই সর্বাধুনিক ও সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য গণতন্ত্র বলা হচ্ছে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত পার্লামেন্টে একটা ইতিবাচক ভারসাম্য থাকবে, যা সরকারেও প্রতিফলিত হবে। সরকারী দল চাইলেই হুটহাট নিজেদের সুবিধার জন্য যা খুশি আইন পাস করে ফেলতে পারবে না । এ ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার আশঙ্কা একদমই কমে যাবে।
-গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ