নাজমুল হক
অশ্লীলতা বেহায়াপনা এবং দেহব্যবসা কোন নারীর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে না। ১৮০৩ নারীরস্তন ঢেকে রাখার অধিকার আদায়ের জন্য উত্তর ভারতে হিন্দু নারী নাংগেলি স্তন কেটে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে নারী ও শিশু নীতিমালা আছে, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইন আছে। নারী ও শিশু সহায়তা ৯৯৯, ১০৪, ১০৭ এবং ১০৯৮ ব্যবহার করে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার ঘাটতি দূর করতে পারে। ছাত্রীদের একটি গ্রুপ দেহব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে একতাবদ্ধ হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে ইডেন কলেজের বেহাল অবস্থা জাতির সামনে তুলে ধরেছে সাহসী ছাত্রীরা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পুলিশ কমিশনার আছে, শিক্ষা মন্ত্রী আছে, কলেজ অধ্যক্ষ আছে, শিক্ষক সমিতি আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইসচ্যান্সেলর আছে, ওয়াড কমিশনার আছে, পুলিশ প্রশাসন এর। থানা আছে। ছাত্রলীগ আছে, ছাত্রদল আছে, ছাত্র ফ্রন্ট আছে, ছাত্র ইউনিয়ন আছে, ছাত্রী সংস্থা আছে। কিন্তু কেউই জাতির সামনে প্রেসনোট পাঠায়নি। অবাক করার বিষয় কোন ছাত্রী ৯৯৯ ফোন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর সহায়তা গ্রহণ করে নাই। মনেহয় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে কোন তথ্য স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুরক্ষা বিভাগে যায়নি। অবাধ তথ্য প্রবাহের শতাব্দীতে কোন নারী সাংবাদিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন এগিয়ে আসেনি। বেসরকারি টিভি চ্যানেল ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য সংবাদ সংগ্রহ করে নাই। কোন আইনজীবী ফেডারেশন হাইকোর্ট বিভাগে রীট আবেদন করে নাই।
সিনিয়র সিটিজেন, বুদ্ধিজীবি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, আইনজীবী ফেডারেশন সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, সরকারী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের লিডার কেউই মুখ খুলছেনা। অথচ পোশাকের স্বাধীনতা ও শালীনতা নিয়ে প্লেকার্ড পোষ্টার, অধ্যাপক ও বুদ্ধিজীবী কলামিষ্ট সোচ্ছার ছিল। ইডেন মহিলা কলেজ সিলেট এম সি কলেজ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কি অপরাধীদের অভয়ারন্য। দেহ ব্যবসায়ী, ধর্ষক ও লাগেজ চুরির কোন তদন্ত ও শাস্তি নেই। প্রেসনোট নেই। ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যথতার জন্য অধ্যক্ষ ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদত্যাগ করতে পারতো। শিক্ষামন্ত্রী, সাংসদ সদস্য অধ্যক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের মেয়ে যদি যৌন নিপীড়ন এর শিকার হতো তাহলে নিশ্চয়ই আইন শৃংখলা বাহিনী একটিভ হতো।
কি বিচিত্র দৃশ্যের বাংলাদেশ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা জসিম উদ্দিন ১০০ ছাত্রী ধর্ষন করে সেঞ্চুরি উৎসব পালন করতে। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর জসিম উদ্দিনের সাটিফিকেট বাতিল করে নাই, আইন শৃংখলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে নাই। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এম সি কলেজের ধর্ষকদের বিচার হয়নি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষকদের বিচার হয়নি। ইডেন কলেজে ছাত্রীদের অপকর্মের কোন প্রতিকার, তদন্ত করে দোষী ছাত্রীদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়নি। এটা কেমন ছাত্র রাজনীতি। এটা কেমন নির্লজ্জ কলেজ প্রশাসন। দেশটা মাফিয়াদের দখলে চলে গেছে কি? ইডেন মহিলা কলেজের ৩৫,০০০ ছাত্রীর নিরাপত্তার জন্য ৯৯৯ একটিভ করা। পুলিশ সদস্য ও আনসার মোতায়েন করে জাতীয় শিক্ষিত জনশক্তি তৈরির কারখানা ইডেন মহিলা কলেজ রক্ষা করতে হবে। ইডেন কলেজ থেকে বুয়েটের মতো ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। অবিলম্ভে অধ্যক্ষ ও হলের প্রভোস্টের পদত্যাগ করতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলায় কোন আদর্শ ও চেতনার ছাত্র সংগঠন মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, দেহ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, ধর্ষক ও চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী।
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেহব্যবসা নিয়ে অভিভাবকদের ফেসবুকের কড়চা :
১) স্যার আসলি ইডেন (১৮৩১-১৮৮৭) বাংলার সাবেক লেঃ গভর্নর মহোদয় বিশ্বকন্যা দিবসে আপনার প্রতিষ্ঠিত ইডেন কলেজের কন্যাদের হাল হকিকতটা একটু যদি দেখে যেতেন। যে কলেজের শিক্ষক ছাত্রী সবার একটা এরিস্টোক্র্যাসি ছিলো তারা আজ সে কলেজের নামে পরিচয় দিতে লজ্জিত ও কুন্ঠাবোধ করে। বিশ্ব কন্যা দিবসে নব্য দাসত্বের শিকার, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার, খবিশ সর্দারনীদের হাত থেকে সাধারণ ছাত্রীদের উদ্ধার করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে দিয়ে যান। এদেশে বাস করে এসব আর শুনতে ভালো লাগেনা।
২) আমি যখন একটা কাজে চট্টগ্রামে, ঠিক তখনই ইডেন কলেজের সংবাদটা প্রথম দেখি একজনের পোষ্টে। আতকে উঠি, উঠার কারনও ছিল। চট্টগ্রাম আসার আগেই একটা এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানে ছিলাম, পাত্রী ইডেনের ছাত্রী। পাত্রীর বাবা উত্তরাতেই থাকেন। জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয়। ভদ্রলোক সরকারি একটা ছোটখাট চাকরি করতেন। অবসরের পর উত্তরায় চলে আসেন। আগে থাকতেন আজিমপুরে, ইডেন কলেজের পাশেই সরকারি কোয়ার্টারে, মেয়ের কলেজ কাছে হওয়ায়। একমাত্র মেয়ে ইডেন কলেজ থেকে ইংলিশে অনার্স করেছে গতবছর। তার এনগেজমেন্ট হয়েছিল প্রবাসি এক পাত্রের সাথে গত সপ্তাহে। বিয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারতে দুই পক্ষের মধ্যে কথা বার্তা চলতেছিল।
এরই মধ্যে সামনে চলে আসে এডেন কলেজের ঘটনাটি। পাত্র এবং তার পরিবারের চোখেও পড়ে ঘটনাটি। পাত্রের আপত্তি না থাকলেও পরিবারের প্রবল চাপে সে বাধ্য হয় বিয়েটা ভেঙে দিতে। অথচ মেয়েটি হলেও থাকত না, বাসায় থাকত। পাত্রীর বাবা গোপনে ছেলের বাসায় গিয়ে তার বাবামার হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করেছে বিয়েটা না ভাঙ্গার, কোন ফল হয়নি। গতকাল বাসায় ঢুকেই দু:সংবাদটা শুনলাম। বিকালে ভদ্রলোকের সাথে দেখা হলো, ওনার একটা ফার্মেসী আছে সেখানে। উনি লজ্জায় তাকাতে পারছিলেন না। শুধু বললেন, আল্লায় যা করে ভালোর জন্যই করেন, মেয়েটাকে আরও কিছুদিন দেখতে পাব। এই বলেই হু হু করে কেঁদে দিলেন।
এই সমাজে কোন কারনে একবার কোন মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেলে সে মেয়ের বিয়ে দেওয়া কতটা কষ্টকর। ইডেন কলেজে যা ঘটেছে, যা বেরিয়ে আসছে, গত পঞ্চাশ বছরে নারী অবমাননার এত বড় ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। শুধু বর্তমান ছাত্রীই নয়, অতীতের ছাত্রীরাও এর জন্য ভুগবে। অথচ কারো মধ্যে কোন বিকার নাই। কি অদ্ভুত সমাজে বসবাস আমাদের। (ওয়াকিল রহমান)।
৩) ইডেনে ছাত্রী সুমাইয়া তাসনীমের নীচের অভিমতঃ ইডেনে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। আমরাও আইডিকার্ড না নিয়ে গেলে ঢুকতে পারতাম না। সুতরাং সাধারণ মানুষের ইডেন সম্পর্কে কিছুটা জল্পনা কল্পনা থাকা অস্বাভাবিক না। কিন্তু বিবেক-বুদ্ধিওয়ালা মানুষ হয়েও আপনারা যদি এগুলো সাধারণ ছাত্রীদের ক্ষেত্রে বিশ্বাস করেন তাহলে খুবই দুঃখজনক। আমি অনার্স মাস্টার্স করেছি ইডেন থেকে। আপনার কি মনে হয় আমরা সার্টিফিকেটের জন্যে কারো বিছানায় গিয়েছি? বিভিন্ন ভাষায় ঘুরিয়ে পেচিয়ে আপনারা তো তাই বলছেন। এতে করে কত স্ট্রাগল করে পড়ার সুযোগ পাওয়া মেয়েদের আবার পড়ার সুযোগ হারাতে হবে ভেবেছেন? কত মেয়ের বিয়ে হয়েছে যাদের শ্বশুর বাড়িতে এ নিয়ে তীর্যক কথা শুনতে হবে, চারিত্রিক অপবাদ পেতে হবে, ভেবেছেন? কত মেয়ের টিউশনি চলে যেতে পারে, ভেবেছেন? স্রেফ ইডেনের আইডিকার্ড গলায় থাকলে কত মেয়েকে রাস্তাঘাটে বাসে বেশ্যা শব্দটা শুনতে হবে, জানেন?
একটা দেড়শো বছরের পুরানো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাংলায় মেয়েদের প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেটায় রানিং স্টুডেন্ট থাকে প্রায় ৩৫,০০০ তাদের মধ্যে কয়টা মেয়ে পলিটিক্সে ইনভলভ হয়? আমাদের ক্লাসে দেড়শোজনে একজনও ছিল না। খুব অল্প কিছু স্টুডেন্ট ছাত্রফ্রন্ট আর ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। সেকেন্ড ইয়ারের দিকে ছাত্রফ্রন্ট আমার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল, পোলাইটলি রিফিউজ করেছি, আর জোরাজুরিও করেনাই। কোনো র্যাগিং কখনো পাইনাই, করিও নাই৷ যথেষ্ট হেল্পফুল টিচার আর ল্যাব এ্যাসিস্ট্যান্ট আপু ও সেমিনার আপু ছাড়াও ডিপার্টমেন্টের মামা-খালাদেরও ভালো ব্যবহার পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। আমার ডিপার্টমেন্টের হেড খুবই কাঠখোট্টা মানুষ হিসাবে পরিচিত। আসার পর থেকে ডিপার্টমেন্টকে উন্নত করার জন্য কাজ করতেই ব্যস্ত থাকেন। টিচারদেরকে সাথে স্টুডেন্টদেরও খাটিয়ে মারেন। ক্যাম্পাসে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও খুব ভালো। আমার বিশ্বাস অন্যান্য সাধারণ ছাত্রীদেরও তাই। ছাত্রলীগ একটা দল। যার চরিত্র সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। আর সেটা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই। তবে জোর করে মিছিলে, প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া, পা টেপানো, বø্যাকমেইল করে ছবি তুলে রাখা এগুলো আমরাও কিছু কিছু শুনেছি। সেটাও যারা পলিটিক্যাল সিটে উঠে তাদের সাথে। হলের সাধারণ ছাত্রীদের সাথে না। আর যারা হলে থাকেনা তাদের সাথে কখনো র্যাগের ঘটনাও ঘটেনা। ইডেন হয়তো খুব উচ্চমানের পড়াশোনার রিসোর্সের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনা কিংবা রিসার্চার তৈরি করার ক্ষেত্রে ক্যাপেবল না, কিন্তু ইডেন খুবই সেইফ এবং পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ প্রোভাইড করে। বিশেষ করে ইডেনের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই প্রশান্তিদায়ক। কমন গ্রন্থাগার ছাড়াও প্রত্যেকটা হলে একাধিক রিডিং রুম আছে যেগুলো কখনো কেউ খালি দেখেনাই। সারাক্ষণ মেয়েরা পড়ছে।
আমি তাইকোয়ান্ডো শিখেছি ইডেনের তাইকোয়ান্ডো ক্লাবে। আমার ফ্রেন্ডরা গান শিখেছে, ক্লাবিং সহ বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার কাজে ইনভলভ থেকেছে। এই দীর্ঘ সময়ে পলিটিক্যাল এসব ইস্যু কখনো লাউডলি কানেও আসেনাই।
ছাত্রলীগের কামড়াকামড়ি যে আজকে ইডেনের ৩৫ হাজারের বেশি রানিং স্টুডেন্টকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে এটার ক্ষেত্রে সচেতন মানুষদের ফ্যাক্ট চেক করে কথা বলা খুব দরকার। ইনফ্যাক্ট ইডেন এতটাই বড় একটা প্রতিষ্ঠান যে খুঁজলে সবার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেই কেউ কেউ অবশ্যই থাকবে যে ইডেনে পড়েছে। নিজেরা ফেসবুকে গুজব না ছড়িয়ে তাদের জিজ্ঞেস করা যেতে পারে তারা এরকম কিছু ফেস করেছেন কিনা।
খুব কষ্ট করে বহু দূর-দূরান্ত থেকে মেয়েরা এখানে পড়তে আসে এবং খুব কষ্ট করে দুইবেলা খেয়ে না খেয়ে পড়ে এমন প্রচুর েেময়ে আছে। খুব পড়ার ইচ্ছা এদের অধিকাংশেরই। অনেকের পরিবারে সেই প্রথম মেয়ে যে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এমনও আছে ঢাবিতে চান্স পেয়েছে কিন্তু কো-এডুকেশন বলে পরিবার এলাউ করেনি তাই ইডেনে ভর্তি হয়েছে।
এখানে সবরকম মেয়ে পাবেন। এর মধ্যে নিজেরা শ্রম দিয়ে নিজের আর নিজের পরিবারের জন্য কিছু করতে চায়, জীবনের কোনো পর্যায়ে কারো বোঝা হতে চায়না এমনই সবচেয়ে বেশি পাবেন। এই মেয়েদেরকে সম্মান করতে না পারেন, অসম্মান করিয়েন না। গুজব ছড়িয়েন না। চরিত্রের উপর এই ধরনের অসত্য অপবাদের দাগ সহ্য করা যেকোনো ভদ্র ঘরের মেয়ের জন্য খুব কঠিন। ফেসবুক ফেইজ থেকে পাওয়া।
৪) নরসিংদী রেলস্টেশনের সেই ঘটনার কথা মনে আছে, যেখানে কয়েকজন মেয়ের অশালীন পোশাক পড়াতে এর প্রতিবাদ করায় এক বয়স্ক মহিলাকে জেলে যেতে হয়েছিল। প্রতিবাদকারী সেই মহিলার শাস্তির দাবিতে সারাদেশের নারীবাদীরা সেদিন রাস্তায়, ফেসবুকে, মিডিয়ায় ঝড় তুলেছিল। পোশাকের স্বাধীনতার কথা বলে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রী অর্ধ উলঙ্গ হয়ে টিএসসিতে জড়ো হয়েছিল, সারাদেশের মানুষ যখন ধিক্কার জানাচ্ছিল।
টিপ কান্ডের কথা মনে আছে তো? এরকম শত শত উদাহরণ দেয়া যায়। তাইলে প্রশ্ন আসতেই পারে, ইডেন কলেজের (সঠিক উচ্চারণ এডেন) মত এত বড় ঘটনায় এরা মুখে কুলুপ এটেছে কেন? ইডেনের ঘটনা স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় নারী নিগ্রহের ঘটনা। যেখানে অগনিত ছাত্রীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছে, বাধ্য করেছে নেতাদের সাথে শুইতে। এই অভিযোগগুলো বাইরের কেও করেনি, করেছে সেই কলেজেরই শিক্ষার্থীরা, আরও খোলাসা করে বললে ছাত্রলীগের একাংশের শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে নারী নেত্রীদের/ নারীবাদীদের এহেন মৌনতার কারন কি?
কারন আমাদের দেশের নারীবাদীরা মোটেও নারীর কল্যানের জন্য চিন্তা করেনা। এদের আন্দোলন স্বার্থের বেড়াজালে আবদ্ধ। এদের মুল টার্গেট মুলত ইসলাম। আরেকটা কারন এ দেশের নারীবাদী আর তাদের দোসরদের বড় একটা অংশই সরকারি দলের সমর্থক। ইডেন ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের সরকারি দলের ট্যাগ থাকায় এরা এখানে নীরব।
একবার ভাবুনতো এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ইডেন কলেজে না ঘটে যদি এর কিয়দংশও কোন মহিলা মাদরাসায় ঘটত তখন এরা কি করত। শুধু মহিলা মাদরাসা না, এরা সমস্ত মাদরাসা বন্ধ করার জন্য এতক্ষনে রাস্তায় নেমে আসত।
ইডেন কলেজের প্রতিটি ছাত্রী আমাদের বোন মেয়ে ভাগিনী ভাতিজি। যারা ভবিষ্যতে হবে দেশের শিক্ষিত জনশক্তি প্রশাসক ম্যাজিস্ট্রেট শিক্ষক আইনের রক্ষক। নারী উদ্যোক্তা সাংবাদিক ব্যাংকার আইনজীবি এবং ছেলে মেয়ের মা, খালা, ফুফু, চাচী ইত্যাদি। নীতি-নৈতিকতাহীন লেজুড়বৃত্তিক সন্ত্রাসী ছাত্র রাজনীতি ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের মান সন্মান শেষ করে দিয়েছে। নারী জাতির অধিকার আদায়ের জন্য বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামাল, নবাব ফয়েজুন্নেসা সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু সরকারী ছাত্র সংগঠন শিক্ষিত ছাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে দেহ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এর সদস্য বানিয়েছে। এ লজ্জা জাতির। এ লজ্জা আদর্শহীন দেউলিয়া ছাত্র রাজনীতির। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কঠোরভাবে ইডেন ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী ছাত্রীদের এবং ছাত্রীর ইজ্জত হরনকারী রাজনৈতিক নেতা ও সাংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে হবে।
লেখক : গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।