নিজস্ব প্রতিনিধি :
ফেনী পৌরসভার শহীদ শহীদুল্লা সড়কের বাসিন্দা মীর হোসেন ১ লাখ ২৩ হাজার টাকায় এবার কোরবানির গরু কিনেছিলেন। সোমবার কোরবানির পর গরুর চামড়া বিক্রির জন্য তিনি মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর অপেক্ষায় বিকেল পর্যন্ত বাড়িতেই ছিলেন। দুপুরে একজন মৌসুমি ক্রেতা চামড়াটি মাত্র ১০০ টাকা দাম বলে চলে যান। পরে চামড়াটি স্থানীয় একটি মাদরাসাকে দিয়ে দেন মীর হোসেন।
কোরবানির গরুর চামড়া নিয়ে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে সদর উপজেলার কাতালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীরও। দুপুরে স্থানীয় একটি মাদরাসার পক্ষ থেকে চামড়া নিতে এলে তখন বিক্রির আশায় মাদরাসাকে দেননি। পরে বিকেল পর্যন্ত কোনো ক্রেতা না পেয়ে ওই মাদরাসাকে চামড়া নিয়ে যেতে বলেন। তবে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ চামড়াটি তাদের মাদরাসায় পৌঁছে দিতে বলে। পরে উল্টো পকেটের টাকা দিয়ে সেটি মাদরাসায় পৌঁছে দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী।
ফেনীতে এ বছরও কোরবানির পশুর চামড়ার দামে ধস নেমেছে। এ বছর গ্রামে গ্রামে মৌসুমি ব্যবসায়ীদেও দেখাই মেলেনি। এলাকাভেদে গরু ও মহিষের ছোট-বড় সবধরনের চামড়া ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এলাকায় কোনো মৌসুমি ব্যবসায়ীর দেখা না পেয়ে ৯৮ শতাংশ কোরবানির চামড়া স্থানীয় মাদরাসা ও এতিমখানায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোরবানির ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে।
ফেনী সদর উপজেলার উত্তর ধলিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন জানান, গরুর চামড়া তো মাদরাসায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের তিনটি ছাগলের চামড়া মাদরাসাও নেয়নি। পরে ছাগলের চামড়াগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।
পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগরের বাসিন্দা আবু ইউছুপ জানান, তিনি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় গরু কিনেছিলেন। সারাদিন ক্রেতার আশায় বসে থেকে বিকেলে ওই গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ১০০ টাকায়।
দাগনভূঞার সিলোনীয়া বাজারের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, তার এলাকার মো: রানা নামের এক মৌসুমি ব্যবসায়ী গ্রামে গ্রামে হেঁটে গড়ে ২০০ টাকা করে ২২টি চামড়া কিনে কয়েকশ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে ৩০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন।
রাত ৮টায় ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে একজন মৌসুমি ব্যবসায়ীকে আবছা আলোতে পাঁচটি চামড়া নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, শহরের দাউদপুর এলাকা থেকে তিনি চামড়াগুলো গড়ে ২০০ টাকা করে কিনেছেন। নিজের খরচ ও রিকশা ভাড়া দিয়ে বিক্রির জন্য এনেছেন। ৩০০ টাকা করে দাম হলে বিক্রি করবেন। ব্যাপারীরা ১৫০ টাকা বলে চলে গেছেন।
ফেনীর সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম পাঁচগাছিয়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা থেকে তারা কোনো নির্দিষ্ট দর পাননি। তা ছাড়া ঢাকায় ট্যানারিতে বা বড় আড়তে চামড়া বিক্রি করে বকেয়া টাকা পাঁচ বছরেও আদায় করা যায় না।
সোনাগাজীর বাদুরিয়া গ্রামের আবুল বাসার বলেন, ‘আগে কোরবানির পশুর চামড়ার কেনার জন্য গ্রামে একাধিক মৌসুমি ক্রেতা দেখা যেত। দুই-তিন বছর ধরে চামড়া কিনতে গ্রামে কোনো মৌসুমি ক্রেতার দেখা মেলেনি। এ বছর সারা দিনেও চামড়া কেনার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। তারা তাদের কোরবানির পশুর চামড়া স্থানীয় মাদরাসায় দিয়ে দিয়েছেন।
সন্ধ্যায় ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, তিনি গড়ে ৩৫০ টাকা করে ১১টি বড় গরুর চামড়া কিনে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে গড়ে ৫০ টাকা লাভে ৪০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। তবে সংগ্রহ খরচ বাদ দিলে কোনো লাভই হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাদরাসা তত্ত্বাবধায়ক জানান, স্থানীয়ভাবে গরু“ ও মহিষের ৩৭০টি চামড়া সংগ্রহ করে পাঁচগাছিয়া বাজারের একটি বড় আড়তে নিয়ে গেলে তারা গড়ে ৩৩০ টাকা করে দাম দিয়েছেন।
শহরের শান্তি কোম্পানি রোডের ইসলামিয়া এতিমখানার সভাপতি কেবিএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের এতিমখানায় পাওয়া ২৬৭টি ছোট-বড় চামড়া গড়ে ৩৭০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। তারা কোনো ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেননি।