দৈনিক ফেনীর সময়

সোনাগাজীতে এসএসসির ৬৩ পরীক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার

সোনাগাজীতে এসএসসির ৬৩ পরীক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার

আমজাদ হোসাইন, সোনাগাজী :

সোনাগাজী উপজেলায় চলমান এসএসসি পরীক্ষায় ৩ হাজার ২০৫ জন এবং দাখিল পরীক্ষায় ৮৯৩জন শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার থেকে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা শুরু হলেও প্রথমদিনের পরীক্ষায় ৮১জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এর মধ্যে ৬৩জন ছাত্রী ও ১৮জন ছাত্র রয়েছে। করোনাকালসহ বিভিন্ন সময়ে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থী ৬৩জন ছাত্রী সবার বাল্যবিবাহ হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া ছাত্রীদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী ৪১জন ছাত্রী ও দাখিল পরীক্ষার্থী ২২জন ছাত্রী রয়েছে। অনুপস্থিত ১৮ ছাত্রের মধ্যে অনেকেই বিদেশসহ পরিবারে প্রয়োজনে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়ে কাজ করছে।

করোনাকালের মত এবারও নানা অজুহাতে বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীদের বাল্যবিবাহ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বাল্যবিয়ে দেওয়া অধিকাংশ পরিবারের দাবি, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা, স্কুল-মাদরাসা যেতে অনিহার কারনে তারা কিশোরী মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণেও অনেক বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে দেখেছে, যেসব ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, তাদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। শুধু এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থী নয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ-দশম শ্রেণি পর্যন্ত অনেকের বিবাহ হয়ে গেছে বলে শিক্ষকরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এসব ছাত্রীর বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছর। বেশিরভাগ শিক্ষকের অভিমত, বাল্যবিবাহের প্রকৃত সংখ্যা তাদের কাছে থাকা তথ্যের চেয়ে আরও বেশি হতে পারে। অনুসন্ধানে উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থী ৬৩ জন ছাত্রীর বাল্যবিবাহের ঘটনা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাল্যবিয়ের শিকার একাধিক ছাত্রীর অভিভাবকরা বলেন, পরিবারের আয় কমে যাওয়াসহ দারিদ্রতা ও বিভিন্ন কারনে এবং হঠাৎ করে ভালো পাত্র পাওয়ায় মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। তবে বিয়ের পর তারা পড়ানোর চেষ্টা করলেও স্বামীর পরিবার রাজি না হওয়ায় মেয়েদের শিক্ষাজীবন এখানেই শেষ হয়ে গেছে।

সোনাগাজী বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আবদুল মান্নান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন কার্যক্রম চলার সময় থেকেই পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়েছে, মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে, তারা আর পড়বে না। এখনো নতুন নতুন বাল্যবিবাহের ঘটনা জানতে পারছি। আসলে এসব বিয়ে খুব গোপনে হয়েছে। বেশিরভাগ বিয়ে অন্য এলাকায় নিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাল্যবিবাহ হওয়া মেয়েদের কেউ কেউ এখনো পড়াশোনার মধ্যে আছে। ওই ধরনের শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, গত বছর তার স্কুলের প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্রী বাল্যবিয়ে শিকার হয়েছিল। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ৮৩জন। তারা পরীক্ষায়ও অংশ নেয়নি। তবে এবার তাদের কঠোর তদারকির কারণে অনেক মেয়ের গোপনে বিয়ে হয়ে গেলেও ১৮৩জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নুরুল আমিন বলেন, এবার এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার ২৪টি বিদ্যালয় থেকে ৩ হাজার ২০৫জন এবং ১৯টি মাদরাসা থেকে ৮৯৩জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছে। কিন্তু পরীক্ষায় ৮১জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। এর মধ্যে ৬৩জন ছাত্রী এবং ১৮জন ছাত্র রয়েছে।

তিনি বলেন, পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে জানতে চেয়েছেন। তারা জানিয়েছেন অনুপস্থিত ছাত্রীদের বেশির ভাগ বিয়ে হয়ে গেছে। ছাত্ররা বিদেশসহ দেশের বিভিন্নস্থানে কাজ কওে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মনজুরুল হক বলেন, ‘আমি যোগদানের পর থেকে উপজেলায় বেশ কয়েকটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করেছি। অভিনব পন্থায় বাল্যবিবাহ হচ্ছে, এটা ঠিক। এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকা ছাত্রীদের সম্পর্কে শিক্ষকরা জানিয়েছে বেশিরভাগের বিয়ে হয়ে গেছে। তবে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থী ছাড়া অন্য শ্রেণির ছাত্রীরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!