আরিফ আজম :
আদালতে মামলাজট কমানো এবং এজলাস সংকট দূর করতে সারাদেশের মতো ফেনীতেও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। সেটি কবে নাগাদ হবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। এতে করে ম্যাজিষ্ট্রেটগণের পাশাপাশি আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী দেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগ পৃথক হয় ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর। এরপর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ভবন নির্মাণের জন্য ২০১২ সালে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন সংলগ্ন স্থানে পৌনে ২ একর জায়গা অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৬ সালের জুন মাসে অধিগ্রহণ বাবদ টাকা জমির মালিকদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর ২ লাখ ২৮ হাজার বর্গফুটের ১৩ তলা বিশিষ্ট চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ভবন নির্মাণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে ৮৭ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়।
ফেনীস্থ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন ফেনীর সময় কে জানান, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনা পূর্ত সার্কেলে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি ডিপিপি প্রণয়ন পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে ভবনটি দীর্ঘদিনেও নির্মাণ না হওয়ায় এজলাস সংকটে মামলার কার্যক্রম চালাতে ম্যাজিষ্ট্রেটগণ হিমশিম খেতে হচ্ছে। জুডিসিয়াল বিভাগে ৯ জন বিচারক রয়েছেন। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের এজলাস ছাড়া বাকি ৭টিতে অপর ম্যাজিষ্ট্রেটগণ বেঞ্চ সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে বিচার কাজ পরিচালনা করেন। একজন বিচারক কার্যক্রম শেষ করা পর্যন্ত আরেকজন অপেক্ষমান থাকতে হয়।
সিনিয়র আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু ফেনীর সময় কে জানান, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ভবন না থাকায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীগণ এক ভবন থেকে অন্য ভবনে ছোটাছুটি করতে হয়। বিশেষ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তিনজন জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের এজলাস থাকায় আদালত ভবন থেকে সেখানে দৌঁড়ে যেতে হয়। নতুন ভবন হওয়ার আগ পর্যন্ত জেলা ও দায়রা জজ ভবনের পশ্চিম পাশের ভবনটি তৃতীয় তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করলে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি কিছুটা কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নুর ইসলাম জানান, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ খুবই প্রয়োজন। তাহলে একদিকে যেমন আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে মামলাও দ্রæত নিষ্পত্তি হবে। তবে হবে-হচ্ছে বলে প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে।
পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহম্মদ ফেনীর সময় কে জানান, ভবনের জন্য নির্ধারিত জায়গা অধিগ্রহণ হয়েছে। এজলাস সংকটের কারণে বিচারপ্রার্থী মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনা করতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। সকালের মামলা অনেক ক্ষেত্রে আদালতে উপস্থাপন হতে বিকাল পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনীর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ আতাউল হক ফেনীর সময় কে বলেন, দেশের বেশ কিছু জেলায় প্রথম পর্যায়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ভবন নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু ফেনীর ভবনটি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগামী অর্থ বছরে হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এজলাস সংকটের ফলে দুই-তিনজন এমনকি কখনো কখনো চারজন ম্যাজিষ্ট্রেটও একই এজলাসে বিচার কাজ পরিচালনা করতে হয়। একই কক্ষে একাধিক ম্যাজিষ্ট্রেট থাকায় কাজের মনোযোগ ও শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।