জান্নাতুলবাকী মদীনা শরীফের একটি প্রসিদ্ধ কবরস্থান। যেখানে চিরনিদ্রায় অবস্থান করছেন মহানবী (স) এর অসংখ্য আত্মীয়, সাহাবী, তাবেয়ী এবং অন্যান্য মনীষীগণ।
নামকরণ:বাকী অর্থ-বিভিন্ন প্রকার বৃক্ষের শিকড় বিশিষ্ট স্থান। একসময় সেখানে গারকাদ নামক একটি বৃহৎ গাছ ছিল। এ গাছটিকে কেন্দ্র করে জায়গাটির নাম হয়ে যায় বাকীউল গারকাদ। বর্তমানে তা জান্নাতুলবাকী নামে প্রসিদ্ধ। কোন কোন মনীষী বলেন-বাকীউল গারকাদ এমন জায়গা যা পূর্বে তুঁতগাছে ঢাকা ছিল।
গুরুত্ব : জান্নাতুল বাকী মসজিদে নববীর পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। মহানবী (স) এর হিজরতের পূর্বে এ জায়গাটি এত প্রসিদ্ধ ছিল না। তাঁর হিজরতের পর এখানে স্বনামধন্য ও বিশিষ্ট মনীষীদেরকে দাফন করা শুরু হয় এবং এ জায়গার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। একশত বছর পর্যন্ত তা উন্মুক্ত ছিল। পরবর্তীতে একে প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত করা হয়। যারা মহানবী (স) এর রাওযা জিয়ারতে মদীনা শরীফ আসেন, তারা জান্নাতুলবাকীও জিয়ারত করেন। মহানবী (স) প্রায় সময় রাত্রে জান্নাতুলবাকী কবরস্থানে এসে কবরবাসীদেরকে সালাম দিতেন এবং তাদের জন্য বেশী বেশী ইস্তেগফার করতেন। তিনি যখন এ কবরস্থানের পার্শ্ব দিয়ে গমন করতেন তখনই বলতেন- তোমাদের প্রতি সালাম, হে মু’মিন সম্প্রদায়ের বাড়ীর বাসিন্দাগণ। আল্লাহ চাহেতো আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হবো।
উম্মে কায়স থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বাকীতে মহানবী (স) এর পার্শ্বে ছিলাম, তিনি আমাকে ডেকে বলেন, হে উম্মে কায়স এ কবরস্থানের সত্তর হাজার লোককে বাছাই করে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যাদের চেহারা হবে চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায় উজ্জল। যাঁরা এখানে সমাহিত আছেন তাঁরা হলেন…
নিষ্পাপ চার ইমাম : ১. ইমাম হাসান ইবন আলী (রা): তিনি তৃতীয় হিজরীর ১৫ রমযান মদীনা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মহানবী (স) এর স্নেহের বড় নাতী। পিতার নাম হযরত আলী (রা) এবং মাতার নাম ফাতেমা। স্বীয় পিতার সাথে উষ্ট্রীয় ও সিফফীনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পিতার শাহাদাতের পর তিনি খলীফা হন। প্রায় ছয় মাস খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। হযরত মু’য়াবিয়া ইবন্ আবু সুফিয়ান (রা)-এর প্ররোচনায় স্বীয় স্ত্রী জু’দা বিনতে আল আশয়াছ ইবন কায়স কর্তৃক বিষ প্রয়োগে ৫০ হিজরীতে শহীদ হন। অতঃপর তাঁকে জান্নাতুলবাকীতে সমাহিত করা হয়।
২. ইমাম যায়নুল আবেদীন আলী ইবন হুসাইন (র) : তিনি হিজরী ৩৮ সনে জন্মগ্রহণ করেন। স্বীয় পিতার সাথে কারবালার ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন। অসুস্থাতার কারণে এজিদ বাহিনীর তরবারী থেকে রক্ষা পান। তবে অন্যান্যদের সাথে তিনিও বন্দি হন। পরবর্তীতে উমাইয়া বাদশাহ অলীদ ইবন্ আবদুল মালিকের প্ররোচনায় বিষ পানে তাঁকে শহীদ করা হয়। চাচা ইমাম হাসান (রা) এর পাশে জান্নাতুলবাকীতে তাঁকে সমাহতি করা হয়।
৩. ইমাম মুহাম্মদ বাকের ইবন আলী ইবন হুসাইন (র) :তিনি হিজরী ৫৮ সনে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার শাহাদাতের পর ইমামতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। তাঁর ছিল অনেক পূণ্যবান শিষ্য । আহলে বাইয়াতের জ্ঞান প্রচার ও প্রসারের ফলে তিনি বাকেরুল উলুম (গভীর জ্ঞানী) উপাধী লাভ করেন। উমাইয়া বাদশাহ হিশাম ইবন আবদুল মালিকের প্ররোচনায় হিজরী ১১৪ মতান্তরে ১১৭ সনে তাঁকে শহীদ করা হয়। জান্নাতুলবাকীতে পিতার পাশে সমাধিস্থ হন।
৪.ইমাম জাফর সাদেক ইবন মুহাম্মদ (র) : তিনি হিজরী ৮০ সনে মতান্তরে ৮৩ সনে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার শাহাদাতের পর তিনি ইমামতের দায়িত্বে সমাসীন হন। অগণিত জ্ঞান পিপাসু তাঁর কাছে জ্ঞান লাভ করেন। পরবর্তীতে তাঁর প্রতি আব্বাসী খলীফা মনসুরের নির্যাতন তীব্র আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে মানসুরের প্ররোচনায় ২৫ শাওয়াল হিজরী ১৪৮ সনে বিষ প্রয়োগে তাঁকে শহীদ করা হয়। দাদা ও পিতার পাশে জান্নাতুলবাকীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
রাসূলুল্লাহ্ (স)-এর চাচা ও চাচী : ৫.আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা):তিনি মহানবী (স) এর চাচা। তিনি রাসূলুল্লাহ (স)-এর দুই বা তিন বছরের বড় ছিলেন। মক্কায় ঈমানকে গোপন রাখেন। বাধ্য হতে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অতঃপর মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দি হন। পরে বন্দি বিবিনময় প্রদান করে মুক্ত হন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। হিজরী ৩৩ সনে তিনি ইন্তিকাল করেন।
৬. ফাতেমা বিনতে আসাদ (রা) : তিনি আবু তালেবের স্ত্রী, রাসূলুল্লাহ (স)এর চাচী এবং হযরত আলী (রা) এর মাতা। তিনি অন্যান্য নারীদের সাথে রাসূলুল্লাহ (স)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে রাসূলুল্লাহ (স) ব্যথিত হন এবং দ্রæত জানাযার ব্যবস্থা করেন।
রাসূলুল্লাহ (স)-এর পুত্র-কন্যাগণ : ৭.হযরত যয়নব (রা): তিনি হযরত খাদিজা (রা)-এর ঘরে মহানবী (স)-এর বড় কন্যা। আবুল আস ইবন বারী (রা) তাঁকে বিবাহ করেন। তিনি অষ্টম হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।
৮. হযরত উম্মে কুলসুম (রা): তিনি মহানবী (স)-এর কন্যা। তাঁকে প্রথমত আবু লাহাবের পুত্র উতাইবার নিকট বিবাহ দেওয়া হয়। এ বিবাহ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তৃতীয় হিজরীতে হযরত উসমান ইবন আফফান (রা) এর কাছে বিবাহ দেওয়া হয়। হিজরী ৯ সালে তিনি ইন্তিকাল করেন।
৯. হযরত রুকিয়া (রা) : তিনি মহানবী (স)-এর কন্যা। হযরত উসমান ইবন আফফান (রা) মক্কায় তাঁকে বিবাহ করেন। প্রথমে হাবশায় পরে মদীনায় হিজরত করেন। তিনি দ্বিতীয় হিজরীতে অসুস্থতায় ইন্তিকাল করেন। মহানবী (স) এর নির্দেশে জান্নাতুলবাকীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
১০. হযরত ইবরাহীম (রা): তিনি মহানবী (স) এর পুত্র। তিনি ৮ হিজরী সনে মারিয়া কিবতিয়ার ঘরে মদীনায় জন্ম গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে খুবই স্নেহ করতেন। তিনি দশম হিজরীতে এক বছর দশ মাস বয়সে ইন্তিকাল করেন। মহানবী (স) এর নির্দেশে তাঁকে হযরত উসমান ইবন মাযউন (রা) এর কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
রাসূলুল্লাহ (স)-এর সহধর্মিনীগণ : (হযরত খাদিজা (রা) ছাড়া রাসূলুল্লাহ (স)-এর অন্যান্য সকল সহধর্মিনীগণের কবর জান্নাতুলবাকীতে বিদ্যমান।)
১১. উম্মে সালমা (রা) : তিনি মহানবী (স) এর সহধর্মিনী। সর্বাগ্রে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। হিজরী ৬০ সনে তিনি ইন্তিকাল করেন।
১২. হযরত যয়নব বিনতে জাহশ (রা) : প্রথমে তাঁকে যায়েদ ইবন হারেসা (রা) বিবাহ করেন। তিনি তাঁকে তালাক দিলে মহানবী (স) বিবাহ করেন। হিজরী ২০ সনে ৫০ বছর বয়সে তিনি ইন্তিকাল করেন।
১৩. হযরত মারিয়া কিবতিয়া (রা) : তিনি মহানবী (স)-এর পুত্র হযরত ইবরাহীমের মাতা। ১৬ হিজরীতে মদীনায় ইন্তিকাল করেন।
১৪. হযরত যয়নব বিনতে খুযাইমা (রা): তিনি প্রথমত একজন সাহাবীর স্ত্রী ছিলেন। তাঁর স্বামী যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করলে মহানবী (স) তাঁকে বিবাহ করেন। তিনি চতুর্থ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩০ এর উর্ধ্বে।
১৫. হযরত আয়েশা (রা) : নব্যুয়তের চতুর্থ বর্ষে তাঁর জন্ম হয়। হযরত খাদিজা (রা) এর ওফাতের তিন বছর পর তাঁকে একমাত্র কুমারী হিসাবে বিবাহ্ করেন। তিনি হিজরী ৫৭ বা ৫৮ সনে ইন্তিকাল করেন।
১৬. হযরত হাফসা বিনতে ওমর ইবন খাত্তাব (রা): তিনি নবুয়তের পাঁচ বছর পূর্বে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁকে প্রথমত খুনাইস ইবন হুযাফা বিবাহ করেন। খুনাইস ইবন হুযাফার মৃত্যুর পর মহানবী (স) তাঁকে বিবাহ করেন। হিজরী ৪৫ সনে তাঁর মৃত্যু হয়।
১৭. হযরত উম্মে হাবীবা বিনতে আবু সুফিয়ান (রা): তাঁর স্বামীর ইন্তিকালের পর মহানবী (স) তাঁকে বিবাহ করেন। তিনি হিজরী ৪২ বা ৪৪ সনে ইন্তিকাল করেন।
১৮. হযরত জুয়াইরিয়া বিনতে হারেস (রা): মহানবী (স) পঞ্চম বা ষষ্ট হিজরী সনে বনু মুস্তালিক যুদ্ধের পর তাঁকে বিবাহ করেন। তিনি হিজরী ৫০ মতান্তরে ৫৬ সনে ইন্তিকাল করেন।
১৯. হযরত সাফিয়া (রা): তিনি প্রথমত আবু উবাইদ সালাম ইবন মুশকিমের স্ত্রী ছিলেন। তিনি তাঁকে তালাক দেওয়ার পর মহানবী (স) বিবাহ করেন। তিনি হিজরী ৫০ বা ৫২ সনে মদীনায় ইন্তিকাল করেন।
২০. সাওদা বিনতে যামআ (রা): তাঁর প্রথম স্বামী ছিল সাকরান ইবন আমর। তার মৃত্যুর পর মহানবী (স) তাঁকে বিবাহ করেন। তিনি হিজরী ৫০ বা ৫৪ সনে মদীনায় ইন্তিকাল করেন।
২১. রাইহানা বিনতে যায়েদ (রা): রাসূলুল্লাহ (স) ষষ্ঠ হিজরীতে তাঁকে বিবাহ করেন। বিদায় হজের পরে তিনি ইন্তিকাল করেন।
মহানবী (স)-এর ফুফুগণ : ২২. হযরত সাফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব (রা): তিনি মহানবী (স)এর ফুফু। তাঁর স্বামীর নাম আওয়াম ইবন খুয়াইলিদ। হযরত যুবাইর (রা) এর মাতা। তিনি খুবই সাহসী নারী ছিলেন। খন্দকের যুদ্ধে একজন ইহুদীকে হত্যা করেন। হিজরী ২০ সনে ৭৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।
২৩. হযরত আতিকা বিনতে আবদুল মুত্তালিব (রা): তিনি কোথায় ইন্তিকাল করেছেন এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে- তিনি মদীনায় আগমনের পর ইন্তিকাল করেন। বাকীতে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন- তিনি আদৌ মদীনায় আসেননি, মক্কাতেই তিনি ইন্তিকাল করেন।
বিশিষ্ট নারীগণ : ২৪. উম্মুল বানিন: তিনি হলেন- হাযাম ইবন খালেদের কন্যা, হযরত আলী ইবন আবু তালেব (রা) এর স্ত্রী। তাঁর ছিল চার পুত্র। তাঁরা হলেন- আব্বাস, জাফর, উসমান ও আবদুল্লাহ। চারজনই ইমাম হুসাইন (রা) এর সাথে কারবালায় শহীদ হন। তিনি মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন।
২৫. হযরত হালিমা সা’দিয়া (রা): তিনি প্রিয় নবী (স)এর দুধমাতা। তাঁকে বাকীতে সমাহিত করা হয়।
বিশিষ্ট সাহাবী ও তাবেয়ীগণ : ২৬. হযরত আকীল ইবন আবু তালেব (রা) : তিনি হযরত আলী (রা) এর ভাই। শেষ জীবনে তিনি দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেন। তিনি হযরত আলী (রা) এর চেয়ে বিশ বছরের বড় ছিলেন।
২৭. হযরত আবদুল্লাহ ইবন জাফর (রা) : তাঁর মাতা হলেন আসমা বিনতে উমাইস। তাঁর পিতা জাফর হাবশায় হিজরত করলে সেখানে তাঁর জন্ম হয়। মুতার যুদ্ধে তাঁর পিতা শহীদ হন। হযরত আলী (রা)-এর কন্যা বড় জয়নবকে বিবাহ করেন। তাঁর পুত্র আউন কারবালায় শহীদ হন। তাঁর অপর দুই ছেলে উমাইয়াদের হাতে শহীদ হন। তিনি হিজরী ৮০ সনে ৯০ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। জান্নাতুলবাকীতে চাচা হযরত আকীলের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
২৮. হযরত মুহাম্মদ ইবন আলী (র) : তিনি ইবন হানাফীয়া (রা) নামে পরিচিত। ৮০ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।
২৯. হযরত আবু সুফিয়ান ইবন হারেস (রা): তিনি রাসূলুল্লাহ (স) এর চাচাত ভাই। তিনি ২০ হিজরীতে মদীনায় ইন্তিকাল করেন।
৩০. হযরত ইসমাঈল ইবন জাফর (র) : তিনি পিতার জীবদ্দশায়ই ১৪৩ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।
৩১. হযরত উসমান ইবন মাযউন (রা) : তিনি একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী। মদীনায় হিজরত করার পর প্রথমদিকে যারা ইন্তিকাল করেছেন তাঁদের মধ্যে তিনি একজন।
৩২. হযরত আসআদ ইবন যারাবাহ (রা) : তিনি আকাবায় রাসুলুল্লাহ (স) এর নিকট বাইআত করেন। রাসূলুল্লাহ (স)এর নির্দেশে মদীনায় প্রথম জুমআ কায়েম করেন। তিনি প্রথম হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। রাসুলুল্লাহ্ (স) নিজ হস্তে তাঁকে জান্নাতুলবাকীতে দাফন করেন।
৩৩. খুনাইস ইবন হাযাফা (রা) : তিনি হাবশায় হিজরত করেন। বদর ও উহুদে আহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি ইন্তিকাল করেন। রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর জানাযা পড়েন এবং জান্নাতুলবাকীতে হযরত উসমান ইবন মাযউন (রা) এর কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
৩৪. সা’দ ইবন মুয়ায (রা) : তিনি আউস গোত্রের একজন সাহাবী। বদরের যুদ্ধে পতাকা বহনকারী ছিলেন। তিনি খন্দকের যুদ্ধে আহত হয়ে ছিলেন। তাঁর ওফাতের পরে হযরত ফাতেমা বিনতে আসাদের কবরের পাশে জান্নাতুলবাকীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
৩৫.হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) : তিনি সর্বাগ্রে বিশ্বাসীদের মধ্যে অন্যতম সাহাবী। তিনি ফিকহ্ শাস্ত্রে সুদক্ষ ছিলেন। ৩২ হিজরী সনে ইন্তিকাল করলে জান্নাতুলবাকীতে হযরত উসমান ইবন মাযউন (রা) এর কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
৩৬. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) : তিনি একজন বিশিষ্ট সাহাবী। উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ছিলেন। তিনি ৬৪ বা ৭৪ হিজরী সনে মদীনায় ইন্তিকাল করেন। হযরত ফাতেমা বিনতে আসাদের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয।
৩৭. মিকদাদ ইবন আসওয়াদ (রা) : তিনি মহানবী (স)এর একজন বিশিষ্ট সাহাবী। তিনি হিজরী ৩৩ সনে ৭০ বৎসর বয়সে ইন্তিকাল করেন।
৩৮. হযরত আরকাম ইবন আবুল আরকাম (রা) : তিনি ইসলামের অনেক ঘটনার সাথে জড়িত। ৮০ বছর বয়সে ইন্তিকাল করলে জান্নাতুলবাকীতে সমাহিত হন।
৩৯. হাকীম ইবন হাযাম (রা) : তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদিজা (রা)-এর ভাতিজা। মক্কা বিজয়ের সময় মুসলমান হন। ৫৪ হিজরীতে ইন্তিকাল করলে মদীনায় সমাহিত হন।
৪০. হযরত জাবের ইবন আবদুল্লাহ (রা) : তিনি একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী। ১৯টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৯০ হিজরীতে ৯৪ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
৪১. হযরত যায়েদ ইবন সাবেত (রা) : তিনি কুরআন সংকলকদের অন্যতম। ৪৫ বা ৫০ হিজরী সনে ইন্তিকাল করেন। তখন বয়স ছিল প্রায় ১০০ বছর।
৪২. হযরত মালেক ইবন আনাস (রা) : তিনি চার ইমামের একজন। মালেকী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৭৪-১৭৯ হিজরীতে মদীনায় ইন্তিকাল করেন।
৪৩. সাহল ইবন সা’দ সায়েদী (র) : তিনি মদীনায় ১০০ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।
৪৪. হযরত নাফে’আল-মাদানী (র) : তিনি একজন শ্রেষ্ঠ তাবেয়ী। ১১৭-১২০ হিজরী সনে তিনি মদীনায় ইন্তিকাল করেন। ইমাম মালেক ইবন আনাস (রা) এর কবরের পাশে জান্নাতুলবাকীতে তাঁকে দাফন করা হয়।
৪৫. হযরত নাফে’ (ক্বারী) (র): তিনি সাত কারীদের অন্যতম। প্রায় ৭০ বৎসর মদীনায় কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। হিজরী ১৬৯ সনে মদীনায় ইন্তিকাল করেন এবং বাকী সমাধিস্থ হন।
৪৬. হযরত উসামা ইবন যায়েদ (রা) : তিনি একজন সাহাবী।হিজরী ৫৪ সনে মদীনায় ইন্তিকাল করেন। তখন তার বয়স ছিল ৫৭ বছর।
৪৭. হযরত যায়েদ ইবন সাহল (রা) : তিনি একজন বিশিষ্ট সাহাবী। ৩৪ হিজরী সনে ইন্তিকাল করেন।
৪৮. হযরত আবদুর রহমান ইবন আউফ (রা)। ৪৯. হযরত উসমান ইবন আফফান (রা)। ৫০.হযরত সা’দ ইবন আবু ওয়াক্কাস (রা)। ৫১. হযরত সুহাইব ইবন সেনান (রা)। ৫২.হযরত উসাইদ ইবন হাদীর (রা)। ৫৩.হযরত হুয়াইতাব ইবন আবদুল উজ্জা (রা)। ৫৪. হযরত রুকানা ইবন আবদে ইয়জিদ (রা)। ৫৫.হযরত আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রা)। ৫৬. হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা)। ৫৭. হযরত আবু সালামা ইবন আবদুল আসাদ (রা)। ৫৮. হযরত আবদুল্লাহ ইবন আতীক (রা)। ৫৯. হযরত হযরত কাতাদাহ ইবন নূমান (রা)। ৬০.হযরত আমর ইবন হাযম (রা)। ৬১. হযরত মাহযামা ইবন নাওফিল (রা)। ৬২. হযরত আবদুল্লাহ ইবন উনাইস (রা)। ৬৩.হযরত বারা ইবন মারুর (রা)। ৬৪. হযরত জুবাইর ইবন মুতয়িম (রা)। ৬৫. হযরত মিসতাহ ইবন উসাসা (রা)। ৬৬. হযরত মুয়ায ইবন আফরা (রা)। ৬৭.হযরত ইবন আমর ইবন নূফাইল (রা)। ৬৮. হযরত মালেক ইবন তাইহান (রা)। ৬৯. হযরত আবু সাঈদ সাঈদী (রা)। ৭০.হযরত মুহাম্মদ ইবন মাসলামা (রা)। ৭১. হযরত উয়াইম ইবন সাঈদা (রা)। ৭২. হযরত কা’ব ইবন উমর (রা)। ৭৩. সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা)।
উপরিউক্ত মনীষীগণ ছাড়াও অনেক মনীষী এবং হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের মদীনা আক্রমণের সময় যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাঁদের সকলের কবরও জান্নাতুলবাকীতে বিদ্যমান।
লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।